২৪শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | রাত ৯:৪৯
মুন্সিগঞ্জে আসামি ধরছে না পুলিশ, মামলা করে উল্টো বিপাকে বাদী-স্বজনরা
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ৩০ জুলাই ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার আল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীর উপর হামলা করে হাত ভেঙে দেয় প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় ১৮ জুলাই সিরাজদিখান থানায় ১৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন আল ইসলামের ভাই মো. আলমগীর হোসেন।

এ মামলার কোন আসামিকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো হুমকি-ধমকিতে বিপাকে আছেন মামলার বাদী। পাশাপাশি মামলার অন্যতম আসামি শাহজাহানের বিরুদ্ধে এলাকায় অস্ত্র নিয়ে মহড়ার অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয়দের। যে কোন সময় দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কায় আতঙ্কে রয়েছেন তারা।

মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ী আল ইসলামের সাথে একই এলাকার শাহজাহানের আবাসন ব্যবসা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। তারা দুজন নবধারা রিয়েল এষ্টেট নামের একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের অংশীদার। এই আবাসন প্রতিষ্ঠানে ১০ জন অংশীদার। এই ১০ জনের মধ্য থেকে শাহজাহানকে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

শাহ জাহানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ওই আবাসন প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎয়ের অভিযোগ উঠে। ওই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আল ইসলাম বিষয়টি উর্ধ্বতনদের জানান।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ১৪ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে চরখাসকান্দি এলাকায় লোকজন নিয়ে হামলা করে শাহজাহান ও তার লোকজন লোকজন। আল ইসলামকে পিটিয়ে তার বাঁ হাত ভেঙে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় তার ব্যবহৃত নিশান পাজেরো গাড়ি। পরে এ ঘটনায় থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন আহত ব্যবসায়ীর ছোট ভাই মো. আলমগীর হোসেন৷

মামলার বিষয়ে বাদী আলমগীর বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না। গেল ২২ জুলাই রাত সাড়ে ৩ টার দিকে মামলার ১৯ আসামির সকলেই চরেরগাও এলাকায় শাহজাহানের বাড়িতে অবস্থান করছে এমন খবর পেয়ে থানার ওসি ফোর্সসহ আমাকে নিয়ে তাদের গ্রেপ্তারে ওই বাড়িতে যান। বাড়ির সামনে গিয়ে হ্যান্ডমাইকে গেট খোলার জন্য ওসি বাড়িটির মালিক ও মামলার অন্যতম আসামি শাহজাহানকে আহবান জানান। কিন্তু তারা গেট খোলেনি। এসময় ওসির মোবাইলে হঠাৎ একটি কল আসে। পরে আমাকে ওই বাড়ির সামনে রেখেই কোন আসামি না ধরে ওসি ফোর্স নিয়ে ফেরৎ যান। তিনি চলে যাওয়ার পর আসামিরা লোকজন নিয়ে আমাকে উল্টো ধাওয়া করে। আমি দৌড়ে কোনমতে প্রাণ নিয়ে বেঁচে ফিরে আসি।’

আলমগীর হোসেন বলেন,‘বর্তমানে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।’

স্থানীয় সাইফুল্লাহ সরকার বলেন, ‘আবাসন ব্যবসার দেনাপাওনা নিয়ে শাহজাহান-আল ইসলাম পক্ষের মধ্যে সম্প্রতি বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনার মধ্যেই আল ইসলামের উপর হামলার ঘটনা ঘটায় শাহজাহান। পরে আমরা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মিলে মীমাংসার চেষ্টা করি। কিন্তু শাহজাহান উল্টো আমাদেরকে অস্ত্র ও লোকজন নিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। যে কোন সময় এলাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে। অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়ায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে।’

ব্যবসায়ী আল ইসলামের আত্মীয় ইতি বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে আবরার ইসলাম ইফাত (৪) স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে পড়ে। শাহাজাহানের লোকজনের ভয়ে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ রয়েছে। আমাদের বাড়ির সামনে লোকজন নিয়ে অস্ত্র উচিয়ে মহড়া দিয়ে গেছে। শুনেছি তার কাছে লাইসেন্স করা অস্ত্র আছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ তার এসব অস্ত্রের লাইসেন্স যাতে বাতিল করা হয়।’

অস্ত্র নিয়ে মহড়া ও মামলার বাদীকে হুমকির বিষয়ে মো. শাহজাহান বলেন, ‘বাদীপক্ষ সম্পর্কে আমার আত্মীয় হয়। তাদের সাথে আমার সম্পর্ক একসময় ভালো ছিলো। তারা তৃতীয় পক্ষের প্ররোচনায় আমাকে এ ঘটনায় জড়িয়েছে। আমার দুইটি বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে তবে এসব নিয়ে মহড়া দেয়ার দাবি মিথ্যা।’

এসব বিষয়ে সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আসামি ও বাদী কারও মন মত না হলেই তাদের মন খারাপ হয়। আমরা আসামিদের ধরার জন্য অভিযান চালাচ্ছি। যেহেতু শাহজাহানের অস্ত্রগুলো বৈধ এ ব্যপারে জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা নিবেন।’

error: দুঃখিত!