আড়িয়াল বিলের মাটি হরিলুট করা হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় দেড় শতাধিক বাল্কহেড করে বিলের মাটি হরিলুট করছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট মহল।
মহলটি দিনে রাতে সমান তালে বিলের মাটি লুট করছে। আড়িয়াল বিলের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় সহস্রাধিক বিশাল বড় বড় মাটির স্তুপ রয়েছে। হঠাৎ দেখে মনে হবে বিলের পানিতে যেন অসংখ্য পাহাড় বা দ্বীপ রয়েছে।
শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালী মৌজায় মিলন, তাসু, জামাই ফয়সাল, আলমপুরে অহিদুল, কাঁঠালবাড়িতে হারুন শেখ, মোমেদ মাদবর, রুদ্রপাড়ায় মরন, কালা, হানিফা খান, শেখ সবুজ, ছত্রভোগ আবু কালাম, জুয়েল গংরা এলাকায় মাটিখোর ও জলদুস্যু হিসেবে পরিচিত।
এই চিহ্নিত সিন্ডিকেটের সাথে এলাকার একটি অদৃশ্য মহল জড়িত রয়েছে। তাদের সামান্য কিনা মাটির সাথে সরকারি ও মালিকানা জায়গার মাটি না বলে ইচ্ছামতো কেটে নিজেদের মাটির স্তুপে এনে অন্যত্র বিক্রি করে থাকে। এদের অনেকের বিরুদ্ধে বিলের মালিকানা ডাঙ্গা পুকুরের মাছ লুট করার অভিযোগও রয়েছে।
মহলটির ভয়ে প্রতিবাদতো দুরের কথা, কেউ মুখ খুলতেও সাহস পায় না।
দুই এক জন মুখ খোললেও পুলিশ ও মামলার ভয় দেখিয়ে হুমকি দেয়। দৈনিক আড়িয়াল বিলের মাটি লুট করে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার বাণিজ্য করছে মহলটি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এখন বর্ষার মৌসুম বিলে পানি থৈথৈ করছে। দুই চোখে শুধু বিলের মধ্যে পাহাড়সম মাটির স্তুপ। ওই স্তুপের কাছে বাল্কহেড রেখে শ্রমিকরা মাটি কেটে লোড করছে। প্রত্যেকটি বাল্কহেডে প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন করে শ্রমিক রয়েছে। ৮-১০ হাজার বর্গ ফুট মাটি ধারন ক্ষমতা রয়েছে বাল্কহেড শ্রমিক সাইফুল ও শান্ত জানান।
বাল্কহেডের মাঝি জয়নাল মাদবর বলেন, আমরা প্রতি বাল্কহেড ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে কিনি। প্রতি ফুট মাটি ১০ টাকায় বিক্রি করি। তবে মালিক পক্ষকে ১৫ হাজার টাকা দেয়ার কথা থাকলেও তারা পান আট হাজার টাকা। বাল্কহেড সিন্ডিকেটের অধিনে চলে এদের কে দিতে হয় এক হাজার টাকা প্রতি টিপে। অমর মাঝি জানান, বাল্কহেড চলাচলে বিভিন্ন স্থানে তাদের কয়েক ধাপে টাকা দিতে হয়। কোথায় কাকে কত করে টাকা দিতে হয় রহস্যজনক কারণে তিনি তা প্রকাশ করেননি!
এ সময় স্থানীয়রা জানান, শুষ্ক মৌসুমে বিলের মাটি ভেকু দিয়ে কেটে স্থপ করে রাখে মাটি খোররা। বর্ষার মৌসুমে ওই মাটি ফতুল্লা, বকতাবলী, ধর্মগঞ্জ, জাজিরাসহ ঢাকার বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রি করে সিন্ডিকেট মহলটি। আড়িয়াল বিলের মাটির মান ভালো হওয়ায় চাহিদা রয়েছে সর্বত্র। বড় বড় বাল্কহেড বোঝাই দিন রাত সমান তালে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। সিন্ডিকেট মহলটিকে বিলবাসী এতোই ভয় পান যে, তারা মাটি খোর কারও নাম প্রকাশ করতে চাননি! তবে তারা বিলের মাটি লুটের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষন করেন।
কাউসার আহম্মেদ রনি জানান, আমাদের বাপ-দাদার অনেক জমি রয়েছে আড়িয়াল বিলে। এক লোক আমাদের জমির পাশের জমির আংশিক মাটি কিনে। কয়েকদিন পরে না জানিয়ে রাতের আঁধারে আমাদের জমির মাটি কেটে নিয়ে গেছে। কিছু বললে মামলা ও পুলিশের ভয় দেখায়। এ বিষয়ে অনেকেই ভয়ে মুখ খোলতে রাজি হননি। তবে বিলের মাটি হরি লুটের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষন করেন ভুক্তভোগীরা।
শ্রীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিগার সুলতানার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিচ্ছি।