চলতি বছর দেশের বিভিন্ন এলাকায় কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৭৬ জন নিহত হয়েছে। গত ৫ জুন চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যার পর থেকে মারা গেছে ১৭ জন। তবে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে মাদারীপুর ও রাজধানীর খিলগাঁওয়ে সন্দেহভাজন দুই গুরুত্বপূর্ণ ‘জঙ্গি’ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনায় মানবাধিকারকর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা নানা প্রশ্ন তুলেছেন। উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপকে তারা দায়সারা বলে অভিহিত করছেন। উদ্বেগ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিচ্ছে মানবাধিকার কমিশন। ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে যে ধরনের বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, তা অনেকের কাছে সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বাসযোগ্য ও কাঙ্ক্ষিত বলে মনে হচ্ছে না। তবু এই ‘বন্দুকযুদ্ধ’কে উগ্রপন্থি দমনের ‘শেষ ওষুধ’ মনে করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দৈনিক সমকালে প্রকাশিত সাহাদাত হোসেন পরশের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত তথ্য।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, বিএনপির নেতৃত্বাধীন তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের শেষ তিন বছরে কথিত ক্রসফায়ারে ৭৪৬ জন সন্দেহভাজন অপরাধী নিহত হয়। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু’বছরে ক্রসফায়ারে নিহত হয় ২৫৬ জন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর চার বছরে ‘ক্রসফায়ারে’ ৩৩৮ সন্দেহভাজন নিহত হয়।
আসকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ৪২ জন। ২০১৪ সালে ১২৮ ও ২০১৫ সালে ১৪৬ জন কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। আর চলতি বছর এ পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৭৬ জন। তাদের মধ্যে ১১ জনের গ্রেফতারে পর পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে।
মাদারীপুরে কলেজশিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে কুপিয়ে পালানোর সময় জনতার হাতে ধরা পড়ে ফাহিম। পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার পর প্রথম দিন সকালেই কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় সে। এর ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই গত শনিবার ঢাকার খিলগাঁওয়ে গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় ‘শরিফুল’। পরে জানা যায়, তার প্রকৃত নাম মুকুল রানা। পুলিশ জানায়, বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎসহ অন্তত সাত লেখক-প্রকাশক হত্যা ও পরিকল্পনার সঙ্গে মুকুল জড়িত। সন্দেহভাজন দুই উগ্রপন্থি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন।