প্রাচীনকাল তথা খ্রিস্টীয় দশ শতকের শুরু থেকে তেরো শতকের প্রথম পর্যন্ত চন্দ্র, বর্মন ও সেন রাজাদের রাজধানী ছিল মুন্সিগঞ্জ জেলা।
সেই সুবাদে এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল নানা ঐতিহাসিক স্থাপনা।
জগদীশ চন্দ্র বসুর জন্মস্থান, অতীশ দীপঙ্করের জন্মস্থান, রাজা শ্রীনাথের বাড়ি, রামপালে বাবা আদমের মসজিদ, হাসারার দরগা, সোনারং জোড়া মন্দির, পদ্মার চর, ইদ্রাকপুর কেল্লা, রাজা বল্লাল সেন ও হরিশচন্দ্রের দীঘি, শ্যামসিদ্ধির মঠ, শুলপুরের গির্জা, মেঘনা ভিলেজ ইত্যাদি সহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র মুন্সিগঞ্জ জেলাকে করেছে আরো আকর্ষনীয়।
মুন্সিগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে একটি গাইড দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনের সকল তথ্যই সংগৃহীত। সেক্ষেত্রে কোন কোন জায়গায় ভূল থাকাটাই স্বাভাবিক। যদি কেউ ভূল সংশোধনের জন্য ‘আমার বিক্রমপুর’ এর কাছে অনুরোধ পাঠাতে চান তাহলে bikrampuramar@gmail.com ইমেইলটি ব্যবহার করুন।
মেঘনা ভিলেজ হলিডে রিসোর্টঃ
ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়নগঞ্জ পার হওয়ার পর এক কিলোমিটারের মধ্যে রাস্তার ডান পাশে (ঢাকা থেকে গেলে) ৩০ বিঘা জমির উপর ফুল ফল বৃক্ষশোভিত এক অন্যন্য বিনোদন কেন্দ্র মেঘনা ভিলেজ হলিডে রিসোর্ট। মেঘনা ব্রিজ পার হওয়ার পরই দেখা পাবেন রাস্তার পাশে। প্রথমে দেখতে পাবেন কয়েকটি হাতি, বাঘ ও হরিণ এর ভাস্কর্য তারপর প্রধান ফটক। এর প্রবেশ পথেই আপনাকে একটি ডাইনোসর এর ভাস্কর্য স্বাগত জানাবে ও তার সাথে লেখা ফলকে পরিবেশ বিষয়ক বার্তা দেবে। প্রবেশ পথ পেরিয়ে শান্ত ছিমছাম পরিবেশ। চারপাশের বাতাসে পাখির কলতান। গ্রামের মতোই সবুজ শ্যামল অপরূপ মায়াবী। কুটিরগুলো দেখতে অনেকটা নেপালি ঢঙের। গ্রামের মায়া ছেড়ে যাদের জীবন কর্মচঞ্চল শহরের গণ্ডিতে আটকা, তারা চাইলে রাতে আরাম কেদারায় বসে চাঁদনী দেখতে দেখতে ফিরে যেতে পারেন হারিয়ে যাওয়া কোনো শৈশব স্মৃতিতে। বিনোদন ও অবকাশ যাপনের জন্য রাজধানীর কাছেই মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়ায় এ ভ্রমণতীর্থ মেঘনা ভিলেজ হলিডে রিসোর্ট (Meghna Village Holiday Resort)।
প্রবেশ মুখে ও অভ্যন্তরে দেখা মিলবে শিশুদের উপভোগ্য হাতির পাল, যুদ্ধরত ষাঁড়, ভল্লুক, বিশাল ডাইনোসর, বাঘ, হরিণ, সাপ-বেজির লড়াই, রাজহংসী, বাচ্চাসহ জিরাফের ভাস্কর্য, রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানাও। চিত্রা হরিণ, বানর, লজ্জাবতী হনুমান, কালিম পাখি, খরগোশ, কোয়েল পাখি ও কুমির কী নেই এখানে।
বিনোদন ও অবকাশযাপনে পরিপূর্ণ আনন্দ পেতে আগতদের জন্য রয়েছে ফটোগ্রাফি, চিকিত্সা, লন্ড্রি, সুভ্যেনির শপ, নিজস্ব গাড়ি, বাংলা ও চাইনিজ খাবার, পিকনিক, বারবিকিউ ডিনারের ব্যবস্থা। শরীরটাকে একটু ঝালাই করে নিতে এর রয়েছে সুবিশাল দুটি খেলার মাঠ। তাই ব্যাট বল নিয়ে মাঠে নেমে পড়তে পারবেন নির্দ্বিধায়। যারা মাছ ধরতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য রয়েছে মাছ ধরার ব্যবস্থাও। এমনকি নিজের ধরা মাছও তত্ক্ষণাত্ ঝলসে নিয়ে উদরপূর্তির সুযোগও আছে।
বিনোদনের নানা আয়োজনে ঠাসা এই রিসোর্টটিতে রয়েছে পেন্ডুলাম পাইরেট শিপ, প্যাডেল বোট, নাগরদোলা, মেরিগো রাউন্ড, সাইকেল চালনা, ব্যাটারী কার ও মিকি মাউস বাইক। এগুলো ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা ফি এর বিনিময়ে। এছাড়া এখানে সংরক্ষিত কুমির, মিনি ছিড়িয়াখানার পাখি ও জীবজন্তু দেখা আর বিশেষ সময়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচ গান দেখার জন্য কোনো ফি দিতে হয় না। তাদের রয়েছে নিজস্ব জামদানী তাঁত ও সবজি ক্ষেত। যেকেউ চাইলে এগুলো কিনতেও পারেন আবার ঘুরে দেখতে পারেন। প্রকল্পগুলো ঘুরে দেখার জন্য কোনো ফি নেই।
অন্যান্য সুযোগ সুবিধার মধ্যে রয়েছে ১০টি এসি/ নন এসি কটেজ। কটেজগুলোর সামনে ফুলশোভিত বাগান। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রেস্তোরা ও মেইলিস ডাইনিং, রয়েছে খেলার মাঠ এবং মাছ ধরার জন্য দুটো পুকুর।
মেঘনা ভিলেজ রিসোর্ট এর নতুন সংযোজন ৩ডি সিনেপ্লেক্স যার ধারন ক্ষমতা ২০ জন। টিকেটের দাম মাত্র ৩০ টাকা।
মেঘনা ভিলেজ এর খুব কাছেই আছে সোনারগাঁ জাদুঘর, তাজমহল, কুমিল্লার কোটবাড়ী।
টিকেট মূল্য
প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্যে ৫০ টাকা এবং বাচ্চাদের জন্যে ১০ টাকা।
মেঘনা ভিলেজ কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে যেতে হবে কাঁচপুর ব্রিজ। সেখান থেকে সোজা সোনারগাঁ হয়ে মেঘনা ব্রিজ। মেঘনা ব্রীজ পার হয়ে বালুকান্দি বাসস্ট্যান্ড থেকে বাম দিকের পথ ধরে ১ কিলোমিটার এগুলেই মেঘনা ভিলেজ রিসোর্ট এর দেখা মিলবে। এছাড়া আপনি চাইলে রিসোর্টের নিজস্ব গাড়িতে করেও রিসোর্টে যেতে পারবেন। সেজন্য ১,৫০০+ টাকা খরচ পড়বে।
বুকিং এর জন্যে যোগাযোগ
অগ্রিম বুকিং করতে চাইলে – ০১৭১২২০৩৩৩৬। বিস্তারিত তথ্যের জন্য – ০১৭১৮৪৭১৯৬১, ০১৮১৭ ১০৪১২৬।
ঢাকা থেকে বুকিং দিতে চাইলে: সুইট – ৫১২এ, লেভেল ৫, ইব্রাহিম ম্যানশন, ১১ পুরানা পল্টন, ঢাকা। ফোন: ০২-৯৫৭০৭৮২, ০১৫৫২-৩০৮৮৪৯, ০১৫৫২-৩৩৩৫৬৩, ০১৭১৮৪৭১৯৬১ (রিসোর্ট)
আড়িয়াল বিলঃ
বর্ষায় পানিতে টই টই, শীতে শুকিয়ে বিস্তীর্ণ শস্যক্ষেত। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। আর এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে যেতে হবে মুন্সিগঞ্জ এর আড়িয়াল বিলে। আড়িয়াল বিল ঢাকার দক্ষিণে পদ্মা ও ধলেশ্বরী নদীর মাঝখানে অবস্থিত প্রায় ১৩৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের একটি অবভূমি। নানা রকম শীতের সবজি চাষ হয় আড়িয়াল বিলে। তবে এ বিলের বিশেষ আকর্ষণ বিশাল আকৃতির মিষ্টি কুমড়া। পুরো আড়িয়াল বিল জুড়ে শীতে চাষ হয় মিষ্টি কুমড়া। শীত শেষে পাকলে মাঠ থেকে তোলা হয়। এছাড়া শুকনা আড়িয়াল বিলে খাবারের খোঁজে ঘুরে বেড়ায় নানান জাতের ছোট বড় পাখি। ঢাকার আশে পাশে হওয়ার কারনে খুব সকালে গিয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই ঢাকা ফিরে আসা যায়।
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর বাজার থেকে একটি সড়ক এঁকেবেঁকে সোজা চলে গেছে আড়িয়াল বিলের দিকে। এ পথে শ্যামসিদ্ধি গ্রাম পেড়িয়ে আরও সামনে গেলে গাদিঘাট। এ পর্যন্ত পিচঢালা পথ। সেখান থেকে কালভার্ট পেরিয়ে আরও সামনে কিছু দূর গেলে সড়কের শেষ। আড়িয়াল বিলের শুরু মূলত গাদিঘাট থেকেই। সেখান থেকে সর্পিল আঁকাবাঁকা একটি খাল চলে গেছে বিলের ভেতরে। শীতে সে খালের পানি শুকিয়ে তলায় ঠেকে। দূর বিল থেকে নৌকা বোঝাই মিষ্টি কুমড়া নিয়ে আসেন গুন টেনে। গুন টানা বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে অনেক আগে দেখা যেত। ইঞ্জিনের সহজলভ্যতার কারণে তা হারিয়ে গেলেও এখনো আড়িয়াল বিলে শীতে দেখা যায়।শীতের শেষের আড়িয়াল বিলে কৃষকদের মূল ব্যস্ততা থাকে মিষ্টি কুমড়া নিয়ে। আড়িয়ার বিলের কোনো কোনো মিষ্টি কুমড়া দুই মনেরও বেশি ওজনের হয়ে থাকে। শীতের শেষে আড়িয়াল বিলে আরও চোখে পড়বে মাছ ধরার দৃশ্য। বিলের মধ্যে খাল ছাড়াও আছে কিছু জলাশয়। এসব জলাশয়ে পানি কমে যাওয়ায় মাছ ধরেন স্থানীয়রা। পানি সেচে মাছ কুড়ানোও দেখা যাবে।
আড়িয়াল বিল (Arial Beel) থেকে ফেরার পথে দেখে নিতে পারেন শ্যামসিদ্ধির মঠ। শ্রীনগর বাজারের পশ্চিম দিকে শ্যামসিদ্ধি গ্রামে অবস্থিত এ প্রাচীন এ মঠের দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথের ওপরে বাংলা শিলালিপি অনুযায়ী ১৮৩৬ সালে বিক্রমপুরের জনৈক ধনাঢ্য ব্যক্তি শম্ভুনাথ মজুমদার এটি নির্মাণ করেন। জনশ্রুতি আছে সম্ভুনাথ স্বপ্নে তার স্বর্গীয় পিতার চিতার উপরে মঠ নির্মাণের নির্দেশ পেয়ে মঠটি নির্মাণ করেন। প্রায় ২৪১ ফুট উঁচু এ মঠ দিল্লির কুতুব মিনারের চেয়েও পাঁচ ফুট উঁচু। তাই বলা যেতে পারে এটা ভারত উপমহাদেশের সর্বোচ্চ মঠ। অষ্টভুজ আকৃতির এ মঠ দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে ২১ ফুট। চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি মঠের দেয়াল বেশ পুরু। মঠের উপরের দিকে বাইরের দেয়াল জুড়ে আছে শত শত খোড়ল। এগুলোতে বাসা বেধেছে শত শত সবুজ টিয়া, ঝুটি শালিক। তাই মঠটি সবসময়ই পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে।
আড়িয়াল বিল কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে আড়িয়াল বিলে এক দিনেই ঘুরে আসা যায়। ঢাকার গুলিস্তান থেকে মাওয়াগামী যে কোনো বাসে চড়ে নামতে হবে শ্রীনগরের ভেজবাজার। ভাড়া ৫০ থেকে ৭০ টাকা। এ পথের ভালো বাস ‘ইলিশ’ পরিবহন ও বিআরটিসি। সেখান থেকে ব্যাটারি চালিত রিকশা নিয়ে সোজা যেতে হবে গাদিঘাট। ভাড়া ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। সেখান থেকে ভালো একটা ট্রলার দেড় হাজার টাকায় সারা দিনের জন্য ভাড়া নিয়ে ঘুরে আসুন আড়িয়াল বিল। আড়িয়াল বিলে বেড়িয়ে আবার গাদিঘাটে এসে ফেরার রিকশা পাবেন।
ভাগ্যকুল জমিদার বাড়িঃ
মূলত ভাগ্যকুলের জমিদারদের অনেকগুলো বাড়ির মধ্যে একমাত্র টিকে থাকা বাড়িটি বান্দুরায় অবস্থিত। ভাগ্যকুলের এই জমিদার বাড়িটি বানিয়েছিলেন জমিদার যদুনাথ সাহা।
দ্বিতল বাড়ীর সামনে রয়েছে আটটি বিশাল থাম, দেখতে অনেকটা মানিকগঞ্জের বালিয়াটি জমিদার বাড়ীর মত। ভবনটির চারিদিকেই এমন থাম বিশিষ্ট এই স্থ্যাপত্যটি গ্রীক স্থাপত্যের ঘরনায় নির্মিত।
ভবনের ভেতরে নকশা-সাপ, ময়ূর, ফুল, পাখি সহ নানান নকশা রয়েছে। পুরো জমিদার বাড়ীর আঙ্গিনা জুড়ে ভবন, মাঝে উঠোন। এই জমিদার বাড়ী এর দরজা এবং জানালা একই মাপের, মানে উচ্চতার। ফলে কপাট বদ্ধ অবস্থায়, কোনটি দরজা, কোনটি জানালা বুঝা দায়। একতলা থেকে দোতলায় যাওয়ার সিঁড়িটি কাঠের তৈরি। এই জমিদার বাড়ীটি বান্দুরায় অবস্থিত। জমিদার বাড়ীর সামনে রয়েছে “নবকুঠি”, এটি মূলত গদিঘর ছিল।
এই জমিদার বাড়ীটি আনুমানিক ১৯২০ সালের আগে পড়ে নির্মাণ করা হয়। যদুনাথ সাহার ছিল পাঁচ ছেলেমেয়ে। এদেরকে পৃথক পৃথক বাড়ী নির্মাণ করে দেন জমিদার যদুনাথ, যেগুলো বান্দুরা’র কোকিলপেয়ারি জমিদার বাড়ী, উকিল বাড়ী, জজ বাড়ী নামে পরিচিত রয়েছে।
ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে নবাবগঞ্জ হয়ে কলাকোপা-বান্দুরা যাওয়া যায়। দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। গুলিস্তান থেকে ঢাকা-দোহার রুটের ‘মহানগর’, ‘গরিবে নেওয়াজ’, ‘সেবা’ কিংবা ‘আরাম’ পরিবহনের বাসে বালাসুর বাজারে নেমে রিকশায় ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি যাওয়া যায়। মাত্র শখানেক গজের মধ্যে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে সবকয়টি ভবন। ভাড়া সব মিলিয়ে ৭০ টাকা। আপনি যে কোন এক ছুটির দিনে স্বপরিবারে বেড়িয়ে আসতে পারেন এই চমৎকার জায়গাটি হতে, আশা করি আপনার ভালই লাগবে।
ইদ্রাকপুর কেল্লাঃ
মুন্সিগঞ্জ (Munshiganj) শহরের প্রাণ কেন্দ্রে ইদ্রাকপুর কেল্লা অবস্থিত। মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে সেনাপতি ও বাংলার সুবেদার মীর জুমলা কর্তৃক ১৬৬০ সালে বিক্রমপুরের এই অঞ্চলে ইদ্রাকপুর কেল্লা নামে এই দূর্গটি নির্মিত হয়।
মগ জলদস্যু ও পর্তুগীজদের আক্রমন হতে এলাকাকে রক্ষা করার জন্য এই দূর্গটি নির্মিত হয়। বহু উচ্চ প্রাচীর বেষ্টিত এই গোলাকার দূর্গটি এলাকায় এস.ডি.ও কুঠি হিসাবে পরিচিত।শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রাখতে সারিবদ্ধভাবে হাড়ি রেখে ইদ্রাকপুর কেল্লার উপরের অংশে কুঠিরের মেঝে তৈরি করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কথিত আছে, এ গুপ্ত পথ দিয়ে লালবাগ কেল্লায় যাওয়া যেত। তবেএর সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে গুপ্ত পথ দিয়ে লালবাগ কেল্লায় নয়, অন্য কোথাওপালানো যেত। সুউচ্চ প্রাচীরবিশিষ্ট এই দুর্গের প্রত্যেক কোনায় রয়েছে একটি বৃত্তাকার বেষ্টনী। দুর্গাভ্যন্তর থেকে শত্রুর প্রতি গোলা নিক্ষেপের জন্য প্রাচীরের মধ্যে অসংখ্য চতুষ্কোনাকার ফোঁকর রয়েছে একমাত্র খিলানাকার দরজাটির অবস্থান উত্তর দিকে। মূল প্রাচীরের পূর্ব দেয়ালের মাঝামাঝি অংশে ৩৩ মিটার ব্যাসের একটি গোলাকার উঁচু মঞ্চ রয়েছে। দূর থেকে শত্রুর চলাচল পর্যবেক্ষণের জন্য প্রায় প্রতি দুর্গে এই ব্যবস্থা ছিল। এই মঞ্চকে ঘিরে আর একটি অতিরিক্ত প্রাচীর মূল দেয়ালের সাথে মিলিত হয়েছে। দুর্গের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সূদৃঢ় করার জন্য এটি নির্মিত হয়েছিল। কেল্লাটির তিন কিলোমিটারের মধ্যেই ইছামতী, ধলেশ্বরী, মেঘনা এবং শীতলক্ষা নদীর অবস্থান। মোঘল স্থাপত্যের একটি অনন্য কীর্তি হিসেবে ইদ্রাকপুর দুর্গটি ১৯০৯ সালে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষিত হয়।
ইদ্রাকপুর কেল্লা কিভাবে যাবেনঃ
মুন্সিগঞ্জ সদর এর কাছে পুরাতন কোর্ট অফিস সংলগ্ন। ঢাকার গুলিস্তান থেকে “দিঘীরপাড় ট্রান্সপোর্ট” এর মাধ্যমে মুক্তারপুর আসা যায়। মুক্তারপুর থেকে অটো রিক্সায় ১৫ টাকা (জন প্রতি) বা রিক্সা যোগে ৩০-৪০ টাকায় ইদ্রাকপুরের কেল্লায় যাওয়া যায়।
হযরত বাবা আদম শহীদ (র.) এর মসজিদঃ
মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরের ইতিহাস প্রসিদ্ধ রামপাল গ্রামের নিকটস্থ কাজী কসবা গ্রামে সুলতানী আমলের ছয় গম্বুজ বিশিষ্ট হযরত বাবা আদম শহীদ (র.) এর মসজিদ অবস্থিত। এর কয়েক গজ পূর্বে একটি মাজার আছে। মাজারটি ইটের তৈরী ২৫ (পঁচিশ) ফুট বাহুবিশিষ্ট বর্গাকার আয়তনের মঞ্চের উপর একটি পাকা সমাধি বিশেষ। আর মসজিদটি আয়তাকার ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত। এর আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ৪৩ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৩৬ ফুট এবং চার কোণায় রয়েছে চারটি অষ্ট কোণাকৃতির বুরুজ বা মিনার। মনোরম বলয়াকারের স্ফীত রেখায় মিনারের ধাপে ধাপে অলংকরণের কাজ আছে।
পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে তিনটি অর্ধবৃত্তাকার অবতল মেহরাব। কেন্দ্রীয় মেহরাবের পেছন দিকের দেয়াল বাইরের দিকে উদগত। সামনের দেয়ালের ধনুকাকৃতির খিলানবিশিষ্ট তিনটি প্রবেশপথে আয়তাকারে নির্মিত যে সব ফ্রেম আছে তার শীর্ষ দেশে অতি সুন্দর কারুকাজ আছে। প্রধান প্রবেশ পথের দুই পাশে গভীর সমতল কুলুঙ্গী রয়েছে এবং উপরিভাগ সুন্দরভাবে খাঁজকাটা। আর তাছাড়া রয়েছে ঝুলন্ত শিকল ও ঘন্টার অলংকরণ কিন্তু মসজিদে কোন বারান্দা নেই। অভ্যন্তর ভাগে গ্রানাইট পাথরের নির্মিত দুইটি স্তম্ভ আছে। এই দুইটি স্তম্ভের সাহায্যে অভ্যন্তর ভাগ পূর্ব পশ্চিমে দুই সারিতে এবং উত্তর-দক্ষিণে তিন সারিতে বিভক্ত। আর এই স্তম্ভ দুইটি মাঝ থেকে চার ফুট পর্যন্ত অষ্টকোণাকৃতির এবং এর পর ষোলকোণাকৃতির। এই দুইটি স্তম্ভ এবং চারপাশের দেয়ালের উপর মসজিদের অর্ধবৃত্তাকার ছোট ছোট গম্বুজ ছয়টি স্থাপিত। গম্বুজ ও মসজিদের অভ্যন্তর-ভাগের মতোই পূর্ব-পশ্চিমে দুই এবং উত্তর-দক্ষিণে তিন সারিতে বিভক্ত এবং এর দেয়াল অতিশয় পুরু। প্রধান মেহরাবটি এবং দুই পাশের দুই মেহরাব ও পাশের দেয়াল লতাপাতা, জ্যামিতিক নক্সা ও ও গোলাপফুল, ঝুলন্ত প্রদীপ ও শিকল প্রভৃতি পোড়ামাটির চিত্র ফলক দিয়ে অত্যন্ত সুন্দরভাবে অলংকৃত। একটা সময়ে মসজিদের বাইরের দিক বিশেষ করে সামনের দেয়াল অতি সুন্দর পোড়ামাটির চিত্রফলক দিয়ে অলংকৃত ছিল। কিছু কিছু চিত্রফলকের কাজ কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের দুইপাশে এখনও চোখে পড়ে।
কথিত আছে এক সময়ে মানত হাসিলের জন্য হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মহিলাদের দ্বারা এই মসজিদের স্তম্ভ দুইটি সিন্দুরানুলিপ্ত হয়ে রক্তবর্ণ ধারণ করেছিল। এই মসজিদটি মূলত দরগাবাড়ীর মসজিদ বা বাবা আদমের মসজিদ এবং মাজারটি বাবা আদমের দরগা নামে পরিচিত।
বাবা আদম শহীদ (র.) এর মসজিদ কিভাবে যাবেনঃ
সড়কপথে ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জের দূরুত্ব মাত্র ২৩ কিলোমিটার। তবে এই মাজারে আসার জন্য আরো ০৫ (প্রায়) কিলোমিটার ভিতরে আসতে হবে। ঢাকা হতে সকালে এসে মাজার জিয়ারত ও মসজিদ দর্শন করে বিকেলেই ঢাকায় ফিরে আসা যাবে। সড়কপথে যেতে কষ্ট হবে না। তবে নৌপথে গেলে সময়ও বাচঁবে এবং যানজট এড়িয়ে নদী পথের সৌন্দর্য অবগাহন করে স্বাচ্ছন্দের সাথে পৌছানো যাবে। সদর ঘাট থেকে মুন্সিগঞ্জ গামী লঞ্চে ২ ঘন্টার মধ্যেই পৌছে যাওয়া যাবে মুন্সিগঞ্জ লঞ্চ ঘাটে। মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা হইতে রিক্সায় দরগাবাড়ি হযরত বাবা আদম শহীদ (র.) এর মাজার সংলঘ্ন মসজিদ এ যাওয়া যায়। ভাড়া ৪০-৫০ টাকা।
মাওয়া ফেরি ঘাটঃ
যুগ যুগ ধরেই মাওয়া ঘাটের (Mawa Feri Ghat) ইলিশের চাহিদা সর্বত্র। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে ইলিশ খেতে আসেন ভোজন রসিকরা। এই বিশাল চাহিদা পূরণে মাওয়া ঘাটের পাড়ে গড়ে ওঠেছে ছোট-বড় হোটেল। রয়েছে মৌসুমি ফলসহ অন্যান্য পণ্যের বিশাল সমারোহের দোকান। এছাড়াও রয়েছে খণ্ড-খণ্ড মাছের বাজার। এ মাছের বাজার গুলোতে বিক্রি হচ্ছে পদ্মা নদীর তাজা ইলিশ সহ ছোট-বড় মাছ। চাহিদাও ব্যাপক।
এছাড়া শিমুুলিয়া ঘাটে পদ্মা সেতু দেখতে দেখতে সময় কাটাতে পারেন খানিকটা। সেখানকার পরিবেশটাও বেশ মনোরম।
ঢাকার খুব কাছে হওয়ার কারনে একদিনে ঘুরে আসতে পারবেন পদ্মা ঘাট থেকে আর দুপুরে পদ্মা ঘাটে বসে ধোয়া ওঠা গরম ভাতের সাথে পদ্মার ভাজা ইলিশ দিয়ে ভুড়ি ভোজ করুন। চাইলে স্পীডবোটে করে ওপার যেতে পারেন। ওখানেও ভালো কিছু খাবার হোটেল হয়েছে। সন্ধ্যার পরে ফেরিতে ফিরতে পারেন। ফেরির তিন তলা থেকে রাতের পদ্মা অপার্থিব লাগবে।
দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যার আগে পর্যন্ত নদীতে থাকবে সূর্যের রূপালী ঝিলিক। মৃদু বাতাসে নদীর জলে ছোট ছোট রূপালী ঢেউ ঝলকে দেয় চোখ। পদ্মায় ভেসে ঘোরার মতো মাঝি ও নৌকা দুর্লভ। এপার হতে ওপারে যাওয়ার জন্য আছে লঞ্চ আর স্পীড-বোট। ফেরীতেও পারাপার হতে পারেন। স্পীড বোটে এপার হতে ওপারে যেতে ২০-২৫ মিনিটের মতো লাগে; ভাড়া ১৫০ টাকা। যারা একটু ভীতু এবং সাঁতার জানেন না, তাদের স্পীড-বোটে না চড়াই ভালো। দ্রুতগতির এই স্পীড-বোট পদ্মার বুকে অনেক সময় লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যা রোমাঞ্চকর এবং মজাদার বটে, কিন্তু ভয় পেলে তাতে না চড়াই ভালো। লঞ্চ পারাপারে সময় একটু বেশী লাগে, আশেপাশের প্রকৃতিও দেখা যায় বেশী। ভাড়া ৩০ টাকা (লোকাল) এবং ৪০ টাকা (ডাইরেক্ট)।
যদি জেলেদের কাছ থেকে তাজা মাছ কিনে খেতে চান তবে আপনাকে অন্তত এক দিনের জন্য সকালের কাঁচা ঘুম ত্যাগ করে মাওয়া পৌঁছাতে হবে সকাল ৯ তার মধ্যে।আর শুধু ইলিশ খেয়ে চলে আসা নেহায়েত বোকামি হবে যদি নদীর পাড়ে বসে পদ্মার বিশাল জলের একটু উন্মাদনা না দেখেন। তার জন্য বেস্ট প্ল্যান হবে, মাওয়া ঘাট থেকে জন প্রতি ২৫/= টাকা করে ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সায় লোহজং যেতে পারেন। সম্পূর্ণ অটো রিক্সায় রিজার্ভ নিলে ১৫০/= টাকা নিবে। সেখান থেকে নৌকায় যাবেন পদ্মা রিসোর্ট। রিসোর্ট ও দেখা হবে নৌকা ভ্রমণ ও হয়ে যাবে। ইচ্ছা করলে সারা দিন অথবা রাত দিন থাকার ব্যবস্থা আছে রিসোর্ট এ। না থাকতে চাইলেও অসুবিধা নেই শুধু এক্সট্রা ৫০ টাকা দিলেই ঘুরে দেখা যাবে সম্পূর্ণ রিসোর্ট।
খরচঃ
যাতায়াত (৭০+২০)*২=১৮০ টাকা। ইলিশ ভাজা ভাত ১০০ টাকা। মোট=২৮০ টাকা।
মাওয়া ঘাট কিভাবে যাবেনঃ
সকালে গুলিস্তান বা যাত্রাবাড়ী থেকে বাস এ মাওয়া ঘাটে চলে যাবেন। ভাড়া ৭০/- বি আর টি সি/ইলিশ পরিবহন। মিরপুর ১০, ফার্মগেট , শাহবাগ থেকে যেতে পারেন স্বাধীন পরিবহন এ। গুলিস্তান থেকে বি আর টি সি এসি পাবেন। ঘন্টা খানেকের একটু বেশি সময় লাগতে পারে ঘাট এ পৌছাতে। চাইলে পদ্মা পারি দিতে পারেন লঞ্চ, ফেরি কিম্বা স্পীডবোটে। ভাড়া পড়বে ৩৫/২০/১৫০ টাকা যথাক্রমে। সময় লাগতে পারে ২ ঘন্টা, ১:৩০ ঘন্টা অথবা ৩০ মিনিট যথাক্রমে।
কোথায় খাবেন
পদ্মার ওপাড়ে কাওড়াকান্দি ঘাটে হোটেলগুলোতে ইলিশ আর গরম ভাত দিয়া ভুড়ি ভোজ করতে পারেন। তবে খাবার আগে ইলিশ এর ফেনা ওঠা গরম তেল আর শুকনা মড়িচ দিয়ে ভাত মাখিয়ে নিতে ভুলবেন না। মনে হবে আহ লাইফ ইস বিঊটিফুল। ইলিশ ভাজা ৭০/- থেকে ৯০/- সাইজ ভেদে, ভাত ১০/- শুকনা মড়িচ ফ্রি। তৃপ্তির ঢেকুড় তুলে আবার একই রাস্তায় ফেরত আসবেন ঢাকায়।
পদ্মা রিসোর্টঃ (রিসোর্টটি নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে)
ঢাকা বিভাগের মুন্সিগঞ্জ জেলার পদ্মা নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে নয়নাভিরাম ও অপরূপ সুন্দর একটি রিসোর্ট যার নাম পদ্মা রিসোর্ট। যারা কর্ম চঞ্চল শহরের গন্ডি পেড়িয়ে প্রকৃতি আর নদীর সান্নিধ্য পেতে চান তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান। যান্ত্রিক জীবনের ধরাবাঁধা নিয়ম, কোলাহল, শব্দ ও বায়ু দূষণ এবং সর্বোপরি নগর জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝে সপ্তাহ শেষে একটুরো নির্মল প্রশান্তির এনে দিতে পারে পদ্মা নদীর মাঝখানের জেগে উঠা চরে গড়ে উঠা এই পদ্মা রিসোর্ট। পরিবার নিয়ে অথবা বন্ধুদের সাথে জম্পেশ আড্ডায় পদ্মা রিসোর্ট হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ জায়গা। ঢাকা থেকে পদ্মা রিসোর্টের দূরত্ব মাত্র ৫০ কিমি.। সাথে গাড়ি থাকলে যেতে সময় লাগবে প্রায় ২ ঘন্টা। পদ্মা রিসোর্টটি গড়ে উঠেছে মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার লৌহজং থানার পাশে পদ্মা নদীর বুকে।
সর্বমোট ১৬টি ডুপ্লেক্স কটেজের নিয়ে তৈরি হয়েছে পদ্মা রিসোর্ট (Padma Resort)। যার ১২টি কটেজের নাম করা হয়েছে বাংলার ১২ মাসের নাম অনুযায়ী আর বাকি ৪টা নামকরন হয়েছে ঋতুর নামে। বলে রাখাএকটু নিরিবিলি থাকতে চান তো সর্বপশ্চিমের কটেজগুলো এবং এগুলো বাংলা মাসের নাম অনুযায়ী শুরু।
প্রতিটি কটেজে আছে একটি বড় বেডরুম, দুটি সিঙ্গেল বেডরুম, একটি ড্রইংরুম। আছে দুটি ব্যালকনি এবং একটি বাথরুম। প্রতিটি কটেজে ৮ জন করে থাকা যাবে। বিশেষ আকর্ষন হিসেবে আছে সুন্দরী পাতা দিয়ে তৈরি করা ঘরের চাল৷ দেয়াল ও অন্যান্য জায়গায় বাঁশ ও তাল গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে নিখুঁতভাবে ৷ ডুপ্লেক্স এই কটেজের নিচ তলায় রয়েছে এক সেট সোফা, টেবিল এবং একটি সিঙ্গেল বেড, দেড় তলায় অত্যাধুনিক ফিটিংসহ কমোড, বেসিন, লুকিং গ্লাস, শাওয়ার ইত্যাদি দিয়ে তৈরি বাথরুম এবং বসার জন্য সুবিশাল বারান্দা, ছাড়াও ২য় তলায় পাবেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সাজানো ২টি সিঙ্গেল বেড, সেইসাথে মাঝখানে মধ্যখানে সেন্টার টেবিল ও ওয়ারড্রোব।
শীতে কটেজের চারপাশ রঙ-বেরঙের ফুলে ভরে ওঠে আর বর্ষায় পানির রাজ্য। রিসোর্টের উঠোনে ইজি চেয়ারে রাতের তারা গুনতে পারেন। দিনে পারেন দেশি নৌকায় পদ্মা বেড়াতে। রিসোর্ট রেস্টুরেন্টে টাটকা ইলিশ পাবেন। শাকসবজি, গরু, মুরগি আর হাঁসের মাংসও পাবেন। মৌসুমি ফলফলাদিও মিলবে।
কি আছে পদ্মা রিসোর্টে?
আউটডোরে – বাইরে আছে লেভিশ বিচ চেয়ার যেখানে হেলান দিয়ে আপনি উপভোগ করতে পারবেন নদীর পারের নয়নাভিরাম সন্দর্য। এছাড়াও আছে ঘোড়া, এই ঘোড়ায় চরেও ঘুরে বেরাতে পারবেন আপনি।
রেস্টুরেন্ট – রিসোর্টের ভিতরে বেশ অনেকখানি জায়গা নিয়ে আছে সুসজ্জিত রেস্টোরেন্ট। এখানে ১২০ জনের মতো বসার জায়গা আছে।
রিভার ক্রুজের ব্যবস্থা – যারা নৌকা ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তাঁদের জন্য আছে বিভিন্ন রকম ছোট বড় নৌকার ব্যবস্থা। এখানে আছে রাবার বোট যাতে অনায়াসে ২-৬ জন বসতে পারবে। স্পিড বোটের ব্যবস্থাও আছে এখানে। আর এক ধরনের নৌকা হচ্ছে কান্ট্রি বোট, একটু বড় হয় এই নৌকাটা, এখানে একসাথে ২০-২৫ জন উঠতে পারবে। আর যারা নদীতে মাছ ধরার শখ রাখেন তারা ফিশিং বোটেও চড়তে পারেন। সব বোটেই লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা আছে।
বুকিং করার উপায়
সরকারী ছুটির দিনে যাবার আগে অবশ্যই আগেই কটেজ বুক করে যেতে হবে। আগে থেকে বুক করতে হলে পদ্মা রিসোর্টের ঢাকা অফিসে আপনাকে বুকিং মানি দিয়ে বুক করতে হবে।
যোগাযোগ করতে চাইলে
এস এম নজরুল ইসলাম
জেনারেল ম্যানেজার
মোবাইলঃ ০১৭১২-১৭০৩৩০, ০১৭৫২-৯৮৭৬৮৮
টেলিফোনঃ ৮৭৫২৬১৭
খরচ
সারাদিনের জন্য কটেজ ভাড়া ২৩০০টাকা (২০০০টাকা + ১৫%ভ্যাট) এবং সারাদিন সমেত রাতের জন্য ৩৪৫০ টাকা (৩০০০টাকা + ১৫%ভ্যাট)।
নদীর শীতল পানিতে গোসল করা কিংবা স্পিডবোট (প্রতি ঘন্টা ২৫০০ টাকা), সাম্পান নৌকা (প্রতি ঘন্টা ১২০০ টাকা) অথবা ট্রলার (প্রতি ঘন্টা ৬০০ টাকা) করে ঘুরতে পারেন পদ্মার নদীর অপার সৌন্দয্য।
পদ্মা রিসোর্ট কিভাবে যাবেনঃ
অনেক ভাবেই যেতে পারেন পদ্মা রিসোর্ট এ। যেতে পারেন বাসে অথবা প্রাইভেট গাড়িতে। লৌহজং থানা মসজিদ ঘাট পর্যন্ত সরাসরি আসতে পারবেন ঢাকার গুলিস্থান থেকে ছেড়ে আসা গাংচিল অথবা ইলিশ পরিবহনে করে, ভাড়া নিবে জনপ্রতি ৭০ টাকা। মিরপুর ১০, ফার্মগেট , শাহবাগ থেকে যেতে পারেন স্বাধীন পরিবহন এ। অন্যাদিকে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত যেতে পারেন “গ্রেট বিক্রমপুর পরিবহন” (মাওয়া-গুলিস্থান-মাওয়া) কিংবা “গোধুলী পরিবহনে” (মাওয়া-গাজীপুর/যাত্রাবারি-মাওয়া)। সেক্ষেত্রে মাওয়া ফেরীঘাট যাবার আগেই লৌহজং থানার যাবার পথের চৌরাস্তায় মোড়ে নেমে রিক্সা অথবা অটোরিক্সাতে ১৫ মিনিটের পথ গেলেই হবে।
অনেকটা এরকমঃ মাওয়া ফেরী ঘাট > লৌহজং চৌরাস্তা মোড় > লৌহজং পুলিশ ফাঁড়ী > পদ্মা রিসোর্ট।
আর নিজের সাথে গাড়ি থাকলে তো কোন কথাই নেই। পথ চিনে যেতে তেমন কোন বেগ পেতে হবে না। সেক্ষেত্রে যাত্রাপথে আপনাকে দুই জায়গায় সর্বমোট ৬০ টাকা টোল দিতে হবে। গাড়ি রাখার জন্য লৌহজং থানা’র সামনে অনেক জায়গা রয়েছে। লৌহজং থানার পাশের মসজিদ ঘাটে রয়েছে ইঞ্জিন চালিত নৌকা এবং স্পিডবোট। মাওয়া ফেরিঘাট হতে রিসোর্টের নিজস্ব স্পীডবোটে করে সরাসরি রিসোটে।
আগে থেকে ফোনে যোগাযোগ করে গেলে রিসোর্টের নিজেদের ইঞ্জিন চালিত নৌকা আপনাকে ওই পারে নিয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে প্রতিজনের ৫০ টাকা করে। অবশ্য এই ভাড়ায় আসা-যাওয়া দুটি পারাপারই রয়েছে।
খাবারের ব্যবস্থা
পদ্মা রিসোর্টের আছে সু-সজ্জিত রেস্টুরেন্ট যা ২০টি টেবিল চেয়ার দিয়ে সাজানো সেখানে অনায়েসে ২০০ জন লোক একসাথে খেতে পারে এবং আপনি চাইলে লাঞ্চ বা ডিনারসহ যেকোন পার্টি আয়োজন করতে পারেন। রেস্টুরেন্টে ঢুকার আগে আপনাকে রিসোর্ট অফিস থেকে জনপ্রতি ৩৫০টাকা (৩০০টাকা + ১৫% ভ্যাট) দিয়ে ফুড টোকেন সংগ্রহ করতে হবে। দুপুরের খাবার মেনুতে থাকছে ভাত, ডাল, ইলিশ ফ্রাই (১ পিস), মুরগীর মাংস (বড় ১ পিস), সবজি, সালাত তবে মিনারেল ওয়াটার আলাদা ভাবে কিনতে হবে যার ১লিটারের দাম ৪০টাকা। সেই সাথে পাবেন কোমলপানীয় (ক্যানঃ ৪০ টাকা, পেপসি ১.৫ লিটারঃ ১০০ টাকা, পেপসি ২ লিটারঃ ১৫০ টাকা)।
সকালে নাস্তা করতে চাইলে ১০০ টাকা লাগবে। পদ হিসেবে থাকবে পরটার সাথে সবজি, ডিম আর চা। পানির বোতল আলাদা নিজে কিনতে হবে অবশ্য।
পদ্মা রিসোর্টে খাবার জিনিসের মাত্রারিক্ত বেশি এবং বাহিরে থেকে খাবার আনার অনুমতিও নাই। তবে এন্ট্রির সময় পর্যটকদের চেক করে না, সেই সুবাদে আপনি চাইলে আপনার ব্যাকপ্যাকে করে খাবার নিতে পারেন।
মাওয়া রিসোর্ট, মাওয়াঃ
ঢাকা থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার দক্ষিণে বিক্রমপুরের লৌহজং উপজেলার মাওয়া ১নং ফেরিঘাট হতে সামান্য দক্ষিণে মাওয়া-ভাগ্যকুল রাস্তার কান্দিপাড়া গ্রামে নির্মিত মাওয়া রিসোর্ট যেন প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যমন্ডিত একটি অন্য রকম পর্যটন কেন্দ্র। প্রকৃতির সৌন্দর্যে ভরপুর, নিরাপদ আর নির্জন পরিবেশে ভ্রমণের জন্য এটি হতে পারে অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি গড়ে উঠেছে একেবারে পদ্মার পাড়ে। অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা এই রিসোর্টটি এরই মধ্যে দেশি-বিদেশি আগন্তুক ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। ভ্রমণ পিয়াসু মানুষ প্রতিদিনই ছুটে যাচ্ছেন মাওয়া রিসোর্টে (Mawa Resort)।
মাওয়া ১নং ফেরিঘাট থেকে মাত্র ৫০০ গজ দূরে মাওয়া-ভাগ্যকূল রাস্তার কান্দিপাড়ায় নির্মিত এ রিসোর্টটি যেন নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি অন্যরকম পর্যটন কেন্দ্র। নির্জন পরিবেশ আর সবুজে ঘেরা এ স্থানটি নানা দিক থেকেই ভিন্নতা লাভ করেছে। পর্যটন কেন্দ্রটির প্রধান ফটকে ঢুকতেই নজরে পড়ে বিশাল একটি দীঘি। দীঘির চারদিকে সারি সারি নারিকেল আর সুপারি গাছে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দীঘিতে রয়েছে দুটি বাঁধানো পাকা ঘাট। দীঘির জলে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে আধুনিক বোট। পাড়ে রয়েছে একটি ক্যাফেটেরিয়া। এতে চাহিদামত খাবার পাওয়া যায়। পুকুরের পূর্ব প্রান্তে থাকার জন্য রয়েছে সারি সারি ১৮টি কটেজ। ৫টি সিঙ্গেল ৪টি ডাবল ও একটি সুইট রয়েছে এখানে। কটেজে যাওয়ার সময় লাল, সাদা আর সবুজ রঙের দৃষ্টিনন্দন কাঠের সেতুগুলো বাড়তি সৌন্দর্যের জোগান দেয়। রাতে নির্জন গ্রামের রাশি রাশি জোনাক পোকার ম্লান আলোর আভায় রংবেরংয়ের বৈদ্যুতিক বাতিগুলোকে বড়ই অসহায় মনে হয়। পিকনিক কিংবা ছবির শুটিং করার জন্যও এটি হতে পারে একটি আকর্ষণীয় কেন্দ্র। রিসোর্টের কটেজগুলো ইটের দেয়ালে তৈরি করা হয়েছে। গোলপাতা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ছাদ। বাঁশের চটা দিয়ে নানান আল্পনা দিয়ে তৈরি করা সিলিং। ঘরের ভেতরেও রয়েছে আধুনিক আসবাবপত্র, বাথরুম আর দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ। আপাতত ২৩ বিঘা জায়গাজুড়ে এটি করা হয়েছে।
প্রতিদিনই পদ্মাপাড়ের এ ঘাটে বেড়াতে আসেন ঢাকা ও আশপাশের শত শত মানুষ। আর ছুটির দিন এখানে ছুটে আসেন বিভিন্ন পেশার হাজার হাজার মানুষ।
খরচ
রিসোর্টের প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৩০টাকা।
যোগাযোগ
ফোনঃ ০১৭১১৬৭৬০৫৮, ০১৭৫৫৫৯২৫৮৫, ০১৭৫৫৫৯২৫৮৪, ০১৭১১০৫৭৯৪৭
ই-মেইলঃ info@mawaresort.com
ফেইসবুক পেইজঃ https://www.facebook.com/mawaresortbd
মাওয়া রিসোর্ট কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে মাওয়া গোলচত্বরের ডানদিকের রাস্তায় দুই কিমি দূরের লৌহজং পুলিশ ফারির নিকটে পুরনো ফেরী ঘাটের পাশে এটি অবস্থিত। যেতে পারেন বাস সার্ভিসে অথবা নিজের সাথে নেওয়া গাড়ি করে। সাথে গাড়ি থাকলে যেতে সময় লাগবে ২ ঘন্টার মতো। সেক্ষেত্রে যাওয়ার পথে আপনাকে দুই জায়গায় মোট ৬০ টাকা টোল দিতে হবে। গাড়ি রাখার জন্য লৌহজং থানা প্রাংগনে আছে সুবিধা মত অনেক জায়গা। লৌহজং থানা মসজিদ ঘাট পর্যন্ত সরাসরি আসতে পারবেন ঢাকার গুলিস্থান থেকে ছেড়ে আসা গাংচিল অথবা ইলিশ পরিবহনে। ভাড়া নিবে জনপ্রতি ৭০ টাকা। মিরপুর ১০, ফার্মগেট , শাহবাগ থেকে যেতে পারেন স্বাধীন পরিবহন এ।
অথবা আপনি মাওয়া ঘাট পর্যন্ত যেতে পারেন “গ্রেট বিক্রমপুর পরিবহন” (মাওয়া-গুলিস্থান-মাওয়া) কিংবা “গোধুলী পরিবহনে” (মাওয়া-গাজীপুর/যাত্রাবারি-মাওয়া)। সেক্ষেত্রে মাওয়া ফেড়ীঘাট যাবার আগেই লৌহজং থানার যাবার পথের চৌরাস্তায় মোড়ে আপনাকে নামতে হবে। পরে রিক্সা অথবা অটোরিক্সাতে ১৫ মিনিটের পথ।
অতীশ দীপঙ্করের জন্মস্থানঃ
অতীশ দীপঙ্কর ৯৮২ খ্রিস্টাব্দে বিক্রমপুর পরগনার বজ্রযোগিনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এটি বর্তমানে বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত। অতীশ দীপঙ্করের (Atish Dipankar) বাসস্থান এখনও ‘নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা’ নামে পরিচিত। অতীশ দীপঙ্কর গৌড়ীয় রাজ পরিবারে রাজা কল্যাণশ্রী ও প্রভাবতীর মধ্যম সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
ছোটবেলায় তাঁর নাম ছিল আদিনাথ চন্দ্রগর্ভ। তিন ভাইয়ের মধ্যে অতীশ ছিলেন দ্বিতীয়। তার অপর দুই ভাইয়ের নাম ছিল পদ্মগর্ভ ও শ্রীগর্ভ। অতীশ খুব অল্প বয়সে বিয়ে করেন। কথিত আছে তার পাঁচ স্ত্রীর গর্ভে মোট ৯টি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেন।তবে পুন্যশ্রী নামে একটি পুত্রের নামই শুধু জানা যায়।
প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন মায়ের কাছে। তিন বছর বয়সে সংস্কৃত ভাষায় পড়তে শেখা ও ১০ বছর নাগাদ বৌদ্ধ ও অবৌদ্ধ শাস্ত্রের পার্থক্য বুঝতে পারার বিরল প্রতিভা প্রদর্শন করেন তিনি। মহাবৈয়াকরণ বৌদ্ধ পণ্ডিত জেত্রির পরামর্শ অণুযায়ী তিনি নালন্দায় শাস্ত্র শিক্ষা করতে যান।
১২ বছর বয়সে নালন্দায় আচার্য বোধিভদ্র তাঁকে শ্রমণ রূপে দীক্ষা দেন এবং তখন থেকে তাঁর নাম হয় দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি বোধিভদ্রের গুরুদেব অবধূতিপাদের নিকট সর্ব শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। ১৮ থেকে ২১ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি বিক্রমশীলা বিহারের উত্তর দ্বারের দ্বারপন্ডিত নাঙপাদের নিকট তন্ত্র শিক্ষা করেন। এরপর মগধের ওদন্তপুরী বিহারে মহা সাংঘিক আচার্য শীলরক্ষিতের কাছে উপসম্পদা দীক্ষা গ্রহণ করেন।ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের জন্য তিনি পশ্চিম ভারতের কৃষ্ণগিরি বিহারে গমন করেন এবং সেখানে প্রখ্যাত পণ্ডিত রাহুল গুপ্তের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। বৌদ্ধ শাস্ত্রের আধ্যাত্নিক গুহ্যাবিদ্যায় শিক্ষা গ্রহণ করে ‘গুহ্যজ্ঞানবজ্র’ উপাধিতে ভূষিত হন।
দীপঙ্কর ১০১১ খ্রিস্টাব্দে শতাধিক শিষ্যসহ মালয়দেশের সুবর্ণদ্বীপে (বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপ) গমন করেন এবং আচার্য ধর্মপালের কাছে দীর্ঘ ১২ বছর বৌদ্ধ দর্শনশাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ের উপর অধ্যয়ন করে স্বদেশে ফিরে আসার পর তিনি বিক্রমশীলা বিহারে অধ্যাপনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
অতীশ দীপঙ্করের জন্মস্থান কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকার গুলিস্তান থেকে “দিঘীরপাড় ট্রান্সপোর্ট” এর মাধ্যমে মুক্তারপুর আসা যায়। মুক্তারপুর থেকে অটো রিক্সায় ৫০টাকা (জন প্রতি) বা রিক্সা যোগে ৩০-৪০ টাকায় বজ্রযোগিনী গ্রামে অতীশ দীপঙ্করের জন্মস্থান যাওয়া যায়।