১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | দুপুর ২:৫০
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
দুবাই পালালেন মুন্সিগঞ্জে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার নেতৃত্ব দেয়া আ. লীগ নেতা কবির মাষ্টার
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১৫ আগস্ট ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

দেশ ছেড়ে দুবাই পালিয়েছেন গেল ৪ আগস্ট মুন্সিগঞ্জ শহরে শিক্ষার্থীদের উপর আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের হামলার নেতৃত্ব দেয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবির মাষ্টার।

গতকাল বুধবার (১৪ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে বাসে তাকে দেখা যায়। পরে দুবাইগামী বিমানে উঠেন তিনি।

আমার বিক্রমপুরের একটি বিশ্বস্ত সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে। জানা যায়, ঢাকা থেকে দুবাইগামী বিমানে দেশ ছেড়েছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

শামসুল কবির মাষ্টার মুন্সিগঞ্জ ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফয়সাল বিপ্লবের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত। সে সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। দীর্ঘ বছর ধরে তিনি শহরের মানিকপুর এলাকায় বসবাস করেন।

প্রসঙ্গত, গেল ৪ আগস্ট সকাল পৌনে দশটার দিকে মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপারমার্কেট সংলগ্ন পাতাল মার্কেটের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী ও কয়েকজন অভিভাবক প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে জড়ো হন। এর একটু পাশে ২০-৩০ জন নেতাকর্মী নিয়ে সুপার মার্কেট সংলগ্ন সনি র‌্যাংসের শোরুমের সামনে অবস্থান নেন শামসুল কবির মাষ্টার। শিক্ষার্থীদের জড়ো হতে দেখেই কবির মাষ্টার লোকজন নিয়ে তেরে আসেন এবং তাদের চলে যেতে শাসাতে থাকেন। এসময় সেই দৃশ্য গণমাধ্যমকর্মীরা ধারণ করতে থাকলে তাদেরও সরে যেতে হুমকি দেন এই নেতা।

একপর্যায়ে কবির মাষ্টারের নির্দেশে জড়ো হওয়া আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ২০-৩০ জন নেতাকর্মী লোহার পাইপ, স্ট্যাম্প নিয়ে হামলে পরে শিক্ষার্থীদের উপর। এসময় সড়কে ফেলে বেধম পেটানো হয় তাদের। কয়েকজন আত্মরক্ষার্থে দৌড়ে পাশের মার্কেটের ভেতর চলে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তাদের জামাকাপড় টেনেহিচড়ে পেটানো হয়। ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই ছিলেন নারী। অনুরোধ করেও রেহাই পায়নি কেউ।

সুপারমার্কেটের দ্বিতীয় তলা থেকে গোপনে পুরো দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচারের সময় আমার বিক্রমপুরের সম্পাদক শিহাব আহমেদকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়ে মারা হয়। সেটি নিচে ঔষধের দোকানের সামনে বিস্ফোরিত হয়। পরে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী উপরে যেখানে সাংবাদিকরা অবস্থান করছিলেন সেখানে এসে ‘সাংবাদিক শিহাব কই?’ ‘ও কোথায়?’ বলে খুঁজতে থাকেন। পরে তাকে না পেয়ে এনটিভির জেলা প্রতিনিধি মইনউদ্দিন সুমনকে ক্রিকেট খেলায় ব্যবহৃত স্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়ক পেটান তারা।

এরপর শিক্ষার্থীদের উপর হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী শহরের দিকে ছুটে আসেন। তারা আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ওইদিন গুলি-ককটেল-মৃত্যুর মধ্যেও টানা ৮ ঘন্টা সড়কের দখলে ছিলেন শিক্ষার্থীরা।

৪ আগস্ট সকাল থেকে জেলা সদরের চরাঞ্চল থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, তার পুত্র সাবেক সংসদ সদস্য ফয়সাল বিপ্লব ও তার স্ত্রী মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র চৌধুরী ফাহরিয়া আফরিনের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার জন্য অস্ত্র-ককটেল নিয়ে শহরে প্রবেশ করেন ২-৩ হাজার দলীয় নেতাকর্মী ও অনুসারী। আগেরদিনই তারা মোবাইল ফোন ও সাক্ষাৎয়ে এই নির্দেশ পান।

৪ আগস্ট দফায় দফায় হামলা-পাল্টা হামলা চলে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত। আর পুরো শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় সন্ধ্যা ৬ টায়। ওইদিনের ঘটনায় ৩ জন নিহত ব্যক্তির নাম-পরিচয় পাওয়া যায়। এছাড়া অন্তত ২৫ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হন দেড় শতাধিক।

নিহতের ঘটনায় নির্দেশদাতা ও ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানা গেছে।

error: দুঃখিত!