২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | সকাল ৭:১৭
চীন থেকে আসছে পদ্মা সেতুর মালামালের সর্বশেষ চালান
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১৫ মে, ২০২০, আরাফাত রায়হান সাকিব (আমার বিক্রমপুর)

সময়ের সাথে এগিয়ে চলেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মানযজ্ঞ। এর ধারাবাহিকতায় অনেকটা শেষের দিকে এগুচ্ছে সেতুর নির্মান কাজ।

করোনা পরিস্থিতির কারণে চীনে প্রায় ২মাসের মত পদ্মা সেতুর স্প্যান এর মালামাল তৈরির কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। তবে পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় ও উৎপাদন শেষে এবার চীন থেকে আসছে পদ্মা সেতুর স্প্যানের অর্থাৎ মূল সেতু তৈরির প্রয়োজনীয় মালামালের সর্বশেষ চালান।

চীনের শিনহোয়াংদাও বন্দর হতে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৫টা ( চাইনিজ সময়সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা ) বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে সেতুর অবশিষ্ট মালামাল বহনকারী জাহাজ “এমভি কং সিউ সং”।

আন্তজার্তিক কসকো শিপিং লাইন সেতুর সর্বশেষ মালামাল পরিবহণের দায়িত্বে নিয়োজিত আছে। এ মালামাল বাংলাদেশে পৌছালে সেতুর সকল মালামাল বাংলাদেশে আনা সম্পূর্ণ হবে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মোঃ আব্দুল কাদের।

তিনি জানান, সেতুর সর্বশেষ এ মালামাল সমূহ ২০২০ এর মার্চের মধ্যে বাংলাদেশে আনার লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে চলছিল। কিন্তু চীনের উহানে ভয়ানক করোনা ভাইরাস এর পার্দুভাব হওয়ায় জানুয়ারী ও ফেব্রয়ারী মাসে স্প্যান এর মালামাল তৈরির কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। এপ্রিল এর শেষের দিক থেকে পুনরায় ফ্যাক্টরি খুললে মে মাসের শেষ দিকে, স্প্যানগুলোর কম্পোনেন্ট তৈরি কাজ শেষ হয়। এম ভি কং সিউ সং জাহাজে সেতুর ১৮০ টি ট্রাস কম্পোনেন্টসহ ২০৪১ টি স্টীলের তৈরি বিভিন্ন মালামাল রয়েছে। জাহাজটি সাংহাই ও সিঙ্গাপুর পোর্টে মোট ০৭ দিন বিরতি (মালামাল লোড/আনলোড) দিয়ে আগামী জুন মাসের ০৭ তারিখ চট্রগ্রাম বন্দরে (ঊঞঅ) পৌছাবে। চট্রগাম বন্দরে কাস্টমস শুল্ক পরিশোধ ও ক্লিয়ারেন্স এর পর মংলা হয়ে ১৫ জুন ২০২০ এটি মাওয়া এসে পৌছাবে।

এই মালামল গুলোই পদ্মা মূল সেতু প্রয়োজনীয় মালামালের শেষ চালান । তবে এরপরও অপটিক্যাল ফাইবার, লাইট সহ বেশ কিছু ছোট সরঞ্জাম আসবে।

তিনি আরো জানান, পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল সেতুতে মোট ৪১ টি স্প্যান রয়েছে। প্রতিটি স্প্যানে ১১০-১১৮ টি স্টীলের ট্রাস কম্পোনেন্ট (কর্ড, মেম্বার বা নোড) এর সমন্বয়ে তৈরি একটি ওয়ারেন টাইপ ট্রাস। মূল সেতুর ৪১ টি স্প্যানে সর্বমোট ৪৫৮৭ স্টীলের ট্রাস কম্পোনেন্ট প্রয়োজন হবে। এই ৪৫৮৭ টি স্টীলের ট্রাস কম্পোনেন্ট মূল সেতুর স্প্যান (স্কেলিটন) তৈরি করবে। তাছাড়াও রেলওয়ের জন্য ১৩১২ টি স্টীলের স্ট্রিনজার বিম, ২৬২৪ টি স্টীলের রেলওয়ে সাপোর্ট ব্রাকেট, ১৩১২ টি স্টীলের রেলওয়ে স্ল্যাব ব্রাকেট, ৮২১৪ টি গ্যান্ট্রি মেইনটেনান্স ব্রাকেট, ১৩৪৬ টি গ্যাস পাইপ লাইন ব্রাকেট, ৯৩০ টি হ্যাচ কভার, ৯১০ টি এ্যাকসেস ল্যাডার, ৪৮ টি ট্রান্সভার্স শেয়ার কি, ২১ টি গ্যাস পাইপ লাইন লুপ, ১৩১২ টি ওভারহেড ক্রেন স্টীলের গার্ডার ও ১টি এর প্রয়োজন হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে বসানো হয়েছে সেতুর ২৯টি স্প্যান। সর্বশেষ গত ৪ই মে সেতুতে ২৯তম স্প্যান বসানো হয়। প্রতিটি স্পেনের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। ৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে।

এর মধ্যে সবকটি পিলার এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।

দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর আগামী ২০২১ সালেই খুলে দেয়া হবে।

error: দুঃখিত!