৩০ জানুয়ারি, ২০১৯ইং
শিহাব আহমেদঃ অল্প পরিশ্রমে বেশি টাকা কামানোর প্রবণতা থেকে ইউরোপে যাওয়ার ঝোক বেড়েছে বাংলাদেশে। সেই স্রোতে গা ভাসিয়েছে মুন্সিগঞ্জের তরুণরাও। তাদের মধ্যে একজন কথা বলেছেন এই প্রতিবেদকের সাথে।
তিনি স্বীকার করেছেন- ‘বাংলাদেশ থেকে কাজের ভিসায় ইউরোপে যাওয়ার বৈধ উপায় নেই’
ইউরোপে না যেতে পেরে এবং তার সাথে ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটনার পর তিনি বিষয়টি নিয়ে এতটাই হীনম্মন্যতায় ভোগেন যে, তিনি এই প্রতিবেদককে প্রতিবেদনে তার নাম-ঠিকানা প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এই ভিকটিম বলেন, ‘২০১২ সালের শেষের দিকে আমার বাবা আমার প্রতিবেশী এক দালালের কাছ থেকে ১২ লক্ষ টাকায় এক খন্ড জমি কিনেন। টাকা নেয়ার পরে আমার বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে শুনে তিনি আমার বাবাকে জমি না লিখে দিয়ে ইউরোপে পাঠানোর কথা বলেন। আমার বাবা ও আমি এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই। কারন ২১ বছর বয়সে ইউরোপ ছিলো আমার কাছে স্বপ্নের মতো। এরপর তিনি আমাকে প্রথম দফায় ভারতে পাঠান ‘পাসপোর্ট ভারি করা’র প্রয়োজন আছে বলে। তিনি আমাকে বোঝাতে সক্ষম হন যেহেতু বাংলাদেশে বেলজিয়ামের কোন দূতাবাস বা ভিসা সেন্টার নেই তাই আমাকে ভারতে যেয়ে ভারতে অবস্থিত দূতাবাসে দাড়িয়ে ভিসা গ্রহন করতে হবে। আমি তার কথামত দুই দফায় ভারতে যাই।
প্রতারিত এই তরুণ আরও বলেন, প্রথম দফায় আমার সাথে অপ্রত্যাশিত তেমন কিছু ঘটেনি। দ্বিতীয় দফায় আমি ভারতে যাওয়ার পরে আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়ের অভিজ্ঞতা হয়। বাংলাদেশের সেই দালাল যে আমার কাছ থেকে ইতিমধ্যে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে মুন্সিগঞ্জের রামপাল ইউনিয়নের দালালপাড়া, দেওসার এবং হাতিমাড়া এলাকার আরও ৪ জনকে আমার মত ফুসলিয়ে ভারতে এনেছে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতে দু তিন দিন থাকার পরে বাংলাদেশী দালাল আমাদের ফোন করে ভারতে তার প্রতিনিধির কাছে আমাদের পাসপোর্ট ও সাথে থাকা সকল টাকা-পয়সা জমা দিতে বাধ্য করে। আমরা বাধ্য হয়ে সবকিছু দিয়ে দিই। এরপর তার কোন খোজ পাচ্ছিলাম না। এদিকে হোটেল থেকে আমাদের বিল পরিষোধের জন্য চাপ দিচ্ছিলো। হঠাৎ করে আমরা রাস্তায় ভারতীয় সেই দালালের একজন সহযোগী কে দেখতে পাই। তাকে আমরা হোটেল রুমে আটকে রেখে কৌশলে আমাদের পাসপোর্ট উদ্ধার করি। এরপরে দেশ থেকে টানা এনে আমি সহ আর একজন বাংলাদেশে ফিরে আসি।
কিন্তু বাকি ৩ জন ওদের কথায় ভারতে থেকে যায়। কিছুদিন পরে দেশে ফিরে আসে এবং দালালের প্রলোভনে পরে আবারও ভারতে যায়। এরপর ভারতের পুলিশ ঐ দালালকে আটক করলে এই ৩ জনও আটক হয় পুলিশের হাতে। বর্তমানে জ্বেল খেটে তারা বাংলাদেশে হতাশ হয়ে জীবন কাটাচ্ছে। আমি এরকম আরও ১০ জনের কথা জানি। যারা মুন্সিগঞ্জ থেকে ইউরোপে যাওয়ার আশায় প্রতারিত হয়েছে।’
ভিকটিম এর বর্ণনার কিছু অংশ ভিডিওতেঃ
জীবনের তীক্ত অভিজ্ঞতার কথা ভুলে গিয়ে বাংলাদেশেই এখন ব্যাবসা করছেন এই ভুক্তভোগী। তিনি বলছেন, ‘জেনে শুনে অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়ার কথা ভাবাটাই বোকামি।
মুন্সিগঞ্জের তরুণদের মধ্যে অবৈধ উপায়ে ঝুকি নিয়ে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বেশি কেন এবং যারা ইউরোপে যেতে চাচ্ছে তাদের জন্য পরামর্শ কি এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় নিরাপদ অভিবাসন আন্দোলনের সাথে জড়িত বেসরকারি সংস্থা অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম-ওকাপের মুন্সিগঞ্জ মাঠ কর্মকর্তা জনাব ইউজিন ম্রং এর কাছে।
তিনি বলছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে কাজের জন্য যাওয়ার বৈধ কোন উপায় নেই জেনেও মুন্সিগঞ্জের তরুণরা ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করছে। মূলত আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ১৫ বছর বয়স থেকেই মুন্সিগঞ্জের তরুণরা বিভিন্ন দেশে শ্রমিক হিসেবে যাওয়ার জন্য খোজখবর নিতে শুরু করে। এর মূল কারন হচ্ছে কর্মসংস্থানের অভাব।’
মি. ইউজিন ম্রং এর সাথে আলাপের কিছু অংশ ভিডিওতেঃ