মুন্সিগঞ্জ, ২২ জুলাই, ২০২০, গজারিয়া প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া ইউনিয়নের চৌদ্দকাহনিয়া গ্রামে শিমু আক্তার (১৮) নামে এক গৃহবধূ ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করছে। তবে নিহতের স্বজনদের দাবি সুপরিকল্পিতভাবে শিমুকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, এক বছর আগে পারিবারিকভাবে বাউশিয়া ইউনিয়নের চৌদ্দকাহনিয়া গ্রামের রফিক বেপারীর সৌদি আরব প্রবাসী ছেলে আরিফ হোসেন (২৮) এর সাথে একই ইউনিয়নের বাউশিয়া বড়কান্দি (শান্তি নগর) গ্রামের আলাউদ্দিনের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে শিমু আক্তার (১৮)’র বিয়ে হয়। বিয়ের তিন মাস পর সৌদি আরব চলে যান আরিফ তারপর থেকে স্বাভাবিকভাবেই শ্বশুরবাড়ি এবং বাবার বাড়িতে যাওয়া আশা করত শিমু। সর্বশেষ দুইদিন আগে বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়িতে এসেছিল সে।
এদিকে মঙ্গলবার (২১ জুলাই) সকালে বসত ঘরের আড়ার সাথে ওড়না দিয়ে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় শিমুর ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান দেবর সজিব হোসেন। বিষয়টি সাথে সাথে সে তার মা (আসফন বেগম) ও প্রতিবেশীদের জানালে তারা এসে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে শিমুর লাশ মাটিতে নামায়।
এদিকে ঘটনাকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে রহস্যের। স্থানীয়রা জানায় লাশ ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকলেও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির গায়ে যে আলামত থাকে তা ছিল না শিমুর এমনকি তার গলায়ও ফাঁস দেওয়ার দাগ ছিল না।
প্রতিবেশী আয়েশা বেগম জানান, হৈ চৈ শুনে দ্রুত রফিক বেপারীর বাড়িতে ছুটে যান তারা। সেখানে গিয়ে তারা গৃহবধূ শিমুকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তবে তার জিব বের হয়ে থাকা বা চোখ বড় হয়ে যাওয়া এমন কিছু তাদের চোখে পড়েনি।
শিমুর মা শিল্পী বেগম জানান, বিয়ের পর থেকে শশুর রফিক বেপারী অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিল, বিষয়টি শিমুর স্বামী আরিফও জানে। শ্বশুরের অনৈতিক প্রস্তাব দেয়ার কথাটি শিমু তার বাবা-মাকে জানালে তার উপর ক্ষিপ্ত ছিল শশুর রফিক বেপারী। তার দাবি রফিক বেপারী পরিকল্পিতভাবে তার মেয়েকে হত্যা করেছে।
শিমুর বাবা আলাউদ্দিন জানান, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে আর পরিকল্পিতভাবে সেটাকে ফাঁসি বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, যে উচ্চতায় ফাঁস লাগানো হয়েছে সেখান থেকে চাইলে যে কেউ বাঁচতে পারবে। ঘরে আড়ার বরাবর নিচে খাটের অবস্থান থাকায় একজন মানুষ সেখানে পা দিয়ে তার জীবন বাঁচাতে পারবে। তার মেয়ের গায়ে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই, গলায় ফাঁসির দাগও নেই এতে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে অভিযুক্ত শ্বশুর রফিক বেপারীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, মেয়েটির নৈতিক চরিত্র ভালো ছিলোনা সে পরকীয়ায় আসক্ত থাকতে পারে বা অন্য কোন কারণে সে নিজেই ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
গজারিয়া থানার ওসি ইকবাল হোসেন জানান, ঘটনাটি স্পর্শকাতর সেজন্য যথেষ্ট সতর্ক তারা, ময়নাতদন্ত ছাড়া নিশ্চিত হয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। লাশ পুলিশের হেফাজতে রয়েছে, নিহতের বাবা আলাউদ্দিন বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।