১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শনিবার | রাত ৩:৫৪
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
একুশে পদক পেলেন মুন্সিগঞ্জের শিমুল ইউসুফ
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

শিল্পকলা (অভিনয়) ক্যাটাগরিতে ২০২৩ সালের একুশে পদক পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার মেয়ে শিমুল ইউসুফ।

গতকাল রোববার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের এ পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করে।

শিমুল ইউসুফের পৈতৃক বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার সমাষপুর গ্রামে। চল্লিশ দশকেরও বেশি সময় ধরে সংস্কৃতিচর্চার সঙ্গে জড়িত তিনি। সংগঠক, কণ্ঠশিল্পী, অভিনয়শিল্পী, নির্দেশক, ডিজাইনার হিসেবেও তিনি পরিচিত।

শিমুল পাচঁ বছর বয়স থেকে গান শুরু করেন। রেডিও এবং টেলিভিশনে গান পরিবেশন করতেন শিমুল। তিনি ওস্তাদ হেলাল উদ্দিন, পি সি গোমেজ, আলতাপ মাহমুদ এবং আব্দুল লতিফ থেকে শাস্ত্রীয় এবং বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত গানের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

১৯৬২ সালে মাত্র ৫ বছর বয়সে তিনি শিশুশিল্পী হিসাবে মঞ্চে অভিনয় ও সঙ্গীত জীবন শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে শিশুশিল্পী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনের সম্প্রচারের প্রথম দিন শিশুশিল্পী হিসাবে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা থিয়েটারে যোগ দেন এবং এ পর্যন্ত তিনি ঢাকা থিয়েটারের ৩৪টি নাটকে অভিনয়শিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক, কোরিওগ্রাফার এবং পোশাক পরিকল্পনা, সহযোগী নির্দেশক ও পাণ্ডুলিপি সম্পাদনার কাজ করেছেন।

১৯৮১ সালে গ্রাম থিয়েটার আন্দোলনকে সংগঠিত করতে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। শৈশব থেকে শিমুল ইউসুফ উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত এবং গণসঙ্গীতে ওস্তাদ হেলাল উদ্দিন, পিসি গোমেজ, ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ, শহীদ আলতাফ মাহমুদ, শেখ লুৎফর রহমান, আব্দুল লতিফ, ওস্তাদ ইমামউদ্দীন এবং সুধীন দাসের কাছে দীর্ঘদিন তালিম নেন। তিনি আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যানিকেতন থেকে সঙ্গীতে ডিপ্লোমা লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক বিজ্ঞানে ডিগ্রি নিয়েছেন।

রেডিও, টেলিভিশন ও মঞ্চের শিল্পী শিমুল ইউসুফ ১৯৭৪ সালে ঢাকা থিয়েটারে যোগদানের পর থেকে পুরোপুরি মঞ্চে নিজেকে নিয়োজিত করেন। পাশাপাশি শুদ্ধ সঙ্গীতচর্চা অব্যাহত রাখেন। দীর্ঘ পাঁচ দশকের জীবনে শিমুল ইউসুফ দুই সহস্রাধিক নজরুল সঙ্গীত, গণসঙ্গীত- রেডিও, টেলিভিশন ও মঞ্চে পরিবেশন করেন এবং মঞ্চের ৩৩টি নাটকের ষোল শতাধিক মঞ্চায়নে সফল অভিনয় করেন।

তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো- মুনতাসীর, কসাই, চর কাঁকড়া, শকুন্তলা, ফণীমনসা, কিত্তনখোলা, কেরামতমঙ্গল, হাতহদাই, চাকা, একাত্তরের পালা, যৈবতীকন্যার মন, মার্চেন্ট অব ভেনিস, বনপাংশুল, প্রাচ্য, বিনোদিনী, ধাবমান, নষ্টনীড়, দ্য টেম্পেস্ট সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। তার একক অভিনয়ের নাটক ‘বিনোদিনী’ বিশ্বনাট্য অলিম্পিকস ও আন্তর্জাতিক মনোড্রামা উৎসবে মঞ্চস্থ হয় এবং ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।

রুবাইয়াৎ আহমেদের অনুবাদ ও রূপান্তরে এবং নাসির উদ্দীন ইউসুফের নির্দেশনায় ইংল্যান্ডের বিখ্যাত শেক্সপিয়রস গ্লোব থিয়েটারে মঞ্চায়িত বাংলা ভাষার প্রথম নাটক ‘দ্য টেম্পেস্ট’ এ প্রথম বাঙালি অভিনেত্রী হিসেবে অভিনয় করেছেন শিমুল।

বাংলা অভিনয়রীতি বিকাশে এবং শুদ্ধ সঙ্গীতচর্চায় তার অবদানের জন্য কবি বেগম সুফিয়া কামাল ও নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন কর্তৃক তিনি ‘মঞ্চকুসুম’ উপাধিতে ভূষিত হন। টেলিভিশন নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ঘরোয়া, পোস্টমাস্টার, গ্রন্থিকগণ কহে, নির্বাসন।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কারপ্রাপ্ত ১৬টি চলচ্চিত্রে তিনি সঙ্গীত পরিচালনা ও কণ্ঠ দান করেন। উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র- ‘আগামী’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘ঘুড্ডি’, ‘গেরিলা’ ইত্যাদি। গণসঙ্গীত, নজরুলসঙ্গীত এবং লালনের গান নিয়ে শিমূল ইউসুফের ৫টি একক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে।

আগের যত পুরস্কার

রাষ্ট্রপতি পদক (১৯৬৫ সালে পাকিস্কানের শিশুশিল্পী হিসাবে), লোকনাট্যদল পদক, মোহাম্মদ জাকারিয়া পদক, রুদ্র পদক, নুরুন্নাহার সামাদ পদক, আরণ্যক দীপুস্মৃতি পদক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার পদক, কালচারাল রিপোর্টার্স ইউনিটি পদক, মানবজমিন পাঠকজরিপ, কচিকাচা মেলার আজীবন সম্মাননা, সেলিম আল দীন লোকনাট্য পদক, অনন্যা শীর্ষ ১০ পুরস্কার (২০০৩), শ্রেষ্ঠ পোষাক ও সাজসজ্জা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১১ (গেরিলা),  শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক বিভাগে বাচসাস পুরস্কার ২০১১ (গেরিলা), শ্রেষ্ঠ নারী কন্ঠশিল্পী বিভাগে বাচসাস পুরস্কার ২০১১ (গেরিলা)। 

 

error: দুঃখিত!