মুন্সিগঞ্জ, ১৭ এপ্রিল, ২০২০, আব্দুস সালাম (আমার বিক্রমপুর)
৫ দিন ধরে মায়ের লাশ পড়ে আছে কুর্মিটোলায়। আর সন্তানরা বাড়িতে লকডাউনে। সন্তানেরা জানে না তাদের মা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কিনা।
এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিসিক এলাকা-সংলগ্ন চৌধুরীবাড়ির সন্তানেরা। মায়ের লাশ রেখে দুই ছেলে ও তিন মেয়ে বাড়িতে অবস্থান করছে। এছাড়া তাদের ছোট ভাই মালয়েশিয়া প্রবাসী।
চৌধুরীবাড়ীর মৃত ছিদ্দিক ভান্ডারীর ছেলে মো: নুরে আলম জামানের মা নুরুন্নাহারকে (৬৮) পাঁচ দিন আগে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান তার ছেলে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসার আগেই মায়ের মৃত্যু হয়।
মরহুমার বড় ছেলে নুরুজ্জামান জানান, ২৪ ঘন্টার মধ্যে করোনা পজেটিভ বা নেগেটিভ রেজাল্ট পাওয়ার কথা। কিন্তু ৫ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও আমার মায়ের লাশও তারা দেয়নি। আমার মায়ের রিপোর্টও জানায়নি কুর্মিটোলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে করোনায় মারা গেছে সন্দেহ করে স্থানীয় লোকজন গিয়ে বাড়িটি লকডাউন করে রেখেছে। অথচ ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার গোলাম মাওলাও নিশ্চিত করেছেন যে মৃত নারী জ্বর, ঠাণ্ডা, শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি ও হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন।
এ বিষয় স্থানীয় খালেক চৌধুরী জানান, ৫ দিন আগে নুরে আলম জামান তার মাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে যান। কিন্তু মাকে নিয়ে আর বাড়িতে আসেননি। আমরা শুনতে পেরেছি যে, তার মা নুরুন্নাহার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এই করোনার কারণেই ছেলে মেয়েদের কেউই লাশ আনতে আগ্রহী নন।
এ বিষয়ে ওয়ার্ড মেম্বার গোলাম মাওলা জানান, পরিবারের সাথে আমার কথা হয়েছিল ৫ দিন আগে তার মাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে যায়। এর পরে কী হয়েছে আমি জানি না। তবে পরিবারটি খুবই অভাবি।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারুক আহাম্মেদ বলেন, আমাদের পক্ষে তো আর লাশ এনে দেয়া সম্ভব নয়। এখন ওই বাড়িটি লকডাউন অবস্থায়ই থাকা উচিত। পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। বিষয়টি জেনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে বড় ছেলে নুরুজ্জামান (৪৮) জানান, ৭ দিন ধরে জ্বর, ঠাণ্ডা ও শ্বাস কষ্ট ছিল আমার মায়ের। এই অবস্থায় যোগিনিঘাটে আত্মীয়ার বাড়িতে ৩ দিন বেড়ান। পরে আবার বাড়িতে আসেন। বাড়িতে ডা: হুমায়ুনের চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। অবস্থার অবনতি হলে ১২ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। ১৩ এপ্রিল আলদি ডা: প্রফুল্লকে দেখিয়ে পুনরায় সদর হাসপাতালে আনা হয়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঢাকা বক্ষব্যাধি হাসপাতালে পাঠায়। পরে তারা দেখে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
তিনি বলেন, হাসপাতালে যাওয়ার পর তিন-চারবার পাতলা পায়খানা হয়েছে। শ্বাসকষ্ট ও ঠাণ্ডা সব লক্ষণই ছিল। পরে চিকিৎসা করার আগে আমার মা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরে আমার মার লাশ তারা হিমাগারে রেখে দেয়। আমাদের বলে দেয়া হয় যে করোনা পজেটিভ হলে লাশ দেবে না, আর নেগেটিভ হলে লাশ ফেরত দেবে।
তিনি বলেন, ১৩ এপ্রিল থেকে আজ ১৭ এপ্রিল এই রোগীর কোনো রিপোর্ট তার কাছে আসেনি এবং কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে কোনো ফোন এ পর্যন্ত আসেনি। আমি নিজে নিজেই লকডাউনে আছি। এলাকার লোকজনও আমাদেরকে লকডাউনে রেখেছে।
পাঁচ দিন ধরে মায়ের লাশ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পড়ে আছে। পরিবারের লোকজন অপেক্ষায় আছে কখন কুর্মিটোলা থেকে ফোন আসবে যে তোমার মায়ের করোনা রিপোর্ট নেগিটিভ। কিন্তু ৫ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো রিপোর্ট না আসায় পরিবারটি হতাশ।
মায়ের লাশ কি তারা দেবে না? কেন দেবে না? এমন হাজারো প্রশ্ন এখন মৃত্যু নুরুন্নাহারের ছেলে ও মেয়ের পরিবারের মাঝে।