মুন্সিগঞ্জ ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
স্থানীয় দালালদের হাত ধরে লিবিয়ায় গিয়ে টানা ৬০ দিন ধরে জীবন-মৃত্যুর সাথে লড়াই করে চলেছে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের জাজিরা গ্রামের মোঃ হোসেন বেপারীর ছেলে নয়ন বেপারী (২১)। যার পাসপোর্ট নং- BW0350201
লিবিয়া থেকে রেকর্ড করে পাঠানো একটি ভিডিওতে তার করুণ অবস্থার দৃশ্য দেখা গেছে।
লিবিয়ায় একটি অপহরণ চক্রের কাছে বর্তমানে নয়ন আটক আছে। সেখানে তাকে একটি রুমে আটকে রেখে বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এমনকি নগদ টাকা দেয়ার জন্য পরিবারকে চাপ সৃষ্টি করতে নয়নকে মেরে সেই ভিডিও পাঠানো হচ্ছে। মুক্তিপণ হিসেবে ৮ লক্ষ টাকা দিলে নয়নকে ছেড়ে দেয়া হবে বলে অপহরণকারীরা জানিয়েছে।
এই অপহরণকারীদের সাথে মুন্সিগঞ্জের ২ ‘দালাল’ (মানবপাচারকারী) জড়িত রয়েছে।
এরা হচ্ছেন, মুন্সিগঞ্জের আধারা ইউনিয়নের জাজিরা গ্রামের মৃত সুলতান শিকদারের ছেলে হায়াত উল্লাহ শিকদার ও একই গ্রামের মৃত মজিবর মালের ছেলে বিপু।
এরা স্থানীয়ভাবে নিজেদের আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। সেই পরিচয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ তারা বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে বিভিন্নজনের সাথে প্রতারণা করে চলেছেন। এবং প্রতারণার পরে তাদের দাপটের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারছেন না।
এই চক্রের বিরুদ্ধে ঢাকার পল্টন মডেল থানায় চলতি মাসের ০৪ তারিখে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১২ এর ৭,৮,১০ ধারায় একটি মামলাও হয়েছে। তবে পুলিশ আসামী ধরতে দৃশ্যত কোন ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো বাদীকে স্থানীয় রাজনীতির প্রভাব দেখিয়ে অব্যাহতভাবে ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। নয়নের ভাই তাদের ভয়ে এলাকায় থাকতে পারছেন না।
নয়নের বড় ভাই মেহেদী হাসান সুমন ‘আমার বিক্রমপুর’ কে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ‘চলতি বছরের মে মাসে স্থানীয় দুই দালালের মাধ্যমে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা চুক্তিতে লিবিয়ায় তেলের কোম্পানিতে ৪০-৫০ হাজার টাকা বেতনে চাকরির প্রলোভনে পরিবারের সম্মতিতে বিদেশে যান নয়ন। বিদেশে যাওয়ার ৪-৫ দিন পরেই তার সাথে কথা অনুযায়ী যা হওয়ার কথা ছিলো তার বিপরীত ঘটতে থাকে। তাকে একটি রুমে বন্দি করা হয়। সেখানে শুধুমাত্র তাকে বাচিয়ে রাখার জন্য মাঝে মধ্যে কিছু খাবার দেয়া হতো।’
নয়নের ভাই মি. মেহেদী আরও জানান, ‘আমার ২১ বছর বয়সী ভাইকে হাত-পা বেধে উল্টো করে মেরে সেই ভিডিও দেখিয়ে আমাদের কাছে টাকা চাওয়া হচ্ছে। আমি আমার ভাইয়ের কান্না সহ্য করতে না পেরে স্থানীয় সেই দুই দালাল কে জানাই। তাদের শর্তমতে আমি কোনমতে ৩ লক্ষ টাকা ম্যানেজ করে বাংলাদেশী ‘মানবপাচারকারী’ মোহাম্মদপুর এর গুলশান আরা বেগম যিনি রোজ বেল্ট ইন্টারন্যাশনাল (আর এল-৮১৩) এর স্বত্তাধিকারী তাকে দেয়ার পরেও সে আমার ভাইকে উদ্ধার করে দেয়ার কথা বলে আরও ৬ লক্ষ টাকা না দিলে আমার ভাইকে মেরে ফেলা হবে বলে আমাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে।
নয়ন জানান, ‘আমি ঘুমোতে পারছি না। কোন ভাইয়ের পক্ষে এরকম দৃশ্য সহ্য করা সহজ ব্যাপার নয়। আমার পরিবারের অবস্থা আরও খারাপ। আমরা কারও কাছে সাহায্য চেয়ে পাচ্ছি না। পুলিশ যদি আসামীদের ধরে চাপ প্রয়োগ করে আমাদের মনে হচ্ছে আমার ভাইকে জীবিত দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’