প্রায় দুই দশক ধরে ফেরারী ভারতের অপরাধ জগতের অন্যতম নিয়ন্ত্রক ছোটা রাজন ধরা পড়েছেন ইন্দোনেশিয়ার বালিতে।
অস্ট্রেলিয়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে নামার পরপরই রোববার তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে ভারতের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) পরিচালক অনীল সিনহা টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে বলেছেন, “সিবিআইয়ের অনুরোধে বালি পুলিশ রাজনকে গ্রেপ্তার করে।”
৫৫ বছর বয়সী এই ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন’র নাম মোহন কুমার ও রাজেন্দ্র সদাশিব নিখালজি হলেও ছোটা রাজন হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত।
ভারতের গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মুম্বাইয়ের ‘মাফিয়া ডন’ দাউদ ইব্রাহিমের দলেই এক সময় ছিলেন ছোটা রাজন। গুরুর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর দুই দশক আগে বড় রাজন আলাদা দল গড়লে তাতে যুক্ত হন ছোটা রাজন। বড় রাজন মারা পড়লে দলের হাল ধরেন তিনি।
দাউদ ইব্রাহিমের মতো ভারতের চলচ্চিত্র শিল্পের কেন্দ্র বলিউডে ছোটা রাজনের প্রভাবও বিভিন্ন সময় আলোচনায় এসেছে।
দেড় দশক আগে বলিউডি চলচ্চিত্র ‘কোম্পানি’তে বিবেক ওবেরয় এবং ‘বাস্তব’ এ সঞ্জয় দত্তের অভিনীত চরিত্র দুটি ছোটা রাজনেরই জীবন থেকে নেওয়া বলে বলা হয়।
গোয়েন্দারা বলেন, ভারত থেকে পালিয়ে দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান নিয়েও মুম্বাইয়ের অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিলেন ছোটা রাজন। তাকে ধরতে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্টও জারি করা হয়।
ছোটা রাজনকে গ্রেপ্তারে সিবিআই অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিল বলে জানান অনীল সিনহা।
“আমরা অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া কর্তৃপক্ষকে তাদের সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানাই। পরবর্তী তদন্ত ও শনাক্তকরণের কাজ চলছে এবং আইনের অনুযায়ী সব ব্যবস্থাই নেওয়া হবে।”
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংও ইন্দোনেশিয়া সরকার ও ইন্টারপোলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়া পুলিশ বলছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ক্যানবেরা ইন্টারপোল ইন্দোনেশিয়া কর্তৃপক্ষকে সতর্কবার্তা দিয়েছিল।
বালি পুলিশের মুখপাত্র হ্যারি বিনায়ন্ত সাংবাদিকদের বলেন, “ক্যানবেরা পুলিশের কাছ থেকে গতকাল (রোববার) আমরা এক খুনির রেড নোটিসের বিষয়ে অবগত হই। আমরা তাকে বিমানবন্দরেই গ্রেপ্তার করি। আমরা জানতে পেরেছি, এই ব্যক্তি ভারতে ১৫/২০টি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।”
ছোটা রাজনের বিরুদ্ধে ১৭টি হত্যা মামলা ছাড়াও বহু হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে।
তার বিরুদ্ধে আসা অসংখ্য অভিযোগের মধ্যে আছে- চাঁদাবাজি, জোর করে টাকা আদায় করা, হত্যা, চোরাচালান, মাদক ব্যবসা এবং অবৈধ অর্থ সিনেমায় লগ্নি করা।
ছোটা রাজনকে ভারতে পাঠানোর কথা ভাবছে ইন্দোনেশিয়া।
সিডনি থেকে বালি দ্বীপে নেমে নামি একটি রিসোর্টে ওঠার কথা ছিল ছোটা রাজনের। তবে তার আগেই ধরা পড়লেন তিনি।