মুন্সিগঞ্জ, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী পরিষদের নির্বাচনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৯ পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ এবং বাকি ৬ পদে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য ফোরামের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ নির্বাচনের ৩৭০ ভোটারের মধ্যে ৩৬৭ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ মনোনিত প্যানেলের সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিনকে তৃতীয় দফা গনণার পরে ১ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী ঘোষণা করা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ মনোনিত প্যানেলের সভাপতি পদে বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান তাৎক্ষনিক তা প্রত্যাখান করেছেন। এসময় ভোট গনণা কক্ষে হট্টগোল হয়।
প্রথম দফায় গনণায় নির্বাচন কমিশন অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমানের অনুকুলে ১৮১ ভোট ঘোষণা দেন। আর আব্দুল মতিনের ১৮০ ভোট গনণা করা হয়। এসময় অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান এক ভোটে এগিয়ে ছিলেন। তবে আব্দুল মতিনের পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় দফা গনণায় মুজিবুর রহমানের একটি ভোটে নামের উপরে সিল পরে যাওয়ায় ব্যালট বাতিল করায় উভয়ের প্রাপ্ত ভোট টাই হয়ে যায় ১৮০-১৮০।
তৃতীয় দফা গনণায় মুজিবুর রহমানের আরও একটি ভোট বাতিল করায় ফলাফলে আব্দুল মতিনকে ১৮০ ভোট প্রাপ্ত দেখিয়ে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
এই ফলাফলকে ‘নাটক’ আখ্যা দিয়েছেন-অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান। তিনি সঠিকভাবে মূল্যালয়ন করে ফলাফল ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট নাসিমা আক্তার বলেন, প্রথম গনণায় বিজয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলে সামান্য হট্টগোল দেখা দেয়। পরে ব্যালটে সিলের অস্পষ্টতার কারণে সভাপতি পদে দুটি কাউন্ট করা হয়নি। তৃতীয় দফা গনণায় এক ভোটের ব্যবধানে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন জয়ী হয়েছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের অ্যাডভোকেট আবুল হাসান মৃধা ২০০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের অ্যাডভোকেট মো. মাসুদ আলম পান ১৫৫ ভোট।
সহ-সভাপতি পদে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের মোহাম্মদ আনিসুর রহমান ২১৭ ভোট ও মোহাম্মদ ফিরোজ খান ১৯২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের অ্যাডভোকেট মো, কামরুজ্জামান মুকুল ১৮৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের আব্দুল জব্বার জিলু পেয়েছেন ১৭২ ভোট।
কোষাধ্যক্ষ পদে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের আরফান সরকার খোকন ১৮৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান আবুল পেয়েছেন ১৫০ ভোট।
লাইব্রেরি সম্পাদক পদে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের মোহাম্মদ রেজাউল হক ১৫৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের মো. ইকবাল হোসেনের প্রাপ্ত ভোট ১৬৬।
দপ্তর সম্পাদক পদে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের মো. আমানুল্লাহ রিপন ১৮২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের মো. জামাল হোসেন বিপ্লবের প্রাপ্ত ভোট ১৮০। সমাজকল্যাণ ও ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক পদে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের মো. মনিরুল ইসলাম ১২৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের আলমগীর হোসেনের প্রাপ্ত ভোট ১৭২।
মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পদে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের লাইলী আক্তার ২০১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের হাবিবা আক্তার বীথি পেয়েছেন ১৬১ ভোট।
ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের মেহেদী হাসান শাহবাৎ ২৫৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা ১০৩ ভোট পেয়েছেন।
কার্যকরী সদস্য পদে নির্বাচিত চার জনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল পেয়েছেন ২০৭ ভোট, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের শাহিন আলম পেয়েছেন ২০৯ ভোট, মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন ও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাইফ ১৯৮ ভোট পেয়ে যুগ্মভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
ফলাফল ঘোষণা শেষে বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উল্লাস দেখা যায়।
অন্যদিকে সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান বলেন, ভোটারের ইনটেনশনকেই সম্মান জানাতে হবে। ভোটার কাকে ভোট দিয়েছেন সিলেই তা স্পষ্ট। সিল নির্দিষ্ট ঘরে না দিয়ে প্রার্থীর নামে দিয়েছেন, এটা গ্রহণযোগ্য। এই ভোটার শুধু সভাপতি পদে নয়, অন্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও নামের সাথেই সিল দিয়েছেন। অন্য প্রার্থীর ক্ষেত্রে বৈধ ভোট হিসেবে গণ্য, এমনকি সভাপতি পদে প্রথমে বৈধ ঘোষণা করাও হলো। কিন্তু রহস্যজনক কারণে পরে আবার তা বাতিল করা হয়, এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। মুন্সিগঞ্জ আইনজীবী সমিতির ইতিহাসে এটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা।