২৩শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রবিবার | রাত ১১:৪৫
মুন্সিগঞ্জে সরকারি জমিতে নব্য আ. লীগ নেতার ভবন নির্মাণ
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, টংগিবাড়ী প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড় বাজারে সরকারি জমিতে অবৈধভাবে দুই তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।

নব্য আওয়ামী লীগ নেতা মিজান খাঁন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এ ভবন নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, দিঘীরপাড় বাজারের মসজিদ সড়কের পাশের সরকারি জায়গায় তড়ি-ঘড়ি করে দুই তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক সেখানে কাজ করছেন।

ইতোমধ্যে ভবনের মাটির নিচের ভিত্তি স্থাপনের কাজ শেষ হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে মূল ভবন। এখন চলছে ভবনের চারিদিকে দেয়াল নির্মাণের কাজ। তবে ভবনটির ছাদে কংক্রিটের ঢালাই ব্যবহার না করে টিনের চাল দেওয়া হচ্ছে। এ সময় ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে দিঘীরপাড় বাজারের ব্যবসায়ীরা মুখ খুলতে রাজি হননি।

একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, এ বিষয়ে কথা বললে ব্যবসা তো যাবেই, প্রাণও যেতে পারে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিজান খাঁন আগে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির বেগতিক অবস্থা দেখে দল ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেন। নিজ কর্মীদের জন্য অর্থ খরচ করে প্রভাশালী হয়ে ওঠেন তিনি। আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড লাগিয়ে করতে থাকেন বিভিন্ন অপকর্ম। দিঘীরপাড় বাজারে কমপক্ষে সাত-আটটি দোকান আছে তার। এরপর তিনি নতুন করে খাস জমি দখল করে দুই তলা বিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবণ নির্মাণ করছেন। এছাড়াও তার নির্মিত অবৈধ ভবনের পাশে অন্যের নামের লিজের জায়গাও জোর করে দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়রা আরও জানান, মিজান খাঁন পদ্মার শাখার নদী থেকে নিজস্ব খননযন্ত্র (ড্রেজার) দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন। উত্তোলিত বালু জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা কামিয়েছেন। তার ভয়ে অভিযোগ তো দূরের কথা, কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, মিজান খাঁন কৌশল করে টিন দিয়ে ভবনের ছাদ দিচ্ছেন। সুযোগ বুঝে কংক্রিটের ছাদ দিয়ে ফেলবেন। মিজান তার অবৈধ কার্যকলাপ ঢেকে রাখতে দিঘীরপাড় ফাঁড়ির পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে অর্থনৈতিক লেনদেন করেন। বাজারে খাস জমিতে ভবন নির্মাণ হচ্ছে। প্রশাসন জানে, অথচ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের অভিযোগের কথা প্রথমে অস্বীকার করেন মিজান খাঁন। পরে তিনি জানান, জায়গাটি তার। তবে কথার এক পর্যায়ে বলেন, জায়গাটি আসলে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিয়েছেন তিনি। ইজারার জায়গায় দুতলা ভবনটিও তার।

সরকারি জায়গায় কোনো পাকাস্থাপনা নির্মাণ করা যায় কি না, নির্মাণ করার আগে প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছেন কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুতলা স্থাপনাটি খাবারের দোকান হবে। দিঘীরপার বাজারে কিছুদিন পর পরই আগুন লাগে, তাই পাকাস্থাপনা বানানো হয়েছে। এ সময় তিনি সংবাদটি প্রচার না করতে, এই প্রতিবেদককে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন।

দিঘীরপাড় বাজারের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম হালদার জানান, মিজান খাঁনকে লিজের জায়গায় ভবন তুলতে ভূমি অফিস থেকে নিষেধ করা হয়েছে। তবে মিজান খাঁন এগুলো পাত্তা দেননি। শুধু মিজান খাঁন একা নয়, এমন অনেকেই সরকারি জায়গা লিজ নিয়ে বাজারে পাকা ভবন নির্মাণ করছেন। এ বিষয়ে প্রশাসনের শক্ত ভূমিকা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে টংগিবাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উছেন মে জানান, বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হবে। খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে টংগিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসাম্মৎ হাসিনা আক্তার জানান, বেশ কিছুদিন আগে সরকারি জায়গায় ভবন নির্মাণের বিষয়ে মিজান খাঁনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পাই। সে সময় লোক পাঠিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেলে তখন কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। মিজান খাঁন আবারও কাজ শুরু করে থাকলে তার লিজ বাতিল করে দেওয়া হবে। ভবনের ব্যাপারে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

error: দুঃখিত!