মুন্সিগঞ্জ, ১১ এপ্রিল, ২০২২, সদর প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ পঞ্চসার ইউনিয়নে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় জমির মালিক মো. হারুন দেওয়ান গুরুতর আহত হয়েছেন।
গতকাল রোববার দুপুর দেড়টার দিকে ইউনিয়নে পঞ্চসার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যাক্তি পূর্বপরিকল্পিত ভাবে হারুন দেওয়ানের উপর অতর্কিত হামলা চালায়।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান , মো. হারুন দেওয়ানের খরিদসূত্রে জায়গার উপর মিথ্যা নিষেধজ্ঞা জারী করে হয়রানী করে আসছিলো ছায়েদ আলী দেওয়ান, সোহেল দেওয়ান ও শ্যামল দেওয়ানরা। এ জায়গার উপর মিথ্যা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পরে জমির রায় পান মো. হারুন দেওয়ান। বিরোধপূর্ণ জায়গা সম্পত্তি নিয়ে পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদেও সলিশ হয়। সেখানেও রায় হয় হারুনের পক্ষে।
হারুনের পরিবার জানায়, প্রতিপক্ষ ছায়েদ আলী দেওয়ান, সোহেল দেওয়ান, শ্যামল দেওয়ান এসব রায় উপেক্ষা করে ঐ সম্পত্তি (৫ শতাংশ) দখলের পায়তারার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়িত। এরই মধ্যে এই সম্পত্তি এক ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে বিক্রির সিন্ধান্ত নিলে নিজের সম্পত্তি দাবী করে তাঁতে বাঁধা দেন ছায়েদ আলী দেওয়ান ও তার পরিবার।
এরই ধারাবাহিকতায় রোববার দুপুরে জমি জমা বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে ছায়েদ আলী দেওয়ানের নেতৃত্বে তার ছেলে শ্যামল দেওয়ান ও সোহেল দেওয়ান হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে মো. হারুন দেওয়ানকে। এসময় হারুন দেওয়ান দৌড়ে নিজের বাড়িতে আশ্রয় নিলে তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার উপর হামলা চালায়। পরে গুরতর আহত অবস্থায় তাকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ থানায় ৩ জনকে দায়ী করে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন পঞ্চসার ইউনিয়নের পঞ্চসার গ্রামের হযরত আলী দেওয়ানের পুত্র ছায়েদ দেওয়ান, এবং ছায়েদ দেওয়ানের দুই পুত্র সোহেল দেওয়ান (৩৫), শ্যামল দেওয়ান (৪০) ।
জমির মালিক আহত মো. হারুন দেওয়ান জানান, ছায়েদ আলী দেওয়ান আমাকে ও আমার পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমার পরিবারসহ আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি । আমাকে বাড়ি ভিটা থেকে উচ্ছেদ করে দিতে চায়।
আমি মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলতে চাই এঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করুন, নয়ত তারা আবার আমাকে ও আমার পরিবারকে মেরে ফেলবে। ঐ সম্পত্তি যদি তাদের হয় জমির কাগজপত্র দেখাক কাগজপত্রে ঐ সম্পত্তি যদি তারা পায় তাহলে এ ব্যপারে আমার কোন আপত্তি নাই। কিন্তু অযথা পেশী শক্তি মাধ্যমে আমাকে ও আমার পরিবারকে মেরে আমার সম্পত্তি দখল করতে চায় ছায়েদ আলী দেওয়ান ।
এদিকে এবিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক জানান, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
থানায় অভিযোগ করায়, বিদেশে তুলে নিয়ে মারধর
মুন্সিগঞ্জে হামলার ঘটনায় অভিযোগ করা হারুন দেওয়ানের ছোট ভাইকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। অভিযুক্ত শ্যামল দেওয়ানের ভাই সুমন, আরিফ, রাসেলরা এ হামলা করে। এ সময় শহিদুল্লাহকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে মোসলেম নামে আরো একজনও শ্যামলের ভাইদের পিটুনির শিকার হন।
আহত শহিদুল্লাহ দেওয়ান (৪০) বলেন, আমি হার্টের রোগী। গত বছর আমার বাইপাস হয়েছে। সংসারের খরচ যোগাতে বিদেশ থাকি। শুনেছি দেশে আমার ভাই হারুনের সাথে শ্যামলদের ঝগড়া হয়েছে। আমি এ বিষয়ে কারো সাথে কথাও বলিনি। আজকে সন্ধ্যায় হঠাৎ শ্যামলের ভাই সুমন, আরিফ, রাসেলরা আমার দোকানে থেকে তুলে নিয়ে আমাকে বেদম পেটায়। থানায় তোর ভাই কেনো অভিযোগ করলো, আজকে তোকে এখানেই লাশ বানায় ফেলবো বলে পেটাতেই থাকে তারা। আমার ডাক চিৎকারে মানুষজন এগিয়ে আসে। তাদেরকেও তারা মারধর করে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মুসলেম মিয়া জানান, আমরা আমাদের দোকানে বসে ছিলাম। সন্ধ্যার দিকে দেখলাম সুমন রাসেলরা এসেই শহীদুল্লাহকে মারতে মারতে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা দোকান থেকে বেরিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। সে সময় তাকে আগুন নিভানোর স্প্রে দিয়ে বেদমভাবে পেটাতে থাকে। সেই পিটুনিতে আমাদের শরীরে জখম হয়েছে।