প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের চিরায়ত চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থার পাশাপাশি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা চিরায়ত স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতিকে মূলধারার ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ-২০১৯ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা ভেষজ, আয়ুর্বেদিক, ইউনানি এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা উপেক্ষা করতে পারি না এবং মানুষের চিকিৎসার সুবিধার জন্য এগুলোর উন্নয়নের জন্য আরও গুরুত্ব দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে এবং বিদেশে এর চাহিদা তৈরি হয়েছে, পাশাপাশি চিরায়ত ওষুধেরও ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী ভেষজ (হারবাল) চিকিৎসার চাহিদা ব্যাপক উল্লেখ করে তিনি চিরায়ত চিকিৎসার উন্নয়নে নিবিড় গবেষণার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল পর্যায়ে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা সহজতর করতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারি অর্থে কেনা অ্যাম্বুলেন্স ও জিপ বিতরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে তাঁর সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, স্বাস্থ্য খাতের সামগ্রিক উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সব মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে দেশব্যাপী কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে প্রায় ১৪ হাজার ক্লিনিক মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে এবং এখান থেকে ৩০টি মারাত্মক রোগের ওষুধ বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ১৯৯৬-০১ মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্লিনিকগুলো প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এই বনিয়াদি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রসবকালীন সময়ের জন্য দক্ষ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সরকার আইসিটি ব্যবহার করে ‘স্বাস্থ্য বার্তা’ নামে কল সেন্টারের মাধ্যমে টেলি মেডিসিন সেবা চালু করেছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসান।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব স্বাগত বক্তব্য দেন। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের কারণে দেশের গড় আয়ু ৬৬ দশমিক ৮ বছর থেকে বেড়ে ৭২ বছর ছাড়িয়েছে এবং মাতৃমৃত্যুর হার ৩ দশমিক ৪৮ থেকে কমে ১ দশমিক ৭২ (প্রতি হাজারে) এবং শিশু মৃত্যুর হার প্রতি ১০০০-এ ৪১ থেকে কমে ২৪-এ দাঁড়িয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বর্তমানে প্রতিবন্ধীদের জন্য আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী বাজেট থেকে অটিস্টিকসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধীকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। শেখ হাসিনা এ সময় অটিস্টিকদের কল্যাণে তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের অবদানের কথা স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগের ব্যাপক বিস্তার ঘটায় এসব রোগ সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।