পৌর নির্বাচনে নিরাপত্তা রক্ষায় সেনাবাহিনী যোগ হচ্ছে না। তবে বিজিবি সদস্যের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব করছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়।
পুলিশ, আনসার-ভিডিপি ও ব্যাটালিয়ান আনসার সদস্যরা থাকবেন আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায়। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি, র্যাব, এপিবিএন, কোস্টগার্ড ও পুলিশ সদস্যরা থাকবেন।
ভোটের আগে-পরে ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর চার দিন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন রাখতে চায় ইসি। তবে এসব বিষয়ে ইসি প্রস্তাব চূড়ান্ত করবে ১৯ ডিসেম্বরের বৈঠকের পর।
পৌর নির্বাচন নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বৈঠক উপলক্ষে বাহিনীগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের ইসির অনুমোদিত কার্যপত্র পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিব সামসুল আলম।
তিনি বলেনন “সব কিছু পর্যালোচনা করে বৈঠকের পর কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা রক্ষী ও মোবাইল-স্ট্রাইকিং ফোর্স কোন বাহিনীর ক’জন নিয়োজিত থাকবে, তা ইসি সিদ্ধান্ত নেবে। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধমে সংশ্লিষ্টদের কাছে চাহিদা জানিয়ে দেওয়া হবে।”
ইসি কর্মকর্তারা জানান, কেন্দ্রভিত্তিক সাড়ে ৪ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবে; এর বাইরে টহলে ও রিজার্ভে বিভিন্ন বাহিনীর অন্তত ৫-৮ হাজার সদস্য রাখার প্রস্তাব রয়েছে। বৈঠকের পর চূড়ান্ত সংখ্যা নির্ধারণ হবে।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪ পৌরসভায় এক যোগে ভোট হবে। এতে ২০টি দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মেয়র পদে ৯২৩ প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন। সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে লড়াইয়ে রয়েছেন আরও ১১ হাজারের বেশি প্রার্থী।
সাড়ে তিন হাজার ভোটকেন্দ্রের এসব পৌরসভায় ভোটার রয়েছে প্রায় ৭১ লাখ।
ইতোমধ্যে ভোটে থাকা অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ও এনপিপি পৌরসভায় সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেনা মোতায়েন না চাইলেও সিইসির সঙ্গে বৈঠকের পর দলটির নেতা আবদুল মঈন খান বলেছেন, “ভোটারদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে যা দরকার, ইসিকে তা করতে হবে।”
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ পৌর ভোটে সেনা মোতায়েনের দাবি সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন।
তিনি মঙ্গলবার বলেন, “পৌর ভোটে সেনা মোতায়েনের দরকার পড়বে না। যেখানে সেখানে সেনা মোতায়েন করাও যাবে না। এ বাহিনীকে মোতায়েনের বিষয়টি ভেবে চিন্তে করতে হবে। কেউ চাইলে তো হবে না।”
এ টি এম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি ২০১১ সালের ভোটে সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ করেছিল। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে সেনা মোতায়েন ইসি চাইলেও সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি গত বছরের উপজেলা নির্বাচনে অনেকের দাবির পরও সেনা মোতায়েনের পথে এগোয়নি।
ইসির উপ-সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “যেখানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে সেনা মাঠে নামানো হয়নি, সেখানে পৌর ভোটে তাদের নামানোর যুক্তি নেই।”
আইন-শৃঙ্খলা বৈঠকের জন্য প্রস্তুত করা কার্যপত্রে সশস্ত্র বাহিনীর বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। তবে র্যাব ও বিজিবি সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
চার দিনের জন্য নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড মোতায়েন থাকবে। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিরাপত্তা সদস্যদের নেতৃত্বে থাকবেন নির্বাহী হাকিম।
ভোটের দিন ‘স্ট্যাটিক ফোর্স’ হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে র্যাব ও পুলিশের টিম নিয়োগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
সাধারণ ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৯ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) কেন্দ্রে আটজন অস্ত্রসহ পুলিশসহ মোট ২০ জন সদস্য মোতায়েন রাখা হবে।
বিধি লঙ্ঘনের বিচারের জন্য নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নিয়োজিত থাকবে পৌরসভাভিত্তিক।
প্রতি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে মোবাইল ফোর্স হিসেবে ২ হাজার ১৯৩টি, প্রতি তিন ওয়ার্ডের জন্য একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ৭৩১টি, প্রতি পৌরসভায় র্যাবের কমপক্ষে একটি টিম (প্রাপ্যতা সাপেক্ষে), প্রতিটি পৌরসভায় এক প্লাটুন বিজিবি (প্রাপ্যতা ও গুরুত্ব অনুসারে) এবং উপকূলীয় পৌরসভা এক প্লাটুন করে কোস্টগার্ড মোতায়েনের প্রস্তাব করছে ইসি।
আলোচনায় সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারের অভিযান
সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনী এলাকায় চিহ্নিত অপরাধী, চাঁদাবাজ, অস্ত্রবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।