প্রায়ই পত্রিকার পাতায় খবর আসে, পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু। খুবই মর্মান্তিক একটি বিষয় এটি। ২০১৩ সালে সারা বিশ্বে প্রায় চার লাখ লোক মারা গেছে পানিতে ডুবে। এর মধ্যে ৮২ হাজারই পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু। ৯৬ শতাংশ পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের দেশগুলোতে। বাংলাদেশেও প্রতিবছর পানিতে পড়ে শিশু মারা যায়। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও ইনজুরি সার্ভের (বিএইচআইএস) মতে, প্রতিবছর প্রায় ১৭ হাজার শিশু মারা যায় পানিতে ডুবে, এদের বয়স এক থেকে চার বছরের মধ্যে। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ৪৬ শিশু মারা যায়।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। আইসিডিডিআরবির গবেষণামতে, দেশে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার পুকুর রয়েছে, খাল আছে চার হাজার, নদী-নালা বাদেই। তাদের মতে, বেশির ভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে পুকুর ও খালে; এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে; এক থেকে দুই বছরের শিশুদের মধ্যে; সকাল ৯টা ও দুপুরে, বিশেষ করে মা যখন কাজে ব্যস্ত থাকেন।
কেউ পানিতে ডুবে গেলে আতঙ্কিত না হয়ে প্রথমে তাকে তুলে নিয়ে আসুন। ডুবন্ত কাউকে সাহায্য করতে গেলে সাবধান। কারণ, ডুবন্ত ব্যক্তি উদ্ধারকারীকে সজোরে জড়িয়ে ধরে, ফলে দেখা দিতে পারে বিপত্তি। এ জন্য ডুবন্ত ব্যক্তিকে পেছন থেকে হাতসহ জড়িয়ে ধরে পানি থেকে তুলতে পারেন। পানির ওপরে তোলার পর উপুড় করে দেখতে হবে শ্বাস-প্রশ্বাস আছে কি না। ডুবন্ত ব্যক্তির নাম ধরে ডাক দিয়েও দেখা যেতে পারে তিনি সাড়া দেন কি না। যদি শ্বাস-প্রশ্বাস না থাকে বা শ্বাস নিতে কষ্টকর হয়, তাহলে দেখতে হবে শ্বাসনালির কোথাও কিছু আটকে আছে কি না। এ জন্য আঙুল দিয়ে মুখের মধ্যে কাদা-মাটি থাকলে বের করে দিতে হবে। তার পরও শ্বাস না নিলে মাথা টানটান করে ধরে মুখ হাঁ করতে হবে। এবার উদ্ধারকারী ব্যক্তিকে পেট ভরে শ্বাস নিতে হবে।
ডুবন্ত ব্যক্তির মুখের সঙ্গে মুখ এমনভাবে লাগাতে হবে যেন কোনো ফাঁকা না থাকে। শিশু কম বয়সী হলে নাক-মুখ একসঙ্গে মুখের মধ্যে পুড়তে হবে আর বেশি বয়সী হলে নাক হাত দিয়ে চেপে ধরে মুখে মুখ লাগাতে হবে। এ অবস্থায় উদ্ধারকারী জোরে শ্বাস নিয়ে ডুবন্ত ব্যক্তির মুখে মুখ দিতে হবে। দেখতে হবে, শ্বাস দেওয়ার ফলে ডুবন্ত ব্যক্তির পেট ফুলে যায় কি না। যদি পেট ফুলে যায়, তাহলে বোঝা যাবে শ্বাস দেওয়া ঠিকমতো হচ্ছে। ডুবন্ত ব্যক্তি নিজে থেকে শ্বাস না নেওয়া পর্যন্ত এমন চলতে থাকবে।
হাত ধরে বা গলার পাশে উঁচু অংশ, যেটাকে আডম অ্যাপেল বলে, তার পাশে হাত দিয়ে দেখতে হবে নাড়ির স্পন্দন আছে কি না। যদি না থাকে, তাহলে বুকে চাপ দিতে হবে। বুকের বাঁ পাশে হাত রেখে জোরে জোরে চাপ দিতে হবে যেন বুক বেশ খানিকটা দেবে যায়। যদি শিশু এক থেকে দুই বছরের হয়, তাহলে শিশুর বুক দুই হাত দিয়ে ধরে বুড়ো আঙুল দিয়ে চাপ দিতে হবে। এভাবে পাঁচবার চাপ দেওয়ার পর আগের মতো শ্বাস দিতে হবে। এভাবে নাড়ির গতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত চালাতে হবে।
এভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা চলার পাশাপাশি দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শিশু পানিতে থাকার কারণে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। তাই শরীর গরম রাখার জন্য কাপড়চোপড় দিয়ে ভালো করে ঢেকে রাখতে হবে।
অনেকে পানি থেকে তুলেই পেটে চাপ দিয়ে বা শিশুকে উল্টো করে পেটে চাপ দিয়ে পানি বের করার চেষ্টা করেন। এটা ঠিক নয়। এতে শিশু বমি করে দিতে পারে। পরে তা আবার ফুসফুসে প্রবেশ করে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
পানিতে ডোবা প্রতিরোধে সাঁতার শিখুন। ছোট শিশুরা বাথটাবে, পানিভর্তি বালতিতেও ডুবতে পারে। কারণ শুধু নাক-মুখ পানিতে ডুবে গেলে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে শিশু মারা যেতে পারে। তাই সাবধান হতে হবে। বেড়াতে গিয়ে শিশু পুকুর-নদীতে গোসল করতে গিয়ে ডুবতে পারে। তাই শিশুকে একা ছাড়বেন না। নদীপথে যাত্রার সময় লাইফ জ্যাকেট পরিধান করুন। যাদের খিঁচুনি আছে, তারা পুকুরে বা সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে যাবেন না। গ্রামে পুকুর-খালের চারপাশে বেড়া দিয়ে দিন, যেন শিশু পুকুরে যেতে না পারে।