মুন্সিগঞ্জ, ১২ জানুয়ারি, ২০২০, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
নিখোঁজের পাঁচ দিন পর মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে লিখন সরকার (৩৩) নামের আরও এক প্রকৌশলীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
উপজেলার চরসন্তোষপুর বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর পাড় থেকে শনিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
এর আগে শুক্রবার মাহফুজুর রহমান (৩২) নামের আরেক প্রকৌশলীর লাশ মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থেকে উদ্ধার করা হয়।
নিহত লিখন সরকার ও মাহফুজুর রহমান আশুলিয়ার বাংলা ক্যাট নামের একটি কোম্পানিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। লিখন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বাজার বেতেঙ্গা এলাকার রঞ্জিত সরকারের ছেলে।
স্থানীয় লোকজন জানান, সকাল থেকে চরসন্তোষপুরের বুড়িগঙ্গা নদীতে একটা পচা লাশ ভাসছিল। লাশ থেকে উৎকট গন্ধ আসছিল। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন বলেন, স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পরে নিহত লিখনের ভাই লিটু সরকার লাশটি শনাক্ত করেন। লাশের গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। ধারণা করা হচ্ছে, পানিতে ডুবেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা কাউকে সন্দেহ করেননি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এর আগে ৫ জানুয়ারি বিকেলে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় রাজাপুর এলাকায় বুড়িগঙ্গা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ভেকু মেরামতের কাজে যান লিখন ও মাহফুজ। কাজ শেষে বাড়িতে না ফেরায় তাঁর স্বজনেরা বাংলা ক্যাট কোম্পানির কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান। তাঁরা বুড়িগঙ্গা এন্টারপ্রাইজের মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে লিখন ও মাহফুজকে বুড়িগঙ্গা নদী পার করে দিচ্ছিলেন বুড়িগঙ্গা এন্টারপ্রাইজের ট্রলারচালক।
ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে ট্রলারটি বক্তাবলি এলাকায় পৌঁছালে একটি জাহাজ ট্রলারের কাছাকাছি চলে আসে। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে চালকসহ তাঁরা দুজন নদীতে ঝাঁপ দেন। ট্রলারচালক সাঁতরে তীরে উঠলেও লিখন ও মাহফুজের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার চার দিন পর গতকাল সিরাজদিখান উপজেলার পুরান ভাসানচর এলাকার ধলেশ্বরী নদী থেকে মাহফুজুরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে নিহত জিসানের স্বজনদের কাছ থেকে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পরিদর্শক নাসির উদ্দিনের নের্তৃত্বে একটি টিম শনিবার মুন্সিগঞ্জে গিয়ে লাশের সুরতহালসহ পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলেছেন। পাশাপাশি বাংলা ক্যাট কোম্পানির প্রশাসনিক কর্মকর্তা (হড অব সিকিউরিটি এন্ড সেফটি) আশিক মাহমুদ এবং বুড়িগঙ্গা এন্টাপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারি সজীব ও তার কর্মচারী পায়েলের সাথে মোবোইল ফোনে যোগাযোগ করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তদন্তের বিষয়টি স্বীকার করে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক নাসির উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানতে পেরে আমরা থানা পুলিশের পাশাপাশি স্বপ্রণোদিত হয়েই তদন্ত শুরু করেছি। যেহেতু বিষয়টি স্পর্শকাতর, দুইজন প্রকৌশলী পাঁচ ছয় দিন নিখোঁজ থাকার পর তাদের লাশ উদ্ধার হয়েছে, তাই অমি নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ দেখেছি। পারিপার্শ্বিক অবস্থা খতিয়ে দেখেছি।
পিবিআই এর এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মুন্সিগঞ্জে গিয়ে অমি নিহতদের স্বজনদের সাথে কথা বলেছি। তাদের অভিযোগগুলো গুরুত্ব সহকারে নিয়ে আমরা সব বিষয় খতিয়ে দেখছি। কোন আলামত যেন নষ্ট না হয়ে যায় সেই বিষয়টিও আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। ভিকটিম পরিবার যদি মামলা করে আর যদি আমাদেরকে তদন্তভার দেয়া হয় তাহলে আমরা সরাসরি তদন্ত করব।
উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারী দিনগত রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার রাজাপুর এলাকায় বুড়িগঙ্গা এন্টারপ্রাইজের ভেকু মেরামতের কাজ শেষ করে ফেরার পথে নিখোঁজ হন বাংলা ক্যাট কোম্পানির দুই মেকানিক্যাল ইনিঞ্জনিয়ার মাহফুজুর রহমান জিসান ও লিখন সরকার। এ ঘটনায় জিসানের স্ত্রী রাকিয়া সুলতানা রাজধানীর আশুলিয়া থানায় বাদি হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।