২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | রাত ৪:০১
আওয়ামী লীগের পদে আসতে মরিয়া মেয়র শাহিন
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)

আওয়ামী লীগে ‘অনুপ্রবেশ কারী’ হিসেবে বিতর্কিত ও সমালোচকদের ভাষায় ‘রাজাকারের নাতি’, মসজিদের টাকা আত্মসাৎয়ের অভিযোগ ওঠা মিরকাদিম পৌরসভার মেয়র শহিদুল ইসলাম শাহিন আওয়ামী লীগে একটি পদের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

সম্প্রতি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসার উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবির এর সাথে ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের কিছু ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়েছে।

‘গোপন তথ্য ফাস’ শিরোনামে একজন ফেইসবুকে লিখেছেন-

নেটিজনদের দাবি, ‘কয়েক কোটি টাকা মিরকাদিম পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতির পদের জন্য খরচ করছেন শাহিন’

মেয়র শহীদুল নানা কারনে বিতর্কিত হওয়ার পরও সর্বশেষ ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়। সেই নির্বাচনে দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েও পাননি জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও ব্যবসায়ী মনসুর আহমেদ কালাম।

বেশ কিছুদিন যাবৎ মিরকাদিম পৌরসভার মেয়র শাহিন স্থানীয়ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে নিজেকে ‘আওয়ামী লীগ নেতা’ হিসেবে প্রচার করলেও দলে তার কোন পদ নেই। তবে দলীয় কর্মসূচিতে বিপুল বিনিয়োগ ও তার সরব উপস্থিতি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। সেই সূত্র ধরে তিনি আওয়ামী লীগে পদায়ন হওয়ার সুযোগ খুজছেন।

তবে আসলেই কি মিরকাদিম পৌর আওয়ামী লীগের পদটি বাগিয়ে নিতে পারবেন শাহিন? নাকি কেন্দ্রীয় কমিটির বিধি-নিষেধের কাছে আটকে যাবে শাহিনের পদায়ন তা নিয়েই স্থানীয় রাজনীতির দুই পক্ষের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।

মিরকাদিমে শাহিনের রাজত্বে যেই বাধা হয়ে দাড়িয়েছেন শুরু থেকেই তাকে দমাতে চেষ্টা করেছেন শাহিন। ২০১৫ সালে একবার এবং ২০১৯ সালে একবার তার বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে নেমে হামলার স্বীকার হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মনসুর আহমেদ কালাম। দুটি ঘটনার একটি ঘটনাতেও কোন মামলা নেয়নি থানা-পুলিশ। এতে করে স্থানীয় একটি অংশের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও অপর একটি অংশ বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে।

স্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যম ও নির্দিষ্ট কিছু সাংবাদিককে মেয়র শাহিনের নিয়মিত ‘সম্মানী’ দেয়ার বিষয়টিও ‘ওপেন সিক্রেট’ । এছাড়াও প্রতিবছর মেয়র শাহিনের বাসার ছাদে তার পারিবারিক অনুষ্ঠানে ‘বিশেষ দাওয়াত’-এ অংশ নিয়ে থাকেন তার অনুগত কিছু সাংবাদিক। তারাই সেটা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেন। মেয়র শাহিন প্রতি ঈদে বিশেষ খামে তার অনুগত বেশ কিছু সাংবাদিককে টাকা দেন বলে তার ঘনিষ্ঠজনরাই প্রচার করেন।

মূলত সংবাদখাতে বিনিয়োগ তার রাজনৈতিক কৌশলেরই একটি অন্যতম অংশ। কারন, মেয়র শাহিন সেই সুবাদেই সারাবছরই গণমাধ্যমে আলোচিত মুখ।

মেয়র শাহিনের কাছে বিড়ম্বনার স্বীকারও হচ্ছেন সাংবাদিকরা। টিভি চ্যানেলে সাংবাদিকতা করেন এমন সাংবাদিকরা জানান, জেলার বড় একটি অংশের স্যাটেলাইট ক্যাবল টিভির নিয়ন্ত্রণ করেন মেয়র শাহিনের ঘনিষ্ঠ বর্ণালী স্যাটেলাইট ক্যাবল এর অন্যতম কর্ণধার ব্যবসায়ী বাবুল। মেয়র শাহিনের ইচ্ছা বা ব্যাক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার সাথে না মিললে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে চ্যানেল বন্ধ করে রাখা হয়। পরবর্তীতে তাকে খুশি করতে পারলেই চালু করে দেয়া হয় চ্যানেল।

এদিকে শাহিনের বিপুল সম্পদ নিয়েও তার বিরোধিতাকারীরা সমালোচনা করেন।

তাদের দাবি, নারায়ণগঞ্জে শাহিনের ৪টা বাড়ি, ঢাকার ধানমন্ডিতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, মিরকাদিমের কমলাঘাটে বিভিন্ন লোকজনের জমি দখল করে নিজের স্ত্রীর নামে লিখে নেয়া, টেঙ্গর স্কুলের সাথে ৪০শতাংশ জমি, রিকাবীবাজারে একটি চারতলা বিল্ডিং ও আরেকটা ২তলা বাড়ি রয়েছে তার। তার এইসব সম্পদের অর্থের উৎস নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা প্রচলিত রয়েছে।

error: দুঃখিত!