মুন্সিগঞ্জ, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ শিহাব আহমেদ, প্রধান প্রতিবেদক, (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটি গঠন কে কেন্দ্র করে তৃণমূলে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। জেলার বেশ কিছু ওয়ার্ডের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের সাথে কথা বলে এই পরিস্থিতির কথা জানা গেছে।
মুন্সিগঞ্জের ৬টি উপজেলার ৬৭টি ইউনিয়নেই এই অবস্থা। তবে মুন্সিগঞ্জ সদরের ৯টি ইউনিয়নে বিশেষ করে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার, রামপাল ও মিরকাদিম পৌরসভায় এই অবস্থা নিয়ে আলোচনা বেশি।
আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতাদের অভিযোগ, এই তিনটি এলাকার জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব দিয়ে তাদের ওয়ার্ড কমিটি করার দায়িত্ব জেলা’র নেতারা দিয়েছেন বলে তারাই প্রচার করছেন। আর এসব এলাকায় তাদের অনুসারীরা কেউই আওয়ামী লীগের ‘কর্মী’ নন। বেশিরভাগই বিএনপি থেকে আসা সাধারণ সমর্থক। তাদের কর্মী থেকে নেতায় রুপান্তরের কাজ চলছে। আর বাদ পড়ছেন দীর্ঘদিনের তৃনমূলকে সংগঠিত করা নেতা-কর্মীরা।
তৃণমূলের এসব কর্মীদের মতে, ‘জনপ্রতিনিধিদের দলে ভেড়ানোর কৌশল এরকম হতে পারে না। এতে করে বিভাজন তৈরি হয়’
তবে এ বিষয়ে জেলা’র শীর্ষ নেতাদের দাপটের কাছে মুখ খুলতে পারছেন না কেউই। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এ আক্ষেপের কথাও তারা বলছেন।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মহাকালি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন বলেন, তৃণমূলের ভোটে তিনি সর্বাধিক ভোট পাওয়া সত্ত্বেও তাকে স্বেচ্ছাচারিতা করে বাদ দেয়া হয়েছে। একই ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডে রহমান বেপারী আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড শাখার পদের জন্য লড়েছিলেন কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েও তিনি বাদ পড়ে যান।
এই ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগের কর্মীরা বলছেন, ‘তাদের দেওয়া মতকে উপেক্ষা করে যে কমিটিগুলো দেওয়া হচ্ছে তারা দলকে সাংগঠনিকভাবে দূর্বল করে দিবে’
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রিপন ঢালী বলছেন, তিনি বর্তমান ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি । তিনি বেশ কিছুদিন যাবৎ শুনছেন স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান যিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগে এসেছেন যদিও আওয়ামী লীগে তার কোন পদ নেই তার নির্দেশে তাকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তার স্থলে চেয়ারম্যানের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিতদের পদায়ন করা হচ্ছে।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তার হোসেন বলেন, ‘কি প্রক্রিয়ায় আমাকে বাদ দেয়া হলো আমি জানি না। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর খান কে প্রশ্ন করেও উত্তর পাইনি। তিনিই ফোনে জানান আমাদের কমিটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমার ওয়ার্ডে যাকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এবং বিএনপির কর্মী। মূলত যারা মোস্তফার কর্মী এবং আগে বিএনপি করতো ও আওয়ামী লীগে যাদের কোন সদস্য পদও নেই তাদেরকেই কমিটিতে ঢুকানো হচ্ছে’
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থানীয় ‘ত্যাগী’ আওয়ামী লীগের কর্মীদের বাদ দিয়ে যুবদলের এক নেতাকে পদায়নের জেরে সেখানে সংঘর্ষও হয়েছে।
‘আমার বিক্রমপুর’-এ প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদঃ মুন্সিগঞ্জে আ.লীগের ওয়ার্ড কমিটি গঠন কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ
মুন্সিগঞ্জে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক এসব সমস্য নিয়ে আলোচনা নতুন নয়। বেশ কয়েকবছর যাবৎ গণমাধ্যম এ নিয়ে সরব থাকলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি এ নিয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বিশেষ করে পরিবারতন্ত্র মুন্সিগঞ্জে আওয়ামী লীগকে অনেকটা বন্দি অবস্থায় নিয়ে গেছে। যা থেকে উত্তরণের পথ খুজছে অনেকেই। তাদের সাথে নতুন প্রজন্মের যারা আওয়ামী লীগে আসছে তাদের আক্ষেপও বাড়ছে। বিভিন্ন পর্যায়ে তারা সরবও হচ্ছে।
ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে নতুন প্রজন্মের রাজনীতিকরা নিয়মিত লিখছেন। তবে মুন্সিগঞ্জে দলের উন্মুক্ত কোন ফোরাম না থাকায় তাদের কথা না পৌছানোর পেছনে ‘সীমাবদ্ধতা’ থেকেই যাচ্ছে।
এদিকে সুযোগ-সুবিধা আর আধিপত্য নিয়ন্ত্রন নিয়েই বর্তমান জেলা কমিটির শীর্ষ নেতাদের ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে মনে করেন, ‘বন্দিদশায় দল চলতে পারে না। দলকে চাঙ্গা করার এখনই সময়। কারন, নতুন প্রজন্মের অনেকেই এখন দলের সাথে সক্রিয় হয়ে উঠছেন। তাদের পরিচর্যা করতে মুন্সিগঞ্জে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব আসা উচিৎ। যেহেতু মুন্সিগঞ্জে বিএনপি ছাড়া অন্য কোন সংগঠন তেমন সক্রিয় নয় বা তাদের প্রতি নতুন প্রজন্মের আকর্ষণও কম তাই এই সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে’
আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ‘আমার বিক্রমপুর’ কে বলেন, ‘এসব অভিযোগ দলের সর্ব্বোচ্চ ফোরামে তোলা হবে। দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন।’
খোজ নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সভা হয়েছে চলতি বছরের জুনে। সেখানে মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ ও লুৎফর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। তারা নিজেদের মত করে আওয়ামী লীগকে পরিচালনা করছেন।
মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন মুন্সিগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ায় সেখানেই ব্যস্ত থাকছেন। বিভিন্ন সময় সরকারি সফরে বিদেশেও তাকে থাকতে হয়। তার অবর্তমানে তার সহধর্মীনি আইনজীবি সোহানা জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে বিভিন্ন কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন। সেখানে জেলার অন্য কোন ইউনিটকে দেখা যায় না। অনেকটা ঘড়ে বন্দি সংগঠনের মত কর্মসূচি পালন হয় জেলা আওয়ামী লীগের।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফর রহমানের নিজ এলাকায়ও কোন অবস্থান নেই। নিজস্ব কর্মী-সংগঠক তৈরি করতে ব্যার্থ তিনি। জেলা শহরে বিশেষ কোন অনুষ্ঠানে দাওয়াত না পেলে আসেননা। বয়স হয়ে যাওয়ায় দলকে সংগঠিত করার উদ্দম তার ভেতর এখন আর নেই। নতুন প্রজন্মের কাছেও তার গ্রহণযোগ্যতা নেই।