১৩ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | রাত ১:২৭
আবারও মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকায় ‘ওয়াটার বাস’ চাইছেন যাত্রীরা
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ ১ জুলাই ২০২০, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জের মানুষের সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনার নাম মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকায় ‘যাতায়াত ব্যবস্থা’। বুড়িগঙ্গায় মুন্সিগঞ্জের লঞ্চডুবির ঘটনায় হতাহতের পর আবারও দাবি উঠেছে মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকায় ‘ওয়াটার বাস’ চালুুর।

মুন্সিগঞ্জের মানুষের এই বিড়ম্বনা নদী পথেই নয়। বিড়ম্বনা কমাতে সড়ক পথে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি থেকে মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর সেতু এলাকা পর্যন্ত ফ্লাইওভার ও চারলেন সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে শোনা গেলেও সে বিষয়ে নতুন কোন অগ্রগতির কথা আর জানা যায়নি।

তবে এতেই সন্তুষ্ট নন মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী যাত্রীরা। কারন হিসেবে তারা বলছেন মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকার নদীপথ খুবই ব্যবহার উপযোগী। শুধুমাত্র দরকার বড় কোন উদ্দ্যোগ।

বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ থেকে নদীপথে যারা ঢাকায় যান তারা বিভিন্ন ভোগান্তিতে পড়ছেন। এরমধ্যেই ঘটে গেলো মর্মান্তিক লঞ্চ দূর্ঘটনা।

মুন্সিগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী লঞ্চগুলোরও একই অবস্থা। ছবিঃ আমার বিক্রমপুর।

মুন্সিগঞ্জ থেকে নদী পথে ঢাকার দূরত্ব মাত্র ২২ কিলোমিটার। মুন্সিগঞ্জের কেন্দ্রীয় লঞ্চঘাট ছাড়াও মিরকাদিমের কাঠপট্রি এলাকা থেকে শুধুুমাত্র ঢাকায় ছেড়ে যাওয়া লঞ্চ থাকলেও সেগুলো অনেকটা খেলনা লঞ্চের মত। যে কোন সময় দূর্ঘটনা ঘটবে এমন আশঙ্কা নিয়েই যাত্রীরা বাধ্য হয়ে সেগুলোতে চড়েন। আবার সময় বেশি লাগার অযুহাতে যাত্রীদের আকর্ষণ বেশি দূরপাল্লার লঞ্চে।

মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকায় নদীপথে বড় কোন লঞ্চ যা দিয়ে ৪০-৪৫ মিনিটে ঢাকায় যাওয়া যায় তা মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে ভিড়ে না। তাই মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে ট্রলারে কয়েক গজ দূরে গিয়ে ঝুকি নিয়ে ঢাকাগামী লঞ্চে উঠে ঢাকায় যেতে হয় যাত্রীদের। কিন্তু এখানে আবার ভাড়া গুনতে হয় তিন দফায়।

মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে ঢাকামুখি বড় লঞ্চের অপেক্ষায় যাত্রীরা। ছবিঃ আমার বিক্রমপুর।

অর্থাৎ নদীপথে ভালোভাবে মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকায় যেতে হলে একজন যাত্রীর ঘাটের নির্ধারিত ইজারা ফি পরিশোধ করতে গিয়ে প্রথম দফায় খরচ হয় ৫টাকা, দ্বিতীয় দফায় ট্রলার হয়ে লঞ্চে উঠতে পরিশোধ করতে হয় ১০-১৫ টাকা এবং তৃতীয় দফায় লঞ্চ ভাড়া হিসেবে পরিশোধ করতে হয় ৫০ টাকা। সর্বমোট প্রায় ৬৫-৭০ টাকা খরচ হয় প্রতিজনের।

তাই মুন্সিগঞ্জের যাত্রী ও বিভিন্ন মহলের দাবি, মুন্সিগঞ্জবাসীর স্বপ্ন পূরণে মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে ঢাকার সদরঘাট লঞ্চঘাট পর্যন্ত ‘ওয়াটার বাস’ চালু করা গেলে এ রুটে প্রতিদিন যাতায়াতকারী প্রায় ২ হাজার যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া মিলবে।

মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে ঢাকার সদরঘাট লঞ্চঘাট পর্যন্ত যদি ‘ওয়াটার বাস’ চালু করা যায় তাহলে ধারনা করা যাচ্ছে মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাওয়া যাবে মাত্র ১৫-২০ মিনিটে। আর খরচ হতে পারে ৮০-১১০ টাকা।

বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন রুটে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি ওয়াটার বাসে ২৫ জন বসে এবং ৫ জন দাঁড়িয়ে যেতে পারেন। আর ৩ কিলোমিটারের জন্য ভাড়া নেয়া হয় ১৫ টাকা। এ হিসাবে মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকায় ২২ কিলোমিটারের জন্য ভাড়া হয় ১১০ টাকা। দূরত্ব বেশি হিসেবে ভাড়া কিছুটা কমও আসতে পারে।

মুন্সিগঞ্জ জেলা নাগরিক সমন্বয় পরিষদের আহবায়ক সুজন হায়দার জনি বলেন, ‘ঢাকার কাছের জেলা হয়েও মুন্সিগঞ্জের মানুষ বরাবরই উন্নত নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত ও অবহেলিত।’

তিনি বলেন, ‘মুন্সিগঞ্জের মানুষের যাতায়াত বিড়ম্বনা কমাতে মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকার ‘যাতায়াত ব্যবস্থা’ উন্নত করতেই হবে। এর বিকল্প নেই।’

জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসাইন জাকির বলেন, ‘লঞ্চডুবির যে ঘটনাটি ঘটেছে এটা দূর্ঘটনা নয়, গভীর হত্যাকান্ড। তবে এই ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকার উন্নত ‘যাতায়াত ব্যবস্থা’ নিয়ে এখনই জোরদারভাবে ভাবতে হবে।’

error: দুঃখিত!