৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | সন্ধ্যা ৭:০৫
হাইড্রোজেন বোমা ফাটাল উত্তর কোরিয়া
খবরটি শেয়ার করুন:

বছরের শুরুতেই বোমাটা ফাটালো উত্তর কোরিয়া!

নতুন বছরে কোনও চমক অপেক্ষা করে আছে, ডিসেম্বরের শেষে এক বার আভাস দিয়েছিলেন উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উন। ‘‘হাইড্রোজেন বমার বিকট আওয়াজেই বর্ষবরণ করব’’— গত মাসের ১৫ তারিখ এক নির্দেশে সই করে লিখেছিলেন এ কথা। শাসকের সেই স্বপ্ন আজ সত্যি করে তুললেন সে দেশের বিজ্ঞানীরা।

বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা নাগাদ প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে ওঠে দেশের উত্তর-পূর্ব উপকূলের পুঙ্গাই-রি। এর ঠিক সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পরে প্রথম খবর ভেসে ওঠে সরকারি টিভি চ্যানেলে। খবর পড়ছিলেন যিনি, তিনি জানান— দেশে প্রথম হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ সফল হয়েছে। তবে এটা যে কম শক্তিশালী, হাইড্রোজেন বোমার ছোট সংস্করণ, সেটাও উল্লেখ করতে ভোলেননি তিনি। এই একটা সাফল্য তাদের অস্ত্রাগারকে আরও কত গুণ শক্তিশালী করে তুলল, আজ সে কথাও সারা দিন ধরে বারে বারে প্রচার করা হয়েছে সরকারি টিভিতে। এ দিকে পরীক্ষা সফল হওয়ার কথা শোনামাত্র উৎসব শুরু হয়ে যায় পিয়ংইয়ং স্টেশনের বাইরে। ‘সুখবর’ দেওয়ার জন্য আজ সেখানে টাঙানো হয়েছিল বিশাল টিভি স্ক্রিন। আনন্দে সেই টিভির খবরের ভিডিওই মোবাইল-বন্দি করতে শুরু করেন অনেকে।

খুশির রেশ অবশ্য দেশের মাটিতেই সীমাবদ্ধ। উত্তর কোরিয়ার বাইরের ছবিটা আসলে একেবারেই উল্টো। নতুন করে পরমাণু অস্ত্রের চোখরাঙানি ভয় ধরিয়েছে বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যেও। কারণ, ‘লিটল বয়’ বা ‘ফ্যাট ম্যান’ নয় (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে দু’টি পরমাণু বোমায় ধ্বংস হয়েছিল হিরোশিমা ও নাগাসাকি), যে হাইড্রোজেন বোমার কথা উত্তর কোরিয়া বলছে, তার শক্তি আগের অস্ত্রের চেয়ে অনেক, অনেক গুণ বেশি। আর এটাই ভাবাচ্ছে সকলকে। তাই উত্তর কোরিয়ার পরীক্ষার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডেকেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, আমেরিকা থেকে কিমের বন্ধু-রাষ্ট্র চিনও একযোগে নিন্দা করেছে আজকের এই ঘটনার। শক্তির আস্ফালন যাতে প্রকট না হয়, এক দিকে কূটনৈতিক স্তরে সেই চেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, উত্তর কোরিয়ার দাবি কি আদৌ পুরোপুরি ঠিক?

এমনিতে এই দ্বীপরাষ্ট্রের খবর বাইরের দুনিয়ায় খুব একটা আসে না। কিম জং উনের রাজত্বে সরকার যেটুকু জানাতে চায়, বাকি পৃথিবী জানে শুধু সেটাই। তবে এ বার অবশ্য হিসেব গরমিল হচ্ছে বহু জায়গাতেই। বিশেষজ্ঞদের দাবি, পরমাণু বোমা আর হাইড্রোজেন বোমার মধ্যে তফাত রয়েছে অনেক। পরমাণু বোমায় পরমাণুর নিউক্লিয়াস নিউট্রন ও গামা ফোটনে ভেঙে যায়। একে ‘ফিশন’ বলে। আর হাইড্রোজেন বা ‘সুপার বম্ব’-এ যা হয়, সেটা আসলে ‘চেন রিঅ্যাকশন।’ প্রথমে পরমাণু বোমার মতোই ফিশন পক্রিয়ায় পরমাণুর নিউক্লিয়াস ভেঙে প্রচুর শক্তি নির্গত হয়। এর পর এই শক্তির জন্যই হাইড্রোজেনের দুই বা তার বেশি নিউক্লিয়াস একে অপরের দিকে ছুটে এসে প্রচণ্ড গতিতে ধাক্কা মারে। এরা জুড়ে গিয়ে জন্ম নেয় নতুন নিউক্লিয়াস। আর তাতেই তৈরি হয় বিপুল শক্তি। এই দ্বিতীয় প্রক্রিয়াটিকে বলে ‘ফিউশন।’ বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ফিউশনের জন্যই পরমাণু বোমার থেকে হাইড্রোজেন বোমার অভিঘাত প্রায় হাজার গুণ বেড়ে যায়।

error: দুঃখিত!