মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের মালপদিয়া-মালখানগর সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ দুটি সেতু দিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন।
উপজেলার মধ্যপাড়া ৭ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের মালপদিয়া ও মালখানগরা গ্রামে অবস্থিত ওই দুটি সেতু দিয়ে প্রতিদিন পণ্য ও যাত্রীবাহী বিভিন্ন যানবাহনসহ কয়েকটি গ্রামের হাজারও মানুষ চলাচল করেন।
বিকল্প রাস্তা না থাকায় এলাকাবাসীরা বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। এ সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি না থাকায় বাসিন্দারা এ বিষয়ে নানা প্রশ্নও তুলছেন।
পুরাতন ঢালাই ভেঙ্গে পড়া সেতুর উপর কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে নির্মাণ করা ও চলাচলের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত এই দুই সরু সেতুর উপর দিয়ে অসংখ্য ভারী যানবাহন চলাচল করছে। ফলে যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা।
এছাড়াও ব্রিজদুটি সরু হওয়ায় দুই দিকথেকে ছেড়ে আসা যানবাহন ও পথচারীদের পারাপারের সময় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। স্থানিয়রা জানান, প্রায় সাত বছর ধরে ব্রিজদুটি অনেকটা বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে। জরুরি ভিত্তিতে এগুলো মেরামত করা না হলে যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে। অন্যদিকে ব্রিজ দুইটি ভেঙে নতুন ব্রিজ নির্মানের দাবি জানিয়েছেন যানবাহনের চালকসহ এলাকাবাসী।
সরেজমিন দেখা গেছে, এলজিডি বিভাগ কর্তৃক নির্মিত এ দুটি ব্রিজের উভয় পাশের গার্ডারে বেশ কয়েক বছর ধরেই মারাত্মক ফাটল দেখা দিয়েছে। মালপদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের রাস্তার সেতুর দুই পাশের রেলিংগুলো ভেঙে গেছে, এমনকি একপাশের রেলিং একবারেই নেই। শুধু রডগুলো কোনোমতে ঝুলে আছে। আরেক পাশেরও অর্ধেক রেলিং নেই। হালকা-ভারি কোনো যান উঠলেই সেতু দুটি কাঁপতে থাকে। বেশ কয়েক বছর ধরেই সেতুগুলোর অবস্থা জরাজীর্ণ। এ অবস্থার মধ্যেও বাধ্য হয়ে হাজারও এলাকাবাসীসহ হালকা-ভারি যানবাহন চলাচল করছে ওই সেতু দুটি দিয়ে। আরো দেখা গেছে, মরণফাঁদে পরিণত হওয়া ব্রিজ দুটির ওপর দিয়ে প্রতিনিয়তই চলছে লরি, মালবাহী ট্রাক ও নসিমন-করিমন, সিএনজি, লেগুনাসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় যানবাহন। এলাকার কৃষিপন্ন সরবরাহকারী পিকআপ, ট্রাক লরির নিত্যদিনের যাতায়াতের কারণে ব্রিজ দুটি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয় বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অনেক আগেই ওই দুটি সেতুতে ফাটল সৃস্টি হয়েছে বলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। মধ্যপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী শেখ আব্দুল করিম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ দুই ব্রিজ মালপদিয়া নামক স্থানে অবস্থিত। অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের কারণে সেতু দুর্বল হলে সেতুর ঢালাই ভেঙ্গে পড়ে। দুই পাশের বিমে ফাটল ধরে এবং সেতুর নীচে পিলারের মাঝ থেকে ইট খুলে খুলে পড়ে যায়। এতে সেতু ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। ব্রিজের মাঝখানে ক্ষয়হয়ে হয়ে যাওয়ায় ব্রিজের র্যালিং খসেপড়ায় ঐ স্থান গাড়ি নিয়ে অতিক্রমকালে বুকের ভেতর কেঁপে ওঠে। এছাড়া সড়কে কোন আলো বাতি না থাকায় রাতের বেলায় যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়ে প্রানণহানি ঘটতে পারে। কয়েকবার বিষয়টি এলজিডি প্রকৌশলী বিভাগকে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
সিরাজদিখান উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে এবং স্থানীয় লোকজনের কাছে পুরাতন ব্রিজ দুটির তেমন তথ্য পাওয়া না গেলেও ব্রিজ দুটি ত্রিশ বছর পূর্বে নির্মাণ করা হয়েছে বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে। মালপদিয়া সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনির হোসেন বলেন, ঝুঁকি পূর্ণ দুটি ব্রিজের উপর দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য ভারী বাস, মালবাহী ট্রাক, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মালপদিয়া-মালখানগর,আদাবাড়ি চলাচল করে। এছাড়া এ্যাম্বুলেন্স, পুলিশের পিকআপ, স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী বহনকারী গাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। এজন্য আমাদের সব সময় আতংকের মধ্যে থাকতে হয়। ব্রিজদুটি ভেঙ্গে কখন যে কি হয়ে যায়। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌলী শোয়াইব বিন আজাদের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বরাদ্দ আসলে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ দুটির স্থানে নতুন ব্রিজ নির্মাণ হবে।