মুন্সিগঞ্জ, ১১ এপ্রিল, ২০২০, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জে একসাথে দুই নারীসহ দশজন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রথম অবস্থায় দশজনের শরীরে করোনা ‘পজেটিভ’ হওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সোয়াব টেষ্টের পরে আইইডিসিআর শুক্রবার মধ্যরাতে মুঠোফোনে সাতজন করোনা রোগীর শরীরে করোনাভাইরাস ‘পজেটিভ’ এর খবর মুন্সিগঞ্জের সিভিল সার্জনকে জানিয়েছেন। পরবর্তীতে শনিবার (১১ এপ্রিল) আইইডিসিআর থেকে পাঠানো ‘সর্বশেষ তথ্যে’ দশজন ‘পজেটিভ’ রোগীর কথা নিশ্চিত করা হয়।
মুন্সিগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আবুল কালাম আজাদ আজ শনিবার (১১ এপ্রিল) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ‘আমার বিক্রমপুর’ কে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ‘আমাদেরকে আইইডিসিআর থেকে ফোনে জানানো হয়েছিলো সাতজন আক্রান্তের খবর। পরে সেখান থেকে সর্বশেষ আজ সকালে জানানো হয় ১০ জনের খবর।’
এর মধ্যে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার ২জন, টংগিবাড়ী উপজেলার ৩জন, গজারিয়া উপজেলার ৩জন, সিরাজদিখান ও শ্রীনগর উপজেলার ১ জন করে দুইজন।
‘এর মধ্যে কেউ মারা যাননি এবং কয়েকজন অতটা খারাপ পর্যায়ে অসুস্থ হননি’ জানান সিভিল সার্জন।
গত ৭ এপ্রিল ১৬ জনের সোয়াব সংগ্রহ করা হয়। ৮ এপ্রিল পরীক্ষার জন্য ১৬ জনের নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়। এর মধ্য থেকে ৭ জন এবং ৮ এপ্রিল নমুনা সংগ্রহ করে ৯ এপ্রিল আইইডিসিআর এর কাছে পাঠানো ২১ জনের সোয়াব টেষ্ট করার পরে ৩জনের রিপোর্ট ‘পজেটিভ’ আসে।
মুন্সিগঞ্জ সদর, গজারিয়া, সিরাজদিখান, শ্রীনগর ও টংগিবাড়ী উপজেলায় রাতেই সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদের মধ্যে দুই নারী রোগী একজন মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার এবং অন্যজন সিরাজদিখানের বাসিন্দা।
পাঁচ পুরুষ রোগীর মধ্যে দুজন গজারিয়ার। এরা হলেন- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার এবং আরেকজন উপজেলার এক গ্রামের বাসিন্দা।
টংগিবাড়ী উপজেলায় দুজন পুরুষ এবং শ্রীনগর উপজেলার অপর পুরুষ রোগীর বাড়ি।
সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, এদের অধিকাংশই নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে সংক্রমিত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, টংগিবাড়ীর একজন মীরপুর থেকে সংক্রমিত হয়েছেন।
এদিকে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারকে ঢাকায় ভর্তি করার জন্য রাতেই মুন্সিগঞ্জ থেকে অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। এই অ্যাম্বুলেন্সে অপর রোগীকে আইসোলেশনে পাঠানো হচ্ছে।
মেডিকেল অফিসার সংক্রামিত হওয়ায় আইইডিসিআর মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
মুন্সিগঞ্জের সিভিল সার্জন বলেন, “আপাতত গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ বন্ধ রাখা হয়েছে।”
তিনি জানান, পজেটিভ পাওয়া সকলের সাথেই আইইডিসিআর এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা কথা বলেছেন। সাতজনের শারীরিক অবস্থা এখনও গুরুতর নয়।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুমন বণিক জানান, পজেটিভ দুজনের নমুনা মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। যদিও একজনের বাড়ি টংগিবাড়ী উপজেলায়। এই দুজনের সাথে কথা হয়েছে। তারা বাড়িতেই আছেন।
“সকলের বাড়ি গিয়ে লকডাউন ছাড়াও আইসোলেশনে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।”
ইতিমধ্যে মুন্সিগঞ্জের এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে যাতায়াত তথা সকল ধরণের যান চলাচলে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। এর আগে চারিদিক থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে মুন্সিগঞ্জকে। খুব শীঘ্রই পুরো জেলা ‘লকডাউন’ ঘোষনা করা হতে পারে।