মুন্সিগঞ্জ, ১৫ মে, ২০২২, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলায় একটি প্রাইভেটকার খালে পড়ে গিয়ে মো. ফাহিম হোসেন (১৬) ও চালক মো. জিসান হোসেন (১৯) নামে দুই তরুণ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে জাহিদ হোসেন (১৬) নামে আরেকজন।
তিন বন্ধু ঘুড়তে বের হয়ে সতর্কতার সাইনবোর্ড ও ব্যারিকেড না থাকায় বাইপাস সড়ক দেখতে না পেয়ে পরিত্যক্ত ব্রীজের স্থানে খালের পানিতে পড়ে যায়।
স্বজনদের অভিযোগ, পরিত্যক্ত ব্রীজটির স্থানে কোন সতর্কতার সাইনবোর্ড ছিল না। খালি জায়গার শুরুতেও ছিল না কোন ব্যারিকেড। এর ফলে সরাসরি সড়ক থেকে খালে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় দুইজনের।
গত শুক্রবার দিনগত রাত সাড়ে ৩ টা’র দিকে পুরা বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
নিহতরা হলো, মুন্সিগঞ্জ সদরের উত্তর চরমশুরা এলাকার শরফত উল্লাহর ছেলে ফাহিম ও একই এলাকার মো. মানিকের ছেলে জিসান। তারা মুন্সিরহাট এলাকায় থাকতেন। ফাহিম মুন্সিগঞ্জ হাই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র ও জিসান এসএসসি পাশ করে বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। একই এলাকার মো. আহাদ আলীর ছেলে আহত জাহিদ হোসেন মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে গেছে।
টংগিবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোল্লা সোহেব আলী জানান, তিন বন্ধু মিলে প্রাইভেটকার নিয়ে ঘুড়তে বের হয়েছিল। পথিমধ্যে পরিত্যক্ত একটি বেইলি ব্রীজ ছিল। কিন্তু সেখানে নতুন ব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এর জন্য ঐ সড়কের পাশ দিয়ে একটি বাইপাস সড়কে যানবাহন চলাচল করে। তিনবন্ধু এ সড়কে নিয়মিত যাতায়াত না করার কারণে বাইপাস সড়ক দেখেনি। তারপর দ্রুতগতিতে বেপরোয়া ভাবে চালিয়ে নির্মাণাধীন ব্রীজের জায়গায় গভীর খালের পানিতে পড়ে যায়। স্থানীয় বাজারের নাইটগার্ড পুলিশকে ঘটনাটি জানালে টহল টিম প্রাইভেটকার থেকে তিনজনকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে যায়। গাড়িটি প্রায় ১৫-২০ ফুট নিচে পড়ে যায়। এতে আঘাতপ্রাপ্ত হয় তারা।
নিহত জিসানের বোন রুপা আক্তার জানান, সদরের মুন্সিরহাট এলাকা থেকে প্রাইভেটকার নিয়ে বের হয়েছিল আমার ভাইসহ তিন বন্ধু। পথিমধ্যে খালের পানিতে পড়ে যায়। এ জায়গায় আগে ব্রীজ ছিল। কিন্তু পরিত্যক্ত ব্রীজের আশেপাশে কোন সতর্কতার সাইনবোর্ড ছিলনা। কোন সাইনবোর্ড না থাকায় খালে পড়ে গিয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান তিনি।
পুরাবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. বাবু হোসেন জানান, প্রায় দুই বছর যাবত কোন সতর্কতার সাইনবোর্ড নেই। ৫ মাস আগেও একটি সিএনজি পরিত্যক্ত ব্রীজের জায়গায় পড়ে গিয়েছিল। তবে তখন কয়েকজন আহত হয়েছিল। স্থানীয় যানবাহন ছাড়া এ পথে বহিরাগত যানবাহন আসলে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। আর দূর থেকেও বুঝার উপায় নেই সামনে বাইপাস সড়ক আছে।
মুন্সিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজা জানান, প্রায় দুইবছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রীজটি পাশে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরানোর কারণে সে জায়গায়টি ফাঁকা হয়ে আছে। এরজন্য গাড়িগুলো বাইপাস সড়ক ধরে চলাচল করে।
তিনি জানান, প্রায় দুই বছর আগে সতর্কতার সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছিল। হয়ত সেখানে নির্বাচনী ও শুভেচ্ছার পোস্টার লাগিয়ে ঢেকে ফেলেছে স্থানীয় মানুষজন। সাইনবোর্ড আছে, কিন্তু ঢেকে গিয়েছে। আমরা আবার নতুন করে সাইনবোর্ড স্থাপন করব। এছাড়া রাতে আলোর ব্যবস্থা করে দিব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে কোন অবহেলা নেই। ঐ এলাকার মানুষজন সড়কের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত আছেন। ব্রীজের পরিত্যক্ত জায়গায় নতুন ব্রীজ স্থাপনের জন্য ইতিমধ্যে ডিজাইন ও সয়েল টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুন মাস থেকে টেণ্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব জানান, মরদেহ ময়না তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।