জেলার শ্রীনগরে ভুয়া দন্ত চিকিৎকের সন্ধান পাওয়া গেছে। উপজেলার হাঁসাড়া বাজারে রোকেয়া মার্কেটের ২য় তলায় স্কয়ার ডেন্টাল সার্জারী নামক একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন প্রিন্স ঘরজা নামে এক ভুয়া দন্ত চিকিৎসক।
স্থানীয়রা জানান, প্রিন্স ঘরজা নামে এক দন্ত চিকিৎসক পরিচয়ে প্রায় ৭ মাস যাবত এখানে চেম্বার খুলে বসেছেন। সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ পর্যন্ত রোগী দেখেন ও ভিজিট হিসেবে নেন ৪০০ টাকা। প্রিন্স ঘরজা খুলনার রূপসা ঘাট এলাকার নিত্য বিশ্বনাথ ঘরজার ছেলে। সে প্রায় ১০-১২ বছর যাবত মুন্সীগঞ্জের বিভিন্নস্থানে ভাড়া করা বাসায় থেকে নিজেকে দন্ত চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন। সে বর্তমানে হাঁসাড়া গ্রামের (উপজেলার পাটাভোগ ইউপি সচিব) সিরাজ শেখের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। মানহীন চিকিৎসা সেবা প্রদানের বিষয়েও রয়েছে বিভিন্ন অভিযোগ।
অনুসন্ধানে জানাযায়, প্রিন্স ঘরজের সিরাজদিখান উপজেলার নিমতলা আওলাদ হোসেন মার্কেটে প্রিন্স ডেন্টাল কেয়ার নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানেও তিনি প্রায় ৮-৯ বছর যাবত এ পেশায় নিজেকে দন্ত চিকিৎক হিসেবে পরিচয় দিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করছে।
নিমতলা’র প্রিন্স ডেন্টাল কেয়ার নামক প্রতিষ্ঠানের বিজিটিং কার্ড ও ব্যবস্থাপত্রে পদবী হিসেবে রয়েছে ডাঃ প্রিন্স ঘরজা, বি ডি এস (ঢাকা), পি জি টি (প্রস্থোডোন্টিকস) বি এস এম এম ইউ ওরাল এন্ড ডেন্টাল সার্জন। অপরদিকে বর্তমান হাঁসাড়ায় স্কয়ার ডেন্টাল সার্জারী নামক প্রতিষ্ঠানের নিজের ভিজিটিং কার্ড ও ব্যবস্থাপত্রে পদবী হিসেবে রয়েছে প্রিন্স ঘরজা, ডি আই টি নিডাসা (ঢাকা), ডিপ্লোমা ইন ডেন্টাল। যা কিনা একটির সাথে আরেকটি কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। নেই তার বি এম ডি সির সনদ।
অনুসন্ধানে আরো জানাযায়, ঢাকার নর্থসাউথ রোডের সিদ্দিক বাজার এলাকায় জাতীয় যুব উন্নয়ন ও আত্মকর্মসংস্থান একাডেমী (নিডাসা) নামক প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০৫-২০০৭ সাল পর্যন্ত দুই বছরের কোর্সের নিজের নামে সার্টিফিকেট রয়েছে। এ সনদের বলেই ঘরজা নিজেকে একজন দন্ত চিকিৎসক পরিচয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
এছাড়াও সূত্রমতে আরো জানাযায়, কয়েক বছর পূর্বে মনিরুজ্জামান নামে এক রোগীকে সাথে নিয়ে মিডফোর্ড হাসপাতালের দন্ত বিভাগে গিয়ে নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে শ্রীঘরে যান ঘরজা। তৎকালীন সময়ে দন্ত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান ইকবাল শহিদের কাছে বিষয়টি সন্দেহ হলে আটক করে প্রিন্স ঘরজাকে পুলিশে সোর্পদ করা হয়।
বাড়ির মালিক সিরাজ শেখের কাছে ঘরজার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৬-৭ যাবত প্রিন্স ঘরজা আমার বাসায় ভাড়া থাকেন। হাঁসাড়া ও নিমতলায় তার দুইটি দন্ত চিকিৎসালয় রয়েছে। এ পেশায় নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে জেল খাটার বিষয়ে অবগত আছেন কিনা জানতে চাইলে সিরাজ শেখ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।
ঘরজার বৈবাহিক অবস্থান বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রিন্স ঘরজা তিনটি বিবাহ করেছেন। শুনেছি আরেকটি বিবাহ করার জন্য তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
দন্ত চিকিৎসক পরিচয় দানকারী প্রিন্স ঘরজার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে, খুলনার রুপসা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৯ সনে এসএসসি পাশ করেন বলে দাবি করেন। এ পেশায় নিজেকে পরিচয় দিয়ে পূর্বে শ্রীঘরে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটু ঝামেলা ছিলো তাই এখন কোন সমস্যা নেই। দন্ত সংক্রান্ত বিষয়ে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে ঘরজা সঠিক কোন তথ্য দিতে পারেনি। নিজের ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ কাজে যেতে হবে বলে সটকে পরেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সৈয়দ রেজাউল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।