মুন্সিগঞ্জ, ২২ জুন ২০২৩, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে মুন্সিগঞ্জ সদরের শিলইতে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন শাহাদাত বেপারী। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে স্থানীয় কয়েকজনকে কুপিয়ে জখম করে শাহাদাতের বাহিনী।
এ ঘটনায় আহতদের ভাই প্রবাসী শ্যামল বেপারী একটি মামলা দায়ের করেন। শাহাদাত আত্মগোপনে থাকলেও ওই মামলায় তার ছেলে মহিউদ্দিন গ্রেপ্তার হন। মামলা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায়ই শ্যামলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন শাহাদাত ও তার ছেলের নিয়ন্ত্রনাধীন কিশোর গ্যাং বাহিনী।
গত ১৪ জুন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার পূর্বরাখি এলাকায় গভীর রাতে প্রবাস ফেরত শ্যামল বেপারীকে ঘুমন্ত অবস্থায় নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পকারী শাহাদাত বেপারীসহ (৪৫) তিনজনকে একটি বিদেশী পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্রসহ বুধবার রাতে টংগিবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। বাকিরা হলেন- শাহাদাত বেপারির ছেলে মহিউদ্দিন বেপারী (২০) ও শিলইয়ের কেওয়ামদ্দিন চৌকিদারের পুত্র হায়াতুন ইসলাম (৪২)।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মঈন জানান, শাহাদাত বেপারীর নেতৃত্বে ১৫-২০ জন পরিকল্পনা অনুযায়ী আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ১৪ জুন রাতে শ্যামলকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এলাকায় ট্রলার ঘাটের ইজারা, নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন, আধিপত্য বিস্তার ও জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে শ্যামলের নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে শাহাদাতের বিরোধ চলছিল।
এর প্রেক্ষিতে ৫-৬ মাস আগে শ্যামলের নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিষয় এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শাহাদাতের বাকবিতণ্ডা ও ঝগড়া হয়। এর জের ধরে শ্যামলের সঙ্গেও শাহাদাতের বাকবিতণ্ডা ও ঝগড়া হয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে শাহাদাতের পরিকল্পনায় ও উপস্থিতিতে শ্যামলের ভাইদের স্থানীয় বাজারে কুপিয়ে জখম করা হয়। এ ঘটনায় নিহত শ্যামল বাদী হয়ে শাহাদাত ও তার ছেলে মহিউদ্দিনসহ অন্য সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ মামলার পর শাহাদাত আত্মগোপনে চলে যান। কিন্তু তার ছেলে মহিউদ্দিন বেপারী ও তার এক সহযোগী গ্রেপ্তার হন। পরে শাহাদাত ও তার ছেলে আদালত থেকে ওই মামলায় জামিন পান।
এ মামলার কারণে আত্মগোপনে থাকার সময়ে শ্যামলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন শাহাদাত বেপারী। পরিকল্পনা অনুযায়ী শাহাদাত আগে থেকেই আগ্নেয়াস্ত্র, ককটেল ও ধারালো অস্ত্র সংগ্রহ করে রাখেন। শাহাদাত ১৫-২০ জনসহ গত ১৪ জুন রাত দেড়টার দিকে শ্যামলের বাড়িতে চার দিক থেকে ঘেরাও করে হামলা চালান। তারা ঘরে ঢুকে শ্যামলকে গুলি করে ও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেন। পরে গুলি করে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, নিহত শ্যামল বেপারী ২০০৪ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে চাকরি করেন। ২০২২ সালের জুলাই মাসে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
শাহাদাত বেপারী এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য তার ছেলে মহিউদ্দিন বেপারীসহ ১৫-২০ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী পরিচালনা করতেন। তিনি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম করে আসছিলেন। হত্যাকান্ডের পর তিনি কিশোরগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকেন। আত্মগোপনে থেকেই শ্যামলের পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সমঝোতার চেষ্টা চালান।
তার বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে প্রায় ১০টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগেও তিনি বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছেন।
কমান্ডার খন্দকার মঈন জানান, গ্রেপ্তার মহিউদ্দিন বেপারী শ্যামল হত্যাকাণ্ডের মূলপরিকল্পনাকারী শাহাদাত বেপারীর ছেলে। এলাকায় তার নেতৃত্বে ১০-১৫ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে তোলা হয়। এই গ্রুপটি আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ইভটিজিং ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করত।
সম্প্রতি মহিউদ্দিন আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি ঘটনায় কয়েকজনকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করেন। তার বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অপরাধে প্রায় ৫টি মামলা রয়েছে। তিনিও বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছেন।
গ্রেপ্তার হায়াতুন শাহাদাতের সন্ত্রাসী গ্রুপের একজন সদস্য। তিনি শ্যামল হত্যাকান্ডে শাহাদাতের সহযোগী ছিলেন। তার বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।