মুন্সিগঞ্জ, ১০ জুন, ২০২১, সদর প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
এলাকার বড় ভাইদের হাত ধরেই রাজনীতিতে আসে শোভন। এরপর জড়িয়ে পরেন নানা অপকর্মে। ছাত্রলীগের কোন পদে না থাকলেও নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ব্যানার-পোষ্টারিং করতেন। তাতে মুন্সিগঞ্জ শহরের শীর্ষ এক রাজনীতিকের ছায়াও পেয়ে যান খুব দ্রুত। এরপর ক্রমেই স্বপ্ন বড় হতে থাকে শোভনের।
আরও পড়তে পারেন: মুন্সিগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা ও কিশোর গ্যাং লিডার কুপিয়ে মারলেন যুবককে
মুন্সিগঞ্জের রামপাল ইউনিয়নের কাজীকসবা এলাকায় নৃশংস নির্যাতন চালিয়ে খুন করা হয় নয়ন মিজি (৩৩) কে। এ ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় আসে শোভনের নাম। তবে রামপাল, মিরকাদিম ও পঞ্চসার এলাকায় শোভন পরিচিত মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাং ‘মাষ্টারমাইন্ড’ গ্রুপের লিডার হিসেবে।
আরও পড়তে পারেন: রামপালে যুবক খুন: প্রান্ত-শোভনের গ্রেপ্তারের দাবিতে সড়ক অবরোধ
জানা যায়, রামপাল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রান্ত শেখকে নিয়েই সকল অপকর্ম করতো শোভন। তবে প্রান্ত মাঝখানে প্রবাসে চলে যায়। এরপর শোভন এলাকায় নিজেই মাদক ব্যবসা সহ বিভিন্ন অপকর্ম করতে থাকেন। কয়েকমাস আগে প্রবাস থেকে দেশে চলে আসেন প্রান্ত। এরপর আবার শুরু হয় তাদের অপকর্ম।
ফেসবুকে পেজ ও গ্রুপ খুলে কিশোর গ্যাং ‘মাষ্টারমাইন্ড’ এর জন্য সদস্য সংগ্রহ করতো শোভন। শোভনের স্বপ্ন ছিলো সে মুন্সিগঞ্জের ছাত্রলীগের বড় নেতা হবে। এ স্বপ্ন নিয়ে মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন ছাত্রনেতাদের সাথে নিয়মিত লবিং করতেন শোভন। মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে যোগ দিতেন তাদের মিছিল-মিটিংয়ে। ফেসবুকে শোভনের সাথে মুন্সিগঞ্জের একাধিক শীর্ষ ছাত্রলীগ নেতার সাথে ঘনিষ্ট ছবিও রয়েছে।
আরও পড়তে পারেন: রামপালে যুবক খুন: ঘটনাস্থলে আগে যায় শোভন, ফোন পেয়ে যোগ দেয় প্রান্ত
শোভনের বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জ সদর থানা সহ র্যাব ও বিভিন্ন সংস্থার কাছে একাধিক অভিযোগ ও মামলা রয়েছে। এসম মামলায় শোভনকে কখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এবারও শোভন গংদের হাতে যুবক খুনের ঘটনার পর স্থানীয়দের মনে প্রশ্ন জেগেছে পুলিশ-প্রশাসনের নিরবতায় আবারও কি এলাকায় ফিরে অপকর্ম করবে শোভন?
উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার (৯ জুন) বিকালে সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের কাজী কসবা এলাকায় এ মারধরের ঘটনা ঘটে। আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুন) সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নয়নের মৃত্যু হয়। নিহত নয়ন স্থানীয় রামপাল ইউনিয়নের উত্তর কাজী কসবা এলাকার মৃত বাতেন মিজির ছেলে।
নিহতের স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি নয়ন কাজী কসবা এলাকায় হাঁস-মুরগির একটি খামার তৈরি করলে রামপাল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রান্ত শেখ ও স্থানীয় কিশোর গ্যাং লিডার ও কথিত ছাত্রলীগ নেতা শোভন তালুকদার তার কাছে চাঁদা চায়। নয়ন চাঁদা না দেয়ায় এ নিয়ে নয়নের সাথে বিরোধ তৈরি হয়।
এ ঘটনার জেরে গতকাল বুধবার বিকালে কাজী কসবা এলাকায় একটি পেপার মিলের সামনে নয়নকে পেয়ে ছাত্রলীগ নেতা প্রান্ত শেখ, কিশোর গ্যাং লিডার শোভন, চঞ্চল, রনি, কাঞ্চন সহ ৭-৮ জন ধরে রড ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করতে থাকে। খবর পেয়ে নয়নের মা রাশিদা বেগম, নয়নের বোন ও স্ত্রী ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে তাদের সামনেই চাপাতি দিয়ে নয়নকে কুপিয়ে গুরুতর জখম ও আহত করে।
এসময় নয়নকে বাঁচাতে চিৎকার করলে তার স্ত্রীকেও মারধর করে প্রান্ত-শোভন। ঘটনার সময় হাতিমাড়া ফাড়ির দুইজন পুলিশ সদস্য দাড়িয়ে থাকলেও তারা নিরব ভূমিকা পালন করে। নয়নের বোন চিৎকার তাদের সাহায্য চাইলেও অজ্ঞাত কারনে তারা নিরব থাকেন।
পরে মারধরকারীরা নয়নকে মোটরসাইকেলে বেঁধে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে রাস্তার অদূরে ফেলে যায়। সেখান থেকে মূমুর্ষ আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পরে ঢাকা মেডিকেলে প্রেরণ করা হয়। বুধবার রাতে তাকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজ আবেদিন বলেন, এ ঘটনায় প্রথমে মারামারির অভিযোগ ও পরে হত্যা মামলা হয়েছে। এজহারনামীয় ৯ জন আসামীর মধ্যে ২ জনকে ধরতে আমার সক্ষম হয়েছি। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে এ হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে দুপুর দেড়টার দিকে মুক্তারপুর-টংগিবাড়ী সড়কের সিপাহীপাড়া চৌরাস্তায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। এতে কিছু সময়ের জন্য এ সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।