মুন্সিগঞ্জ ২২ অক্টোবর, ২০১৯, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সমাজে যারা একটু পিছিয়ে পড়া লোক তাদের ক্ষমতায়ন করতে হবে। যারা বিভিন্ন কারনে ভয়ে কথা বলে না তাদের কথা লিখতে হবে। যারা সব স্থানে কথা বলতে পারে শুধু তাদের কথা নয়, যারা কথা বলতে পারে না তাদের কথাও তুলে আনতে হবে গণমাধ্যমকর্মীদের।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মুন্সিগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার দুঃসময়ের সহকর্মী আজকের মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি মৃণাল কান্তি দাস। তার অবদান আওয়ামী লীগ সবসময় স্বীকার করবে।
তিনি মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত কমিটিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ভোটাভুটির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যেই কমিটি হয়েছে এবং বাংলাদেশের সকল বড় বড় গণমাধ্যমকর্মীদের মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাব যেভাবে আজ এক মঞ্চে নিয়ে এসেছে তা সত্যিই স্মরণীয়।
মুন্সিগঞ্জে আগেও এসেছেন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। দেশ থেকে দারিদ্র্য গত ১০ বছরে অর্ধেকে নেমে এসছে।
তিনি বলেন, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সমালোচনা থাকতে হবে। সেই সমালোচনা সরকারের কাজ-কর্মকে শাণিত করে।
দেশ বিনির্মানে সাংবাদিকদের ভূমিকা অনন্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নত দেশ গঠনের পাশাপাশি আমাদের দৃষ্টি হচ্ছে উন্নত জাতি গঠন করা। সমাজকে প্রতিবাদী করা তোলার পেছনেও সাংবাদিকদের ভূমিকা অনন্য। অতীতে যেমন দেশ গঠনে সাংবাদিকরা ভূমিকা রেখেছে ভবিষ্যতে উন্নত জাতি গঠনে সাংবাদিকরা ভূমিকা পালন করে যাবে।
তথ্যমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, আজকাল অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিকতা দেখতে পাই না। অনিসন্ধিৎসু সাংবাদিকতার উপর আমরা সরকারের পক্ষ থেকে পুরষ্কার দিবো। আমি সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা লেখনীর মাধ্যমে মানুষের মনন তৈরি করতে পারে। যন্ত্রের অতি ব্যবহারে মানুষের মধ্য থেকে মানবিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ আত্মকেন্দ্রীক হয়ে যাচ্ছে। মানুষকে মানবিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখতে হবে।
তথ্যমন্ত্রী এসময় মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সকল দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
প্রেসক্লাবের বিদায়ী সভাপতি রাসেল মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, মুন্সিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক মহাসচিব ওমর ফারুক, মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার, পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম পিপিএম (বার) প্রমুখ।
এসময় আরও বক্তব্য দেন, মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল ও সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ খোকা. ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকাস্থ মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি রাজু আহম্মেদ, মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক আহ্বায়ক আতিকুর রহমান, মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শহীদ-ই-হাসান তুহিন সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী সাব্বির আহম্মেদ দীপু।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস বলেন, শেখ হাসিনার সরকার সাংবাদিকদের কল্যাণে সবচেয়ে বেশি আন্তরিক। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এমন একজন পরমতসহিষ্ণু সম্পন্ন মানুষ যিনি তার বিরুদ্ধাচারণ করলেও বা তার বিরুদ্ধে কেউ সংবাদপত্রে লিখলেও তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন না।
তিনি বলেন, মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবের জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ মিটিয়ে স্থানীয় বসবাসকারীদের সরকারি জমির ব্যবস্থা করে সরকারি নিয়ম মেনে নিয়ে আমরা দুইজন সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবের বহুতল ভবনের জন্য আবেদন জানাবো।
মুন্সিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, প্রেসক্লাবে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে জয় পরাজয় হতে পারে। যারা নির্বাচিত হয়েছে তাদের অভিনন্দন জানান তিনি। এমিলি এসময় বলেন, আমি এই পর্যায়ে আসার পেছনে সাংবাদিকদের অনেক ভূমিকা রয়েছে। মুন্সিগঞ্জের সাংবাদিকরা আমাকে সবসময় সহায়তা করেছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকারের চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ড ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা সাংবাদিকদের অন্যতম দায়িত্ব। শুধুমাত্র নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করা সাংবাদিকদের কজ নয়। তিনি এসময় স্থানীয় সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস সস্পর্কে স্মৃতিচারণ করে বলেন, বিরোধীদলে থাকাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সকল প্রেসনোট আমাদের সাংবাদিকদের কাছে লিখে পৌছে দিতেন মৃণাল দা। তাই তিনি সাংবাদিকদের বাইরে নন। তিনিও সংবাদমাধ্যম প্রিয় একজন ব্যক্তি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম তার বক্তব্যে মুন্সিগঞ্জের কলা, নারকেলের চিরাভাজা নিযে স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সাংবাদিক বান্ধব সরকার। সাংবাদিকদের গণমুখি হতে তিনি এসময় আহবান জানান।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক মহাসচিব ওমর ফারুক স্থানীয় সংসদের (মুন্সিগঞ্জ-৩) সাথে বিভিন্ন সময়ের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি মুন্সিগঞ্জের সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ঢাকার বাইরে যারা সাংবাদিকতা করেন তারা সমস্যায় আছেন। তাদের বেতন–ভাতা নিয়ে মালিকপক্ষ যাতে গড়িমসি না করেন এজন্য তিনি তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তিনি এসময় আরও বলেন, অধিকাংশ জেলায় একাধিক প্রেসক্লাব। মুন্সিগঞ্জে সবাই একত্রিত। প্রধানমন্ত্রীর কাছে মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবের ৮ শতাংশ জায়গা বরাদ্দ ও বহুতল ভবনের জন্য তিনি সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে তথ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান।