পৌরভোটে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থীরা এগিয়ে থাকবে বলে ‘দলীয় জরিপ’কে পাত্তা না দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীনদের ভাগ্যে ভরাডুবিই আছে।
রোববার রাজধানীতে বিএনপিপন্থি সাংবাদিকদের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “দুর্নীতি হালাল করতে সরকার এসব জরিপের মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে। যতই জরিপ করুক, ওই মিথ্যা জরিপ দিয়ে কিছু হবে না। সত্যিকারে কী জরিপ হয়েছে আমি নিজে সেটা জানি। সেখানে তাদের ভরাডুবির কথাই লেখা আছে।
আগের দিন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, সারা দেশের ২৩৩টি পৌরসভার মধ্যে ২০১টিতে নৌকার প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন বলে তথ্য আছে।
হানিফের ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করে খালেদা জিয়া বলেন, মানুষ ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় পৌর ভোটে ধানের শীষের ভোট দিতে মুখিয়ে আছে।
“আমি জানি দেশের মানুষ অপেক্ষায় আছে ধানের শীষের ভোট দিতে। সত্যিকারভাবে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ যদি হয়, তাহলে বিএনপির ধানের শীষ ৮০ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হবেই হবে ইনশাল্লাহ।”
৩০ ডিসেম্বর ২৩৪টি পৌরসভার নির্বাচনে সবাইকে কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার আহ্বান জানান তিনি।
রোববার দুপুরে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার বিএনপিপন্থি সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন উদ্বোধন করেন খালেদা জিয়া।
পৌর ভোটে বিএনপি অংশ নেবে না- ভেবে সরকার কৌশলে ভুল করে ফেলেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচন করতে চায় এবং সকলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বিশ্বাস করে।
নির্বাচন কমিশনকে সরকারের ‘আজ্ঞাবহ’ প্রতিষ্ঠান আখ্যা হিসেবে ভোটের দিন সঠিক তথ্য তুলে ধরতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপিপ্রধান।
“আপনাদের (সাংবাদিকরা) কাছে আহবান থাকবে, ভোট কেন্দ্রের ভেতরে কী হচ্ছে সঠিক তথ্য তুলে ধরবেন। হাসিনার অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না, রকিবের নির্বাচন কমিশনের অধীনে ও রকিবের থেকে বড় দালাল কমিশনাররা আছে, তাদের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারেন না, সেটা প্রমাণ করে দিন।”
বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের চাকুরি যাবে বলে ‘আওয়ামী অপপ্রচারে’ কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বানও জানান খালেদা জিয়া।
এসময় আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও বিএফইউজের সভাপতি শওকত মাহমুদকে অবিলম্বে মুক্তি এবং আমার দেশ খুলে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
কালাকানুন দিয়ে গণমাধ্যম বন্ধের ষড়যন্ত্র
সম্মেলনে খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, সরকার তথ্য প্রযুক্তি আইনসহ (আইসিটি) নানা কালা কানুন করে আওয়ামী লীগের মতাদর্শের বাইরে অনলাইন পত্রিকা সরকার বন্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে।
“এই সরকার আইসিটি অ্যাক্ট, সম্প্রচার নীতিমালা, অনলাইন নীতিমালার মতো কালা কানুন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের পাশাপাশি সাংবাদিকদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রের হুমকির সৃষ্টি করছে। বর্তমান অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের নামে সরকার আওয়ামী লীগ মতাদর্শের বাইরে সব অনলাইন পত্রিকা ও সংস্থা বন্ধ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে।”
সরকার জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যালয় দখল করেছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
“আজ সারা দেশটা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের দখল করার মহোৎসব চলছে। তারা সব কিছু দখল করছে; জমি-জমা, বাড়ি-ঘর-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এমনকি ভোট দেওয়ার অধিকার পর্যন্ত দখল করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “দুঃখজনক হলেও সত্য আপনারা সাংবাদিক সংগঠন হওয়ার পরেও এই অনুষ্ঠানটি জাতীয় প্রেস ক্লাবে করতে পারেননি।”
সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, বিএফএউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বর্তমান মহাসচিব এম এ আজিজ এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিএফইউজের সহকারি মহাসচিব মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ ও মোদাবেবর হোসেন।
পরে বিএফইউজের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে দুপুর ২টা থেকে পুরানা পল্টনে ফটো জানার্লিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের মিলনায়তনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৩০ মার্চ বিএফইউজের নির্বাচনে শওকত মাহমুদ সভাপতি ও এমএ আজিজ মহাসচিব নির্বাচিত হন।
-বিডিনিউজ ২৪.কম