নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ঘুষ বাণিজ্য ও প্রভাবশালী দালাল চক্রের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে মুন্সীগঞ্জ সদর জোনাল অফিস কার্যালয়টি। সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, এসব দালাল চক্রগুলো কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে চালিয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ সংযোগের নামে রিডিং-মিটার, বৈদ্যুতিক তার ও খুঁটি বাণিজ্য।
যেসব গ্রাহকরা নির্দিষ্ট টাকার চাইতে অতিরিক্ত টাকা দিচ্ছে শুধু মাত্র তাদেরই মিলছে রিডিং-মিটার, বৈদ্যুতিক তার ও খুঁটি।
যারা বর্ধিত টাকার বাইরে অতিরিক্ত বড় অংকের টাকা দিতে পারছে না সেই সব গরিব অসহায় গ্রাহকদের বিদ্যুতের কোন সুযোগ-সুবিধা কোনটাই মিলছে না।
এর ফলে মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছে না প্রকৃত গ্রাহকরা।
এক অর্থে বলা যায় মুন্সীগঞ্জের সদর জোনাল অফিস কার্যালয়টি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করছে একটি ক্ষমতাসিন দলের প্রভাবশালী বহিরাগত দালাল চক্র।
এদিকে, কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও বহিরাগত দালাল চক্রের যোগসাজশে নানামুখী অনিয়ম আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সদর জোনাল অফিসটি।
এখানে আগত অসহায় গরিব গ্রাহকদের অভিযোগ, দালালদের মাধ্যমে না গিয়ে সঠিক নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করা হলেও সেটি মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর ধরে ফাইলবন্দি অস্থায় পরে থাকছে। গ্রাহকরা অফিস কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে অভিযোগ করলেও কোন সুরাহা দিতে পারছেন না।
এছাড়া কর্মকর্তারা আগত গ্রাহকদের দালালদের নাম উল্লেখ করে তাদের কাছে যেতে বলে দেয়। নচেৎ বিদ্যুতের কোন সুবিধাই পাবেন না এ ধরনের সাফ কথা বলে দেয়।
পরে অপারগ হয়ে ওই দালাল চক্রের কাছে গিয়ে নির্ধারিত টাকার ৫ থেকে ৬ গুন বেশি টাকা দিয়ে রিডিং-মিটার, বৈদ্যুতিক তার ও খুঁটিসহ ট্রান্সফরমার লাগাতে বাধ্য হচ্ছে।
আর এসব দালাল চক্রের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা খরচ করলে সহজেই মিটার, তার, খুঁটি ও ট্রান্সফরমার সংযোগ দ্রুত পাওয়া যায়।
সরেজমিনে পল্লি বিদ্যুত সমিতি অফিস থেকে আরো জানা যায়, প্রতি মিটার সংযোগের জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে সদস্য ফরম বাবদ ১০০ টাকা ও মিটার বাবদ ৬২০ টাকা নেবার নিয়ম থাকলেও আদায় করা হচ্ছে ৮ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা।
আগে আবেদন করা গ্রাহকদের আগে সংযোগ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছেনা। ওয়ারিং পরিদর্শক ও বিলিং সুপারভাইজারসহ তাদের নিয়োজিত দালালদের হাতে অতিরিক্ত টাকা না দিলে আবেদনকারীদের সংযোগস্থলে বাড়তি লোড রয়েছে বলে মিথ্যা প্রতিবেদন দেওয়া হয়। যাতে ওই গ্রাহক আরো বাড়তি টাকা দিতে বাধ্য থাকে।
এছাড়া নতুন এলাকায় সংযোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে করা হচ্ছে খুঁটি, ট্রান্সফরমার, তার ও মিটার বাণিজ্য।
তাদের ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাধারণ গ্রাহকরা অভিযোগ করে বলেন, চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক খুঁটি, তার ও মিটারের সরবরাহ না থাকার কথা বলে। পরে ব্যবস্থা করা হবে এমন কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
বৈদ্যুতিক খুঁটি বাবদ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও দালালদের মাধ্যমে খুঁটি প্রতি আদায় করা হচ্ছে ৫০ হাজার থেকে লক্ষাধীক টাকা। লক্ষাধীক টাকা দিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি পেলেও বিদ্যুত সংযোগের জন্য ঘুরতে হয় বছরের পর বছর। তখন আবার টাকা দিলে বিদ্যুত সংযোগ মিলে।
ভূক্তভুগী সাধারণ গ্রাহকরা আরো জানান, দুই থেকে তিন বছর আগের আবাসিক সংযোগের জন্য আবেদন করা হয়। আবেদনের পর পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ তদন্ত শেষে বিদ্যুতের লোড না থাকার অজুহাত দেখিয়ে সংযোগ দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেয়। তবে টাকার বিনিময়ে সেই অযুহাত আর থাকে না।
পরে যারা দালাল-কর্মকর্তাদের ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিলে নতুন সংযোগ পাওয়া যায়।
এসব অনিয়ম-দুর্নীতির প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জ পল্লি বিদ্যুত সমিতির সদর জোনাল অফিস কার্যালয়ের (ডিজিএম)-শেখ মনোয়ার মোর্শেদ এ প্রতিবেদককে জানান, আমি ভাই অতি-সাধারণ মানুষ। যতদিন যাবত মুন্সীগঞ্জের সদর জোনাল অফিসের (ডিজিএম)-এর দায়িত্বভার গ্রহন করেছি ততোদিন যাবত বিদ্যুৎ অফিসে দালাল চক্র কতটা সক্রিয় তা আমার ধারনা নেই।
তবে এসব দালালদের সনাক্ত করে তাদের দৌরাত্ম বন্ধে আমরা সর্ববাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
এছাড়াও বিভিন্য ভাবে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে দালালদের অপতৎপরতা বন্ধের জন্য চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
তবে দালালদের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুত সমিতির কেউ জড়িত থাকলে তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। অনিয়মের সঙ্গে কাউকে জড়িত প্রমান পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান প্রভাবশালী দালাল চক্রের মুল হোতা মুন্সীগঞ্জ পল্লি বিদ্যুত সমিতির সদর জোনাল অফিস কার্যালয়ের (ডিজিএম)-শেখ মনোয়ার মোর্শেদ।