মুন্সিগঞ্জ জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির গত দুই বছরে প্রায় প্রতিটি সভায় অধিকাংশ সময় মাদকের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখন পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সদর শহরের চায়ের দোকান, হোটেল, যানবাহনে, পাড়া-মহল্লাসহ লোকসমাগমের স্থানগুলোতে মানুষের কথাবার্তায় মাদকের ছড়াছড়িতে উদ্বেগের বিষয়টি উঠে আসছে।
ভোটারদের বক্তব্য হচ্ছে মাদক সেবন করেন না, মাদককে আশ্রয় ও প্রশ্রয় দেবেন না এবং মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন মেয়র ও কাউন্সিল পদে—এমন প্রার্থীদেরই বেছে নেবেন তাঁরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবারের মাদকসেবী সন্তান আছেন—এমন কয়েকজন অভিভাবক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ছেলেরা যদি সুস্থই না থাকে, তাহলে সড়ক ও নালা ব্যবস্থার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিশ্রুতি চেয়ে কী হবে। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি চাই না, আমরা চাই এই পৌরসভাকে মাদকমুক্ত করা হোক। এমন প্রতিশ্রুতি যাঁরা দেবেন, আমরা তাঁদের ভোট দেব।’
পৌর এলাকার শিক্ষক ও সুশীল সমাজের কয়েকজন বলেন, ‘এই পৌরসভায় এখন প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাদক। এর ছোবল থেকে আমাদের সন্তানদের রক্ষা করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে মাদকবিরোধী কমিটি গঠনের মাধ্যমে গণসচেতনতামূলক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এই আন্দোলনে পৌর মেয়র ও কাউন্সিলরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। পাশাপাশি তাঁরা পুলিশ ও প্রশাসনকেও চাপের মধ্যে রাখতে পারেন। এ জন্যই মাদকবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন, এমন প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দেওয়া উচিত।’
ভোটারদের এই প্রত্যাশার সঙ্গে একমত পোষণ করেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীসহ কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। এখানে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফয়সাল বিপ্লব ও বিএনপির প্রার্থী শহর বিএনপির সভাপতি এ কে এম ইরাদত, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের মহিউদ্দিন ব্যাপারী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান। ইতিমধ্যে এই পৌরসভায় বাছাই প্রক্রিয়ায় মাদক সেবনের অভিযোগে এক মামলার তথ্য গোপন করার কারণে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী রেজাউল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেছে। এ ছাড়া কাউন্সিলর পদে ৩৩ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর পদে নয়জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
একাধিক ভোটার অভিযোগ করেছেন, মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধেই মাদক সেবনের অভিযোগ আছে। তাঁদের আশপাশে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকাসক্তদের আনাগোনা রয়েছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ফয়সাল বিপ্লব বলেন, ‘সামাজিক সমস্যাগুলো দূর করাই থাকবে আমার প্রথম কাজ। মাদক নির্মূলের লক্ষ্যে সবাইকে নিয়ে কাজ করব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী এ কে এম ইরাদত বলেন, ‘পারিবারিক অশান্তি, বিবাহ বিচ্ছেদের মতো ঘটনা ঘটছে এই মাদকের কারণে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সভায় এই মাদক নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে বেশি। আবার মেয়র নির্বাচিত হলে মাদকমুক্ত পৌরসভা গঠনে উদ্যোগী হব।’
প্রথম আলো