মুন্সিগঞ্জে তিনশ’ থেকে চারশ’ মেগাওয়াট সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২৮৩ কোটি ২৯ লাখ টাকার প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
মঙ্গলবার রাজধানী শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ মোট ৫টি প্রকল্প আজ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৮৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। যার মধ্যে ৯৭৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা দেবে সরকার (জিওবি) এবং প্রকল্প সাহায্য পাওয়া যাবে বাকি ১৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা’।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সবগুলো বিভাগীয় অফিস যেন একই রকম নকশায় নির্মাণ করা হয়, সেজন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাছাড়া রংপুর বিভাগীয় অফিসে অডিটরিয়াম ১০ তলায় না করে নিচ তলায় করার নির্দেশনা দিয়েছেন। যাতে দুর্ঘটনা ঘটলে মানুষ সহজেই বের হতে পারেন’।
এছাড়া ঢাকা সেনানিবাসে ডাইরেক্টর জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) এর অফিসার্স মেস কমপ্লেক্স ও বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্পটি ১৪ তলা ফাউন্ডেশন হলেও প্রধানমন্ত্রী আপাতত সেটি সাত তলা পর্যন্ত নির্মাণ করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
একনেক সভায় অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো ৩৭৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে পানি সংরক্ষণ ও নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে জেলা পরিষদের পুকুর, দিঘি জলাশয়সমূহ পুনঃখনন সংস্কার প্রকল্প, ৭৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে রংপুর বিভাগীয় সদর দফতর নির্মাণ প্রকল্প, ২৮৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলায় ৩শ’থেকে ৪শ’মেগাওয়াট সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন প্রকল্প, ১০২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয় রূপগঞ্জ জলসিড়ি আবাসন সংযোগকারী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ১৫০ কোটি ব্যয়ে ঢাকা সেনানিবাসে ডাইরেক্টর জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) এর জন্য আনুষঙ্গিক কাজসহ অফিসার্স মেস কমপ্লেক্স ও বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্প।
জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার দেশের বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে ২০১০ সালে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করে। এই মাস্টার প্ল্যানে গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লাকে প্রধান জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে জ্বালানি বহুমুখীকরণে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়। ২০৩০ সাল নাগাদ মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৫০ শতাংশ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইজিসিবি লিমিটেড মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া ও মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩শ’ থেকে ৪শ’ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক সুপার ক্রিট্রিক্যাল টেকনোলজির বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
এর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ ৩শ’ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি মেঘনা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ভারি যন্ত্রপাতি ও পরিচালনে প্রয়োজনীয় কয়লা পরিবহনে সুবিধাজনক হবে।
প্রস্তাবিত ৩শ’ একর ভূমিতে বয়লার, টারবাইন, চিমনি, পানি শোধনাগার এবং বার্জ হতে কয়লা মজুদ ব্যবস্থাপনার জন্য জেটি ইত্যাদি স্থাপনাসম্পন্ন অধিক দক্ষতার ৩শ’ থেকে ৪শ’ মেগাওয়াট সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হবে।