৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
মঙ্গলবার | সকাল ৬:২৭
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
মুন্সিগঞ্জে স্বাস্থ্যকর্মী-চিকিৎসকদের মধ্যে করোনা বাড়ছেই
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১৩ মে, ২০২০, রিয়াদ হোসাইন (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জের ছয় উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কোনো মৃত নেই, অপরদিকে খুশির সংবাদ হচ্ছে করোনামুক্ত হয়েছেন আরো ৯ জন। এ নিয়ে জেলায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩০ জন। নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আরো ১২ জন। ফলে জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা তিন’শ ছাড়ালো।

এরমধ্যে সরকারি হাসপাতাল গুলোতে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত ৬১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১০ জন চিকিৎসক, ১৯ জন নার্স, একজন মৃতসহ ৩ জন স্বাস্থকর্মী এবং ২৯ জন স্বাস্থ্য বিভাগে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মী রয়েছে। অন্যদিকে পুলিশ প্রশাসনের পুলিশ পরিদর্শকসহ ১১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। 

বুধবার (১৩ মে) দুপুরে এ তথ্য জানান মুন্সিগঞ্জ সিভিল সার্জন আবুল কালাম আজাদ। স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন দ্রুত আক্রান্ত হতে থাকায় চিকিৎসা সেবা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক ও স্থানীয়রা। 

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে নমুনা ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকে আক্রান্তদের তথ্য পেতে ৩-৪ দিন সময় লেগে যাচ্ছে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে ৬১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত ২৯ কর্মীর মধ্যে স্টাফ, ল্যাব টেকনিশিয়ান, ফিল্ড অফিসার, ওয়ার্ড বয়সহ স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। 

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চিকিৎসকদের মধ্যে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের দু’জন, সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চারজন, গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দু’জন এবং টংগিবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও সিভিল সার্জন অফিসের একজন করে  মোট ১০ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়।

নার্সদের মধ্যে সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নয়জন, লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চারজন, মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে তিনজন ও স্বাস্থ্যকর্মী তিনজন রয়েছেন। বাকি ২৯ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত।

চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলেন, জেলায় প্রায় ১৬ লাখ মানুষের বাস। মুন্সিগঞ্জে দ্রুত আক্রান্তের সংখ্যা  বাড়ছে। এর মধ্যে দিনদিন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য বিভাগের নতুন নতুন সংখ্যা যোগ হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হাসপাতাল গুলো চিকিৎসক শূন্য হয়ে পড়বে।এতে করে করোনা রোগীর পাশাপাশি সাধারণ রোগীরাও সেবা নিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়বে।

তবে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নতুন করে মুন্সিগঞ্জ জেলায় ১৭ জন চিকিৎসককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের আপাতত মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা আইসোলেশন সেন্টারে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া লৌহজং উপজেলার সামুরবাড়িতে ইউনাইটেড হাসপাতালের ১৪ শয্যার আইসোলেশন সেন্টারে কিছু সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানান সিভিল সার্জন।

অপরদিকে, নতুন ৯ জন সহ জেলার পাঁচ উপজেলায় ৩০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এর মধ্যে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় ৮ জন, সিরাজদিখান উপজেলায় ৮ জন, শ্রীনগর উপজেলায় ৮ জন, টংগিবাড়ী উপজেলায় ৪ ও গজারিয়া উপজেলায় ২ জন রয়েছেন।

এদিকে, মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী, লৌহজং , শ্রীনগর ও গজারিয়া উপজেলায়  নতুন করে আরো ১২ জনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩০৪ জনে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে, টংগিবাড়ী উপজেলা ২ জন, গজারিয়া উপজেলায় ৩ জন, শ্রীনগর উপজেলায় ৩জন ও লৌহজং উপজেলায় ৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

মুন্সিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা: আবুল কালাম আজাদ বলেন, করোনার উপসর্গ লুকিয়ে রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার ফলে এমনটা হয়েছে। আক্রান্তদের জন্য রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হবেনা। মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ১৭ জন নতুন চিকিৎসক দেওয়া হয়েছে। অসুস্থরাও সুস্থ হওয়ার পথে।

তিনি মনে করেন একটা সময় পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা বাড়বে। এরপর থেকে আবার কমতে থাকবে। তবে কবে নাগাদ কমবে সেটা সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছেনা।

তিনি পরামর্শ হিসেবে বলেন, কারো মধ্যে সামান্য পরিমাণে উপসর্গ দেখা দিলে অথবা সন্দেহ হলে চিকিৎসকের পরামর্শসহ করোনা পরীক্ষা করতে হবে। নমুনা দেওয়া পাশাপাশি আইসোলেশনে থাকতে হবে। রোগীর স্বজনদেরও সচেতন হতে হবে। জেলার সকল মানুষ সরকারি নির্দেশনা গুলো মেনে চললে রোগটিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়াও তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, রমজানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানান।

error: দুঃখিত!