“যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে, চুকিয়ে দেব বেচা-কেনা, মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনা-দেনা, বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে…তখন আমায় নাই বা মনে রাখলে, তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাই বা আমায় ডাকলে…” সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহিন মো. আমানউল্লাহর কণ্ঠের এই সঙ্গীত দিয়ে মুন্সিগঞ্জে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৮তম প্রয়াণ দিবসের আয়োজনটি শুরু হয়।
অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও ২২ শে শ্রাবনের এই আয়োজন করে মুন্সিগঞ্জের ‘অন্বেষণ বিক্রমপুর’। এই গানের পর কবিগুরুকে নিয়ে আলোচনা করেন সরকারি হরঙ্গগা কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাজমূল হোসাইন। আলোচনার মাঝেই রিমঝিম বৃষ্টি…। চলে যায় বিদ্যুৎ। কিন্তু আলোচনা থামে না। বিষদ এই আলোচনার মাঝেই বিদ্যুৎ ফিরে আসে। আলোচনাটি দীর্ঘ হলেও অতিথি এবং শ্রোতারা মনোযোগ দিয়ে তৃপ্ত মনে শ্রবণ করছিলেন। কিন্তু এর পরের পরিবেশনাটি কোনওভাবেই কম আকর্ষণীয় ছিল না। মৌতিষা ভট্টাচার্য নিপুণভাবে আবৃত্তি করেন কবিগুরুর “নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ”। সকলকে তাক লাগিয়ে দেন।
এরপরই গানের সুরে মুগ্ধ করে শ্রোতাদের। “আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে…” রবীন্দ্রসঙ্গীতটি চমৎকারভাবে পরিবেশন করে ক্ষুদেশিল্পী রিয়া মনি। গানের পরে আবার কবিতা। এবার কবিতা আবৃত্তি করেন প্রবীণ আবৃত্তিকার অধ্যাপক তমাল ঘোষাল। তিনি আবৃত্তি করেন, “এবার ফিরাও মোরে…”। মন্ত্রমুগ্ধের মত শ্রবণ করেন সকলে। আর শেষ পরিবেশনা ছিল আওলাদ হোসেনের কণ্ঠে “এত দিন যে বসেছিলেম পথ চেয়ে আর কাল গুনে, দেখা হল ফাল্গুনে…”। ২২ শ্রাবণ উপলক্ষে কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে এবং শোকের মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আত্মার মাগফিতরাত কামনা করে এরপর প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদারের চমৎকার ভাষণ উপস্থিত সকলকেই মুগ্ধ করে। সবশেষে সকলকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সভাপতির ভাষণ উপস্থাপন করেন অন্বেষণ বিক্রমপুরের সভাপতি মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল। আর এসব কিছুর মালা গেঁথে চমৎকার অনুষ্ঠানের পরিপূর্ণ সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন অভিজিৎ দাস ববি।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে অংশ নেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) খান মো. নাজমুস সোয়েব, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দিপক রায় ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুল রায়হান।
ধলেশ্বরী তীরের সভ্যতার জনপদ মুন্সিগঞ্জে শ্রাবনে এই আয়োজনে গানে কবিতা ও আলোচনায় আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছিল সৃজনশীলতার বাণী। এই আসর থেকে যেন আলোক ছড়াচ্ছিল। ছোট পরিসরে হলেও বড় মানুষদের এক মিলন মেলায় পরিনত হয় আয়োজনটি।
এতে অতিথি হিসাবে আরও অংশ নেন মুন্সিগঞ্জ পিটিআই সুপার মো. কামরুজ্জামান, এনডিসি রফিকুল ইসলাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউল ইসলাম হিরু, বিশিষ্টি চিত্র শিল্পী সেন্টু সরকার, প্রবীণ তবলা প্রশিক্ষক কমল ব্যানার্জী, পিপিআইএম রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ফারহানা মির্জা, সংগীত প্রশিক্ষক অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান আবুল, নাট্যকার জাহাঙ্গীর আলম ঢালী, মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট সুজন হায়দার জনি, মুন্সিগঞ্জ থিয়েটারের সাবেক সভাপতি হুমায়ূন ফরিদ, প্রবীন নাট্যাভিনেতা মোশারফ হোসেন, শিক্ষক সাইফুল্লাহ ভূইয়া, সঙ্গীত শিল্পী নজরুল ইসলাম, নাট্য সংগঠক মো. রানু, মুন্সিগঞ্জ থিয়েটারের আহ্বায়ক মো. দুলাল হোসেন, মুন্সিগঞ্জ এপেক্স ক্লাবের সাবেক সভাপতি রতন চক্রবর্তী, বিক্রমপুর এপেক্স ক্লাবের সাবেক সভাপতি আয়নাল হক স্বপন, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সাইফুর রহমান, লেখক মাহবুব আলম জয়, মুন্সিগঞ্জ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠির সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন, শিশুদের লাইব্রেরীর প্রতিষ্ঠাতা মো. ফারুক হোসেন, অভিনেতা মো. শামীম ও মিরেশ্বরাই প্রতিভাবান সংগঠনের সভাপতি মো. সুমন প্রমুখ।