মুন্সিগঞ্জ, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জে মহাসড়কে প্রকাশ্যে অন্তত ৫ রাউন্ড গুলি করে এক নারীকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার নেপথ্যে পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ওই নারীর প্রেমিক তৌহিদকে সন্দেহ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই সূত্র ধরেই এগোচ্ছে তদন্ত। সাধারণ মানুষ বলছে- ব্যস্ততম একটি সড়কে এভাবে খুনের পেছনে খুনীর দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ কাজ করেছে। কেউ কেউ বলছেন- এটি অভিযুক্ত সাইকো প্রেমিকের কাজ।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার কোলাপাড়া ইউনিয়নের দোগাছি ফুটওভার ব্রিজের অদূরে ঢাকামুখী সার্ভিস লেন থেকে উপুর অবস্থায় গুলিবিদ্ধ নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সকাল ৮টার দিকে স্থানীয়রা প্রথম মরদেহ দেখতে পান। পরে খবর পৌছায় পদ্মা সেতু উত্তর থানা ও সেতুর নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকা পেট্টোল টিমের কাছে। তারা জানান শ্রীনগর থানা পুলিশকে।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, ভোরে ওই নারীকে পদ্মা সেতু উত্তর থানা সংলগ্ন খান বাড়ি সিএনজি স্ট্যান্ড এলাকা থেকে মুখে দাড়িওয়ালা এক যুবকের সাথে মহাসড়কের সার্ভিস লেনে হেটে এগোতে দেখা যায়। এর আগে সেখানে তর্কে জড়ান তারা। চড়-থাপ্পড় দিতে দেখা যায় নারীকে। তবে গুলি করতে দেখেননি কেউ।
বেলা পৌনে এগারোটার দিকে ঘটনাস্থলে এসে মরদেহের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা পরিচয় সনাক্তের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বিকালে নিহত নারীর সাথে থাকা মোবাইলের সিমের সূত্র ধরে ওই নারীর পরিচয় সনাক্ত করে থানা পুলিশ। পরে খবর পেয়ে ছুটে আসেন পরিবারের সদস্যরা।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, নিহত সাহিদা রাজধানী ঢাকার ওয়ারিতে পরিবারের সাথে থাকতেন ও নারিন্দা এলাকার বলধা গার্ডেন সংলগ্ন জনৈক কামাল মিয়ার বাড়িতে দেখাশোনার (ডে-কেয়ার) কাজ করতেন। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি গ্রামের মৃত মো. মোতালেবের মেয়ে তিনি। তারা ২ ভাই ও ৩ বোন। তাছাড়া ৭-৮ বছর আগে সাহিদার একটি বিয়েও হয়েছিলো। পরে সেই সম্পর্ক টিকেনি।
নিহতের মা জরিনা খাতুন বলেন, ‘মুখে দাড়িওয়ালা তৌহিদ নামের এক যুবকের সাথে প্রেমের সম্পর্কের সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করতেন সাহিদা। তাদের মধ্যে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে প্রায়ই মারামারি হতো। এমনকি আমি নিজেও ওই যুবকের কাছে মারধরের শিকার হয়েছি বেশ কয়েকবার।’
তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে আমি প্রেমের বিষয়টি মেনেও নেই। কিন্তু ছেলের পরিবার মানতে চাইতো না। আমার কাছে ছেলের মা বিয়ে বাবদ ১০ লাখ টাকাও চায়। আমি বাসা-বাড়ি কাজ করে খাই। ১০ লাখ টাকা কোথা থেকে দিবো! কয়েক মাস আগে চাঁদপুরে গিয়ে আপত্তিকর অবস্থায় তৌহিদ-সাহিদা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। থানা থেকে আমাকে খবর দেয়া হলে আমি রাগে-ক্ষোভে যাইনি। পরে ছেলের পরিবারের সদস্যরা গিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে দুইজনকে। তবে আমার ছেলেটাকে সুবিধার মনে হতো না- শুনেছি সে গাঁজার ব্যবসা করে। আমি প্রায়ই আমার মেয়েকে বলতাম এই ছেলের সাথে এভাবে যেখানে সেখানে ঘোরাঘুরি না করতে। কিন্তু আমার কথা শুনতো না।’
নিহতের মা জরিনা আরও বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার রাত ১১ টার দিকে সাহিদা আমাদের সাথে বাসায়ই ছিলো। এমন সময় ফোনে ডেকে নেয়া হয় সাহিদাকে। পরে শনিবার দুপুরে আমার মেয়েকে গুলি করে হত্যার খবর পাই পুলিশের কাছ থেকে। আমি শুনেছিলাম ছেলের বাড়ি বিক্রমপুর। মনে হয় ওই ছেলেই আমার মেয়েকে এখানে নিয়ে এসে হত্যা করেছে।’
মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ ফিরোজ কবির বলেন, ‘পরিবারের কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগ শুনেছি। অভিযোগগুলো আমলযোগ্য। কথিত প্রেমিকের সাথে দ্বন্দের বিষয়গুলো সামনে রেখে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ। শীঘ্রই ঘটনা উদঘাটন হবে।’
তিনি বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’