কাজী সাব্বির আহমেদ দীপুঃ
বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই খরস্রোতা পদ্মা উত্তাল। সেই পদ্মার বুকে আছড়ে পড়ছে বড় বড় ঢেউ, সঙ্গে স্রোতের তীব্রতায় মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের নদী-তীরবর্তী গ্রামগুলোতে চলছে খরস্রোতা পদ্মার ভাঙন তাণ্ডব। গত তিন দিনের লৌহজং উপজেলার খড়িয়া গ্রামের ১০টি পরিবারের ভিটেমাটি বিলীন হয়ে গেছে পদ্মায়। ঝুঁকিতে রয়েছে খড়িয়া গ্রামের আরও প্রায় ৩০ পরিবার, মসজিদ ও বিভিন্ন স্থাপনা। খরস্রোতা পদ্মার থাবায় ক্রমেই ভাঙনের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে নদী-তীরবর্তী গ্রামগুলোতে দেখা দিয়েছে ভাঙন আতঙ্ক। রাতের নীরবতায় উত্তাল পদ্মায় বড় বড় ঢেউয়ের গর্জনের শব্দ ভয়ঙ্কর হওয়ায় আকস্মিক ভাঙনের ভয়ে নদী-তীরবর্তী গ্রামের শত শত মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন বলে জানা গেছে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে পদ্মা রুদ্রমূর্তি ধারণ করায় লৌহজংয়ের গাঁওদিয়া, কুমারভোগ ইউপির শিমুলিয়া বাজার, খড়িয়া গ্রাম, মেদিনীমণ্ডল ইউপির কান্দিপাড়া গ্রাম, যশলদিয়া গ্রাম, মাওয়া পুরাতন ফেরিঘাটসহ তীরবর্তী গ্রামগুলোতে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নদী-তীরবর্তী এসব গ্রামের শতাধিক পরিবার তদের বসতবাড়ি ভেঙে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া লৌহজংয়ের ছয়টি গ্রামের দুটি বাজার, একাধিক মসজিদ, মাদ্রাসা, বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদসহ নানা স্থাপনা ভাঙনের মুখে রয়েছে।
অন্যদিকে, লৌহজংয়ের মতো টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া, হাসাইল বানারী ইউনিয়নের নদী-তীরবর্তী গ্রামগুলোতেও পদ্মার ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় ভাঙনের মুখে থাকা একাধিক পরিবার ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন ভাঙন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শুক্র ও শনিবার দিনভর পদ্মার ভাঙন থেকে রক্ষায় বাড়িঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কাজে ব্যস্ত ক্ষতিগ্রস্তরা। পদ্মার বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছিল খড়িয়া গ্রামের বিভিন্ন বসতবাড়ির আঙিনায়। এদিকে, উপজেলা সদরের লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়ন, সামুরবাড়ী, হারিদিয়া, ডহরী ও বেজগাঁও গ্রামেও নদীভাঙন চলছে।
লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য রুহুল আমিন বলেন, পদ্মার ভাঙনে ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কোথাও দ্রুত, কোথাও ধীরগতিতে ভাঙন চলছে। নদী-তীরবর্তী গ্রামগুলোতে বসতবাড়ি ছাড়াও বিস্তীর্ণ ফসিল জমি পদ্মায় চলে যাচ্ছে। লৌহজংয়ের গাঁওদিয়া, কুমারভোগ ইউপির শিমুলিয়া বাজার, খড়িয়া গ্রাম, মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের কান্দিপাড়া গ্রাম, যশলদিয়া গ্রাম, মাওয়া পুরাতন ফেরিঘাটসহ পদ্মা-তীরবর্তী গ্রামগুলোতে এখন ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এসব গ্রামে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে একাধিক পরিবার বসতবাড়ি ভেঙে নিয়ে গেছে। বর্তমানে লৌহজংয়ের ছয়টি গ্রামের দুটি বাজার, একাধিক মসজিদ, মাদ্রাসা, বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙনের মুখে রয়েছে। এমনকি লৌহজং-বেজগাঁও-গাঁওদিয়া বেড়িবাঁধটি পদ্মার স্রোতে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছে গ্রামবাসী।
কুমারভোগ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাকির হোসেন জানান, গত দু’দিনে অন্তত ৬০ হাত এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। খরস্রোতা পদ্মা এখন খড়িয়া গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি বলেন, নদীভাঙনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছয়টি ঘরবাড়ি ভেঙে নিতেও কষ্ট হচ্ছে, প্রতিনিয়তই এগোচ্ছে রাক্ষসী পদ্মা। তার মতো প্রতিবেশী জিন্নত আলী, সুজন শেখ, রিমা আক্তারও একই দুর্ভোগের কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। একই গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য রফিজউদ্দিন জানান, মাসের পর মাস নদীতীরে ভারী জাহাজ ও ট্রলার নোঙরে রাখায় ভাঙনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি নদীতীরে জাহাজ নোঙর করায় বিনিময়ে টাকা হাতিয়ে নিলেও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি তোয়াক্কা করেনি।
লৌহজংয়ের ইউএনও মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খান বলেন, পদ্মার ভাঙনের বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্নিষ্টদের। খড়িয়া গ্রামটি পদ্মা সেতু প্রকল্পের নদী শাসনের আওতায় রয়েছে। আগামী অর্থবছর ভাঙনরোধে কাজ করা হবে বলে সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন।