১৯শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | সকাল ৯:২৫
মুন্সিগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা আসিফ হত্যাকান্ড; বিচার নিয়ে আক্ষেপ সবার
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের চাঞ্চল্যকর ছাত্রলীগ নেতা আসিফ হাসান হত্যার তিন বছর হচ্ছে আজ। এ ঘটনায় হওয়া হত্যা মামলার তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিলের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও চার্জ গঠন করা হয়নি।

এ সুযোগে চার্জশিটভুক্ত আসামিরা জামিনে বের হয়ে মামলা প্রত্যাহারের জন্য বাদীপক্ষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং আসামি মাসুদ রানা জামিনে বের হয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্ণ ও আদালতে চার্জশিট দাখিলের দুই বছর পরও চার্জ গঠন না হওয়ায় বাদীপক্ষ, সিরাজদিখান আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ অবস্থায় মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনারও দাবি জানিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও নিহতের পরিবার।

তবে মামলার আসামিপক্ষ অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য সময় এবং একই সঙ্গে মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আদালতে পৃথক আবেদন করায় এখনও চার্জ গঠন করা হয়নি বলে জানান মুন্সিগঞ্জ জেলা দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন।

মামলার বাদী নিহত আসিফের বাবা হাবিবুর রহমান জানান, সিআইডি চার্জশিট দাখিলের পর ১৩টি তারিখে আদালতে উপস্থিত হলেও প্রয়োজনী কাগজপত্র নেই বলে বার বার মুলতবি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মামলাটি জেলা দায়রা জজ আদালতে বিচারক হোসনে আরা বেগমের আদালতে আছে। আদালতে চার্জ গঠন হতে দেরি হওয়ায় চার্জশিট ভুক্ত আসামিরা জামিনে বেরিয়ে এসে মামলা প্রত্যাহারে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। মামলার চার্জশিটভুক্ত ৮ নাম্বার আসামি মাসুদ রানা জামিনে এসে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমার ছেলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিল। মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়া ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করায় ক্ষুব্ধ প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই। আসিফ হত্যার বিচার দ্রুত শেষ করতে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণও করেছেন আসিফের বাবা।

আসিফের বোন জেলা ছাত্রলীগের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক তনিমা রহমান বিন্দু বলেন,‘কোন সংগঠনের কর্মী পরিচয়ে নয়। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবেই আমি আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই। যার এর সাথে জড়িত তাদের আস্ফালন দেখতে চাই না’

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহম্মেদ পাভেল বলেন, ‘আসিফ হত্যাকান্ডের ঘটনাটি একটি লোমহর্ষক ঘটনা। এ ঘটনায় যারা জড়িত তারা একটি অশুভ চক্র। এরা এখনো বিভিন্নভাবে আসিফের পরিবারের উপর চাপ সৃষ্টি করে রেখেছে বলে শুনেছি। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করবো বিষয়টির উপর গুরুত্বারোপ করার’

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল রাতে কোলা ডাকঘরের পাশে আসিফকে পিটিয়ে গুরতর জখম করা হয়। সিরাজদিখান থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়ারদৌস গুরুতর অসুস্থ আসিফের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা না নিয়েই কারাগারে পাঠিয়ে দেন। পাচঁদিন পরে ১৭ এপ্রিল ভোর ৫টার দিকে সন্ত্রাসী হামলায় মাথায় আঘাতজনিত কারণে আরো অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ৬টার দিকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর সকাল ৭টার দিকে মারা যান। এঘটনার প্রতিবাদে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ও মহাসড়ক অবরোধ করে এই হত্যার বিচার দাবি করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এদিকে মামলাটি সিআইডি দীর্ঘ এক বছর ঘটনার অনুসন্ধান করে ১১ জনকে এই হত্যার সঙ্গে অভিযুক্ত করে ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। এরপর থেকেই আদালতের পক্ষ থেকে চার্জ গঠনের জন্য বার বার তারিখ পরিবর্তন করা হচ্ছে।
[one_sixth_last]

error: দুঃখিত!