কাজী সাব্বির আহমেদ দীপুঃ
আর ছয় দিন পরেই কোরবানির ঈদ। মুন্সিগঞ্জের বেশিরভাগ খামারের মোটাতাজা গরুগুলো এখনও রয়েছে অবিক্রীত। দেশের বিভিন্ন জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ায় লোকসানের আশঙ্কায় খামারে বসেই গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন খামারিরা। ঈদ এগিয়ে এলেও ক্রেতাদের তৎপরতা নেই গরুর খামারগুলোতে। এ অবস্থায় কোরবানির ঈদে জেলার ২ হাজার ২৪টি খামারে থাকা ২০ হাজার গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামার মালিকরা।
মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার পূর্ব শিলমন্দি এলাকার খামার মালিক সোহরাব শেখ জানান, দীর্ঘদিন ধরে খামার ব্যবসায় জড়িত থাকলেও কোরবানির গরু বিক্রিতে চলতি বছরের মতো এমন ক্রেতার অভাব বিগত বছরগুলোতে দেখা যায়নি। তার খামারে থাকা মোটাতাজা ৩২টি গরুর মধ্যে ২১টি গরু খামারেই বিক্রি করে ফেলেছেন। সোহরাব শেখ জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়া ও নানা সমস্যার কারণে লোকসানের আশঙ্কায় থাকায় ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা লাভে বিক্রি করে দেওয়া হয় ২১টি গরু। বাকি ১১টি গরু সোনারগাঁ হাটে নিয়ে গেছেন বিক্রি করতে।
একই এলাকার অপর খামার মালিক মো. রোস্তম শেখ জানান, গত বছর কোরবানির ঈদের এক মাস আগেই ৮টি গরু খামারে গিয়েই ক্রেতারা কিনে নিয়ে গেছে। আর ঈদ আসতে ছয় দিন বাকি থাকলেও এবার তিনি ৫টি গরু বিক্রি করেছেন। এখনও খামারে ১২টি গরু রয়েছে।
খামার মালিক সোহরাব শেখ জানান, তাদের মতো মুন্সিগেঞ্জের খাসকান্দি, পূর্ব শিলমন্দি এলাকার আমির ব্যাপারীর ২০টি, আলামিন মিয়ার ২২টি, শরীফ ব্যাপারীর ২৬টি, নুরুল ইসলাম বাবুর্চির ১০টি, বাদশা মিয়ার ১০টিসহ অন্যান্য খামার মালিকের একই অবস্থা। এসব খামার মালিক নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন হাটে গরু বিক্রি করতে চলে গেছেন। স্থানীয় একাধিক খামার মালিক জানান, এক সময় মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমে ছিল তেলের ঘানি, ধান-চালের মিল। তাই খুব সস্তায় খৈল, ভুষি, খুদ-কুঁড়া পাওয়া যেত। এখন চালের মিল থাকলেও খৈল, ভুষি, কুঁড়ার দাম বেশি। ৫০ কেজি চালের কুঁড়া ৮শ’ টাকা, ৫০ কেজি চালের খুদ ১৭শ’ ৫০ টাকা, ৩৫ কেজি গমের ভুষি ১৩শ’ টাকা। ফলে গরু মোটাতাজাকরণে প্রচুর খরচ বৃদ্ধি পেলেও খামার মালিকরা কোরবানির হাটে গরু বিক্রি করে একটু লাভের আশায় লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। কোরবানির হাটগুলোতে বিক্রি করার লক্ষ্যে এক বছর আগে থেকেই লালন-পালন করে বানিয়েছেন মোটাতাজা গরু। খামার মালিকরা জানান, দেশের বিভিন্ন জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেওয়ায় খামার মালিকদের আয়ের স্বপ্ন এখন হতাশায় রূপ নিয়েছে।
মুন্সিগঞ্জ সদরের এনায়েতনগর গ্রামের একাধিক খামার মালিক জানান, ঢাকায় মিরকাদিমের গরুর চাহিদা অনেক। তাই কোরবানি ঈদের ৭-৮ মাস আগেই তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছোট ও বাছাই করা গরু কিনে আনেন। বিশেষ করে বাজা গাভী, খাটো জাতের বুট্টি গরু, নেপালি, সিন্ধি জাতের গরু আনা হয়। প্রতিটি গরু ক্রয়ে মূল্য পড়ে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। মোটাতাজা করতে খরচ পড়ে আরও ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এতে সর্বমোট খরচ পড়ে এক লাখ টাকারও বেশি। তাদের দাবি, একটি গরুর পেছনে অনেক টাকা খরচ হয়। যত্ন নিতে হয় অনেক বেশি। কিন্তু কোরবানির হাটে বিক্রি করে তেমন লাভবান হওয়া যায় না। তবে ঐতিহ্য ধরে রাখতে বাপ-দাদার এ ব্যবসায় কিছু খামারি কোনোমতে টিকে আছে। এর মধ্যে বন্যার পানি খামারিদের জন্য দুর্বিষহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। ফলে দেখা দিয়েয়ে ক্রেতার অভাব।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে জেলার ৬টি উপজেলায় ২ হাজার ২৪টি গরুর খামারে প্রায় ২০ হাজার গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। এর মধ্যে ষাঁড়ের সংখ্যা ৯ হাজার ৪শ’ ৫৭, গাভীর সংখ্যা ২ হাজার ৬শ’ ৩৮, বলদের সংখ্যা ২ হাজার ৪৪টি। এ ছাড়া খাটো জাতের বুট্টি, নেপালি, সিন্ধিসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার গরু মোটাতাজা করে প্রস্তুুত রেখেছে খামারিরা। অন্যদিকে ছাগল রয়েছে ১৩শ’ ২৯টি। ভেড়া ৩২৫টি।