মুন্সিগঞ্জ, ২৬ জুন, ২০২০, জসীম উদ্দীন দেওয়ান (আমার বিক্রমপুর)
করোনায় ভয়াবহ সংক্রমণে পড়া জেলা মুন্সিগঞ্জে নেই তেমন কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা। করোনা ইউনিটে এই পর্যন্ত ১০৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছে, যার মধ্যে মারা গেছে ১২ জন, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭২ জন, বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৫ জন। ১৭ লাখ মানুষের এই জেলায় আক্রান্ত ১৯১৪জন।
করোনার সুচিকিৎসা ব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে নাগরিক সমন্বয় পরিষদ মুন্সিগঞ্জ। চিকিৎসা ব্যবস্থা সংকটের কথা স্বীকার করে, অচিরেই চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধির পদ্ধতি বাড়ানোর কথা জানান, জেলা সিভিল সার্জন ডা: আবুল কালাম আজাদ।
৩ এপ্রিল থেকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে করোনা শনাক্তের নমুনা সংগ্রহ শুরু করে দুইজন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট শহিদুল ইসলাম এবং মো: আব্দুস সালাম। টানা তিন মাস ধরে সকাল থেকে দুপুর বা কখনো বিকাল পর্যন্ত তাদের ঐকাত্মিক চেষ্টায় চার হাজারের ওপর নমুনা সংগ্রহ করার পরও নিজেদের সতর্কতার কারণে নিজেদের মতো সুস্থ আছে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট শহিদুল ইসলাম জানান, মানুষের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করতে যেয়ে টানা তিন মাস পরিবারের সকলের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন। কারণ প্রতিদিন শতেক খানেক লোকের নমুনা সংগ্রহ করতে হয়। প্রতিদিনই ঝুঁকিতে থাকায় পরিবারের সদস্য থেকে আলাদা থেকে দিন কাটাতে হয়। সরেজমিনে জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় প্রতিদিন সকাল আটটার পর থেকেই নমুনা দিতে লাইন ধরতে থাকেন করোনার উপসর্গ থাকা বা উপসর্গহীন ব্যক্তিরা। তবে নমুনা দেওয়ার তালিকায় নাম বসানোর আগে, নতুন ভবনের নীচ তলায় ফ্লু কর্ণারে মেডিসিন ডাক্তারের অনুমোদন পেতে হয়
তবে ডাক্তার সকালে এসে ১০ টার মধ্যে রোগীদের দেখা শুরু করার কথা থাকলেও, যথা সময়ে পেরিয়ে গেলেও উপস্থিত না হওয়ার কারণে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় নমুনা দিতে আসাদের। অন্য দিকে ফলো আপ টেষ্ট করতে আসা করোনায় আক্রান্তদের অভিযোগ, তারা বাড়িতে আইসোলেশনে থাকলেও, তাদের চিকিৎসা সম্পর্কিত কোন পরামর্শ কোন দিন মিলেনি স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে।
ভিন্ন চিত্র মিলে করোনা ইউনিটে ভর্তি থাকা রোগীদের চিকিৎসা সেবার কক্ষে।
করোনা ইউনিটের চিকিৎসক ডা: সঞ্জিতা সরকার বলেন, সংকটের ভেতরেই অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন তারা।
তিনি বলেন, মৃদু উপসর্গের রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা এখানে থাকলেও, মাঝে মাঝে জটিল উপসর্গ রোগীদের তাদের চিকিৎসা দিতে হয়। ভেনটিলেটর বা আইসিও না থাকায় অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়েই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয় তাদের। অনেক রোগী রেফার্ড করলেও তারা যেতে রাজি হয়না।
জেলার চিকিৎসা ব্যবস্থার এই সংকট থেকে জেলাবাসীকে বাঁচাতে করোনার নমুনা পরিক্ষার ল্যাব এবং সুচিকিৎসা নিশ্চয়তা চেয়ে আন্দোলনে নেমেছে নাগরিক সমন্বয় পরিষদ মুন্সিগঞ্জ। আর এসব কিছু গুরুত্বসহ বিবেচনায় আনা হচ্ছে বলে জানান সিভিল সার্জন।
সিভিল সার্জন আরো জানান, রেড জোনের গাইড লাইনে রয়েছে অধিবাসীদের মধ্যে লাখে ১০ জনের ওপরে আক্রান্ত হলে সে অঞ্চলকে রেডজোন ঘোষণা করে হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে মুন্সিগঞ্জ লাখে ১০৯ জনের ওপরে এবং সদরে লাখে ১৬০ জন আক্রান্ত থাকলেও শুধু মাত্র মাঠপাড়া নামে একটি মহল্লা ছাড়া রেডজোন ঘোষণা হয়নি অন্য কোন অঞ্চলে।