৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রবিবার | দুপুর ১:১৬
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
মুন্সিগঞ্জে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ট্রেইনারকে চাকরিচ্যুত ও মাদ্রাসা বন্ধের দাবিতে স্মারকলিপি
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

ইসলামিক ফাউন্ডেশন মুন্সিগঞ্জের মাষ্টার ট্রেইনার মুফতি সরওয়ার হোসাইনকে চাকরিচ্যুত ও তার পরিচালিত সুফিয়া নাহার মহিলা মাদ্রাসা বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন ‘মুন্সিগঞ্জের বৈষম্য বিরোধী ছাত্রজনতা ও ইমাম উলামাগণ’।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে নিজ কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপনের কাছে ওই স্মারকলিপি দেয়া হয়। এর আগে গতকাল একই দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয় সদর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন মডেল মসজিদের সামনে।

স্মারকলিপিতে অভিযোগ করে বলা হয়- মুফতি সরওয়ার গত ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগ আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন মুন্সিগঞ্জকে ইমাম ও জনগণের উপর জুলুম, শোষণ ও অন্যায়ের একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ দিয়েছেন। জেলায় মোট ৮২০জন ইমাম গণশিক্ষার সাথে যুক্ত। মুফতি সরওয়ার আলেম-ওলামা ও ইমাম সাহেবদেরকে গণশিক্ষার কেন্দ্র দেওয়ার জন্য প্রতি কেন্দ্র বাবদ সর্বনিম্ন দশ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন। পরবর্তীতে কেন্দ্র নবায়নের নাম করে ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। প্রতি রমজানের ঈদে ইমামদের যাকাত কালেকশনের জন্য বাধ্য করে ১ হাজার থেকে ১০ হাজার বা তার চেয়েও অধিক টাকা কালেকশন করে দিতে বাধ্য করেছেন। কোরবানির ঈদেও পশুর চামড়ার মূল্য বাবদ ইমামগণ থেকে সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা বাধ্যতামূলক নেওয়া হয়েছে। এছাড়া জেলায় নির্মিত মডেল মসজিদগুলোতে ইমাম নিয়োগের নামে আড়াই লক্ষ টাকা ও মুয়াজ্জিন নিয়োগের নামে এক লক্ষ টাকা করে অনেকের কাছ থেকে নিয়ে এখনো সেই টাকা ফেরত দেননি। মুন্সিগঞ্জ কাটাখালি বাজারে ‘সুফিয়া নাহার’ নামে তার একটি মহিলা মাদরাসা রয়েছে। উক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য ইমাম সাহেবদের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক টাকা কালেকশন করানো হয় এবং সেই টাকা নিজে আত্মসাৎ করেন। মাদরাসার বার্ষিক খতমে বোখারীর অনুষ্ঠানের জন্য প্রতি ইমামকে সর্বনিম্ন এক থেকে ৩ হাজার টাকা বাধ্যতামূলক প্রদান করতে হয়। এসকল কাজ দলীয় ক্ষমতা ও হুমকির মাধ্যমে তিনি বাস্তবায়ন করেন। কেউ কিছু বললে কেন্দ্র কেটে দেওয়ার হুমকি এবং পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হয়। কেয়ারটেকার নিয়োগের ক্ষেত্রেও ঘুষ নিয়ে সার্কুলার বহির্ভুত লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যার লিখিত অভিযোগ জেলা প্রশাসক বরাবর দিলেও সে তা লোক মারফত সরিয়ে ফেলে।

সেখানে আরও বলা হয়- মুন্সিগঞ্জ কাটাখালি বাজারে সুফিয়া নাহার মহিলা মাদরাসা নামে তার যে মহিলা মাদরাসাটি রয়েছে, যা ইতিপূর্বে মুন্সিগঞ্জ সদর বোগদাদিয়া প্লাজার ৩য় ফ্লোর ভাড়া নিয়ে ‘লাল মিয়া আয়াতুল নেসা মহিলা মাদরাসা’ নামে পরিচালনা করতেন এই সরোয়ার। তিনি এই প্রতিষ্ঠানে অনেক ছাত্রীর সাথে অনৈতিক কার্যক্রম তথা জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছেন এবং অনেক অভিভাবককে অনৈতিক কাজের প্রস্তাব করেছেন। কোন মেয়ে বা অভিভাবক যেন এ বিষয়ে মুখ খুলতে সাহস না পায়, সে জন্য তাদেরকে দলীয় গুন্ডা ও পুলিশ দিয়ে হুমকি দেওয়া হতো। এভাবে সে ধর্ষণের মাধ্যমে অনেক মেয়ের জীবন ধ্বংস করেছে। যার অভিযোগ কিংবা মামলা করাও অভিভাবকদের পক্ষে সম্ভব হয়নি, প্রত্যেক অভিভাবক এ বিষয়ে মানসিকভাবে কষ্টে ভুগছেন যদি এই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা না হয় তাহলে সে আরও অনেক মেয়ের জীবন ধ্বংস করবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। সুতরাং তাকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চাকুরি হতে স্থায়ীভাবে অপসারণ এবং তার মাদরাসা বন্ধ করার জন্য সকল প্রকার পদক্ষেপ নিতে জোড় আবেদন করছি। যদি দ্রুত অপসারণ করা না হয়, তবে ছাত্র-জনতা তার বিরুদ্ধে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হেড অফিস ঘেরাও কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন মুন্সিগঞ্জের মাষ্টার ট্রেইনার মুফতি সরওয়ার হোসাইন বলেন, ‘যেসকল অভিযোগ দেয়া হয়েছে সেগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি নিয়োগ কমিটির সদস্যই না, কাউকে নিয়োগ দিবো বলেছি বা টাকা-পয়সা নিয়েছি এমনটা অবাস্তব ও ভিত্তিহীন।’

জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগ ও মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মাদ্রাসা দখলই এই চক্রটির মূল উদ্দেশ্য। আমি কোন নারীকে ধর্ষণ করেছি এরকম প্রমাণ বা ভুক্তভোগী যদি কেউ থাকে তাকে উপস্থাপন করা হোক। আমাকে হেনস্তা ও মানহানির উদ্দেশ্যে অভিযোগ দিলেই তো হবে না। প্রমাণও থাকতে হবে।’

স্মারকলিপির বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন বলেন, ‘অভিযোগগুলোর বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এই বিভাগের সর্বশেষ
ফেইসবুকে আমরা
ইউটিউবে আমরা
error: দুঃখিত!