মুন্সিগঞ্জ, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, শ্রীনগর প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা জুড়ে চলছে মৌসুমী আলু চাষাবাদের বিশাল কর্মযজ্ঞ। বিভিন্ন কাজকর্মে মাঠে কাজ করছেন হাজার হাজার নারী-পুরুষ কৃষি শ্রমিক।
বির্স্তীণ জমিতে বীজ বপনের শুরু থেকেই জমিতে আলু উত্তোলণ পর্যন্ত শ্রম বিক্রি করে অর্থ কামাই করছেন তারা। আলু জমির সার্বিক পরিচর্যার কাজেও পুরুষ শ্রমিক থেকে নারী শ্রমিকদের কদর বেশী।
দৈনিক একজন নারী শ্রমিক এ কাজের বিনিময়ে মজুরী পাচ্ছেন ৪০০ টাকা। সেখানে একজন পুরুষ শ্রমিককে কৃষকের গুনতে হচ্ছে ৬০০ টাকা। তাই আলু চাষে কিছুটা খরচ কমাতে স্থানীয় কৃষকদের কাছে নারী শ্রমিদের কদর বাড়ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বীরতারা, আটপাড়া, তন্তর ও কুকুটিয়া এলাকার বিভিন্ন জমিতে কনকনে শীত উপেক্ষা করে দলবদ্ধভাবে নারীরা আলু ক্ষেতে কাজ করছেন। জমিতে আগাছা ও জঙ্গল পরিস্কারের কাজ করছেন তারা। দিনের কয়েক ঘন্টা মাঠে কাজ করে আয়ের পথ বের করছেন।
এ সময় চন্দ্র রানী, চঞ্চলা মন্ডল, শোভা দাস, সূর্য বানুসহ অনেকেই বলেন, ৫ থেকে ১০ জন নারী মিলে একটি টিম গঠন করেন একাজে। আলু জমিতে বিভিন্ন আগাছা-জঙ্গল পরিস্কার করেন। জমির মালিক দুপুরের শুকনো খাবার ও মজুরী হিসেবে ৪০০ টাকা দেন। আলু জমির পাশাপাশি ধানের জমিতে নিড়ির কাজও করেন।
তারা জানান, পার্শবর্তী লোৗহজং উপজেলার নওপাড়া বাজার এলাকায় বিভিন্ন রাস্তার পাশে খুপড়ি ঘরে স্বামী, সন্তান নিয়ে বসবাস করেন।
স্থানীয় আলু চাষীরা জানান, এ কাজের জন্য দৈনিক একজন পুরুষ শ্রমিককে ৩ বেলা খাবার দিয়ে ৬০০ টাকা মজুরী দিতে হয়। আলু ক্ষেতের পরিচর্যা কাজে নারী শ্রমিকরা উত্তম। এই অঞ্চলের মৌসুমী কৃষি কর্মযজ্ঞে পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও বিশেষ ভুমিকা রাখছেন।
জানা যায়, আলু চাষের ভরা মৌসুমে হঠাৎ অসময়ের বৃষ্টির পানিতে জেলাব্যাপী আলু বীজ বপনকৃত প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমি পানিতে ডুবে বিনষ্ট হয়।
শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, অসময়ের টানা বৃষ্টিতে এর মধ্যে শ্রীনগরে ৬০০ হেক্টর আলু জমি নষ্ট হয়। এতে ফসলী জমির পানি নিস্কাশনের জন্য বিড়ম্বনায় পড়েন এখানকার শতশত কৃষক। বাধ্য হয়েই আলু মৌসুমের মধ্যকালীন সময়ে এসে শ্রীনগরে প্রায় ২ হাজার ২০০ হেক্টর আলু জমিতে পুনরায় বীজ বপন করেন কৃষক। আলুর আশানুরূপ ফলন ও ন্যার্য দাম পেলে কৃষকরা লোকসানের কিছুটা পুষিয়ে উঠতে পারবে।
অপরদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে ভাল ফলনের লক্ষ্যে কীটনাশক স্প্রে, আগাছা পরিস্কারসহ আলু জমির সার্বিক যত্ন করছেন। এরই মধ্যে গত শুক্রবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার ফলে আলু চাষীদের মনে কিছুটা সস্তি এসেছে। এতে কৃষক জমিতে পানি দিতে অতিরিক্ত খরচের হাত থেকে রেহাই পায়। এ বছর সব খরচ বাদে ক্ষেতেই প্রতিমণ আলু উৎপাদণে কৃষকের খরচ ধরা হচ্ছে প্রায় ৮০০ টাকা। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আগাম আলু বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৫ টাকা। হিমাগারের পুরনো খাবার আলু বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ কেজিতে ৫ টাকা করে।