১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | সকাল ৬:৪৯
মুন্সিগঞ্জে আধিপত্য নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, বাড়ি-ঘর ভাঙচুর, আহত ৭
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ২ জানুয়ারি, ২০২১, সিরাজদিখান প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় বেশ কিছু বাড়ি-ঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

সংঘর্ষে দুই পক্ষের মধ্যে টেটাবিদ্ধ সহ ৭ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত কয়েকজন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। কয়েকজন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। এ ঘটনায় দুই পক্ষ সিরাজদিখান থানায় মামলা করেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা ১১ টার দিকে। এলাকায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পুলিশের ভূমিকা নিরব!

সরেজমিনে জানা যায়, নবধারা হাউজিং ও স্টার প্লাস হাউজিং প্রকল্পের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। এছাড়া দুই পক্ষ একই এলাকার হওয়ায় আধিপত্য বিস্তারের চেস্টা করছে। এসব কারণে উভয় পক্ষের মধ্যে মাঝে মাঝে দেশিয় অস্ত্র টেটা, রামদা, লাঠি নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, মারামারির ঘটনা ঘটেছে।

এলাকাবাসী অনেকে জানান, নবধারা হাউজিংয়ের চেয়ারম্যান সাজাহান (৩৮) ক্ষমতা দেখানোর জন্য টাকা পয়সা খরচ করে বিভিন্ন এলাকার লোকজন নিয়ে প্রভাব বিস্তারের করে। সামনে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি ও তার রয়েছে। সে বালুচর ইউনিয়নের ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে প্রভাব দেখায়। আবার অনেকে জানান পিয়ার উদ্দিন মেম্বার (৪৫) ও স্টার প্লাস হাউজিং এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলীর সাথে সাজাহানের দ্বন্দ্ব রয়েছে। সেজন্য তাদের পক্ষের লোকজনের বাড়িঘর সাজাহানের লোকাজন ভাঙচুর করেছে। কিছু হলেই সাজাহান পিস্তল নিয়ে ভয় দেখায়।

নবধারার পক্ষের লোকজন বৃহস্পতিবার আল-আমিনের বাড়ি ও অফিস ভাঙচুর করে, মো.আলীর বাড়ি, বদু উদ্দিনের বাড়ি ও এলাকার ২ টি দোকানসহ ৫/৬ টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট হয় বলে অনেকে জানান।

বদুউদ্দিন মাদবর (৭৮) জানান, সেদিন নাজিরা বাজার এলাকায় সাজাহানের লোকজনের সাথে ঝগড়া হয়। তার সূত্র ধরে এলাকায় স্টার প্লাস হাউজিং এর সাথে সম্পর্কদের বাড়ি ঘড়ে হামলা করে প্রায় ৫০/৬০ জন। সাথে আমাদের বাড়ির দড়জা, জানালার থাই গ্লাস, মোটর সাইকেল ভাঙচুর ও আলমারি থেকে ৫ ভরি স্বর্ণসহ মুল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায় সাজাহানের লোকজন।

আল আমিনের স্ত্রী জানায় তাদের বাড়ির সামনে সমিতির অফিস ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। টেবিলের ড্রয়ারে থাকা সমিতির টাকা গুলো লুট করে নিয়ে যায় সাজহান ও তার লোকজন। মহিলাদের চুলে ধরে মারধর করে। কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে আছে। সাজাহানের লোকজন পুলিশের সাথে সখ্যতা থাকায়, তারা বলে পুলিশতো আমাদের কিছু করবে না।

মো. আলীর মা জানান, বৃহস্পতিবার সামনের বাজারে কারা ঝগড়া করেছে জানি না, আমার ছেলে মো. আলী ঢাকায় থাকে। আমার বাড়িতে এসে নবধারার লোকজন ভাঙচুর করে ও একটি মোটর সাইকেল ও সিএনজি ভেঙ্গে দেয়। আমার ছেলেকে খোঁজে তাকে জানে মেরে ফেলবে। এ সময় কয়েকজন মহিলাকে মারধর করে। একজনের হাত ভেঙে দেয়, একজনের মাথা ফাটিয়ে দেয়। আরেকজনের পায়ে গুরুতর আঘাত করে তারা হাসপাতালে আছে।

এ বিষয়ে সাজাহানের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাজিরা বাজারে গরীব এক লোককে মারধর করেছে মো. আলীর লোকেরা। খবর পেয়ে তার আত্মীয়-স্বজন সেখানে যাওয়ার সময় পিয়ার মেম্বারের বাড়ির সামনে তাদের আটকে দেয় এ নিয়ে দ্বন্দ্বে সৃষ্টি হয়। আমি ছিলাম না যারা ছিলো ওদের সাথে কথা বললে জানতে পারবেন।

এ বিষয়ে নবধারার পক্ষের দুজন জানান, পশ্চিমপাড়া নাজিরা বাজার এলাকায়, মারামারি হইছে, টেটা বিনছে শুনছি, দেখতে যাইতেছিলাম পিয়ার মেম্বারের বাড়ির নামায় রাস্তায় যাওয়ার পর পিয়ার মেম্বার বাধা দেয়। এ ঘটনা শুইন্না পুর্ব পাড়ার লোকজন পিয়ার মেম্বারের বাড়ি ভাঙচুর করে।

অপরজন জানান, মারামারিতে আমাদের একজন রুবেল (১৭) টেটাবিদ্ধ হয় ও হানিফ (১৮) এর মাথায় দায়ের কোপ লাগে, তারা হাসপাতালে আছে। বালুচর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু বক্কর এই ঝামেলা গুলো বাঝায় রাখছে। তার কারণে এই মারামারি শেষ হয়না।

বালুচর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক জানান, আমি ১৯ বছর ধরে চেয়ারম্যান, কোন দিন কোন মারামারি ঝামেলা পছন্দ করি না। নদীর ওপার ঐ এলাকায় সাজাহান প্রভাব বিস্তারের চেস্টা করছে। মানুষের জমি জমা দখল করে ভরাট করে নিচ্ছে। অনেকের জমি ভাড়া নিয়ে দখল করেছে। পিয়ার মেম্বার যুবলীগের ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক তাকে বাড়িতে দুই দিন অবরুদ্ধ করে রেখেছিলো। বৃহস্পতিবার সাজাহান ও তার লোকজন পিয়ার মেম্বারের বাড়িসহ বেশ ক’টি বাড়ি ভাঙচুর করেছে। নবধারার এই সাজাহান কেরাণিগঞ্জের কিছু, চর পানিয়া, বাসাইল, ও বালুচরের শতাধিক ছেলেকে পালে। নেশা খাওয়ায় আর খরচ চালায়। সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের চেস্টা করছে। পুলিশকে টাকা দিয়া ভালো মানুষকে মামলায় জড়ায়। এ বিষয়ে এর আগে এসপি সাহেবের সাথে কথা বলেছি। এই বালুচরের ঘটনার কারণে এর আগে পরপর দুই ওসি বদলী হইছে। প্রসাশন যদি ওরে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে আমি কি করবো।

সিরাজদিখান থানা ওসি জালাল উদ্দিনকে ফোনে বারবার চেস্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এ বিষয়ে সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (সিরাজদিখান সার্কেল) রাজিবুল ইসলাম বলেন, দুই পক্ষের দুইটা মামলা রেকর্ড হয়েছে। বার বার এ ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের ব্লাড তো আমরা বদলাতে পারবো না। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।

error: দুঃখিত!