২৪শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শনিবার | সন্ধ্যা ৭:৩৩
মুন্সিগঞ্জে অর্ধ কোটি টাকার তরমুজের হাট
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ৫ এপ্রিল, ২০২২, আরাফাত রায়হান সাকিব (আমার বিক্রমপুর)

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হাজার হাজার তরমুজের পসরা বসেছে মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর ফলের হাটে। ক্রেতা বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে বেঁচাকেনা জমজমাট। প্রতিদিন এই হাটে বিক্রি হয় প্রায় অর্ধ কোটি টাকার তরমুজ।

হাটের ৯টি আড়ৎয়ে বর্তমানে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ হাজার তরমুজ। তবে রমজানকে কেন্দ্র করে যেন এখন চৈত্রের উত্তাপ পরছে তরমুজের দামে। কৃষক পর্যায়ে ভালো দাম না পেলেও কয়েকদিনের ব্যবধানে হাটে প্রতি পিস তরমুজের দাম বেড়েছে ৫০-৭০টাকা পর্যন্ত। এতে বেপারী, আড়ৎদার লাভবান হলেও বিপাকে খুচরা ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ট্রলার, ট্রাক দিয়ে হাটের আড়ৎয়ে আসছে বারি, ব্লাক জাম্বু, গ্রীন ডায়মন্ড, মার্ভেলাস সহ নানা জাতের তরমুজ। চলছে ধুম বেঁচাকেনা। ওজনে ৩ থেকে ১৪ কেজির একেকটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে সাড়ে ৪শ টাকা দামে। এদিকে কৃষকপর্যায়ে দাম না পেলেও বাজারে ক্রমাগত বেড়েইে চলেছে মৌসুমি এই ফলের দাম।

মুক্তারপুর আড়ৎদার ও বেপারীরা সূত্রে জানা যায়, গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে প্রতি পিস তরমুজে বেড়েছে ৫০-৭০টাকা। আড়ৎদার-বেপারীরা বলেছে, জমিতে উৎপাদন কম আর পরিবহন খরচ বৃদ্ধির কথা।

আর খুচরা ব্যবসায়ীর বলছেন, পাইকারি বেশি দামে কেনায় বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে। দাম বৃদ্ধিতে কৃষক-বেপারী ও আড়ৎদারদের মধ্যে স্বস্তি দেখা গেলেও খুচরা বিক্রেতা ও ভোক্তারা পরছেন বিপাকে।

মোঃ আরিফ নামের আড়ৎয়ের বিক্রেতা জানান, গতসপ্তাহে ৪ কেজি ওজনের প্রতি পিস তরমুজের দাম ছিলো ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। এ সপ্তাহে হইছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। ৮-৯ কেজি ওজনের ১শ তরমুজ ছিলো ২৫ হাজার টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫ হাজার টাকা, ১১ কেজির গুলো ছিলো ৩৫-৩৮ হাজার টাকা শ, এখন তা ৪৫ হাজার টাকা। মানুষের চাহিদা বেশি তাই দামও বেশি।

পটুয়াখালী থেকে আসা এক বেপারী মোঃ নবাব আলী জানান, ১০ হাজার তরমুজ নিয়ে আসছি। হাজার টাকার শুধু ট্রলার ভাড়া, প্রতিটি তরমুজ নামাইতে আরও ৫ টাকা লাগে। এবার কৃষকদের উৎপাদন কম হয়েছে এজন্য তাদের কাছ থেকেও বেশি দামে কিনতে হয়েছে আর আর পরিবহন ভাড়ার সবকিছু বেশি এ জন্য বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এর আগে আরো দুই ট্রলার তরমুজ আনছিলাম দাম না পেয়ে আমার চার লাখ টাকার লোকসান। এখন একটু বাজার ভালো।

হাটে আসা কৃষক রেজাউল জানান, ৪ হাজার গাছের মধ্যে ২ হাজার গাছে তরমুজ হইছে। প্রথমে যারা বিক্রি করে তাদের সব লোকসান। শুনলাম দাম বাড়ছে তাই নিয়া আসলাম। যদি ভালো দাম পাই।

মোঃ হাসান নামের আরেক বেপারী জানান, তরমুজ চাষে অনেক খরচ, প্রতি একরে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হইছে। এবছর ফলন কম। দাম বৃদ্ধিতে এখন আশায় আছি দাম কিছুটা পাবো।

পটুয়াখালি এজেন্সি আড়ৎয়ের সাইদুল ইসলাম জানান, আমাদের এখানে প্রতি আড়ৎয়ে ৫-৭ হাজার তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম। বেশি চাহিদা থাকায় দাম বেশি উঠছে। কৃষকরা খুশি, তবে পাইকার খুচঁরা ব্যবসায়ীরা খুশিনা।

খুচরা বিক্রেতা জয়নাল জানান, আমাদের পাইকারি কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। তাই খুচরা বাজারে বিক্রি হয় বেশি। ৫শ টাকা দামের তরমুজ, এই তরমুজ তো নিম্ন আয়ের মানুষ খেতে পারবে না। এগুলো বড়লোকের জন্য, যারা রাজনীতি করে তারা খেতে পারবো। একজন রিকশাচালক সারা দিনে আয় করে ৫শ টাকা, তারা এই তরমুজ কিভাবে খাবে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক আসিফ আল আজাদ জানান, ইতিমধ্যে মুক্তারপুরে তরমুজের বাজার পরিদর্শন করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অযৌক্তিক মুনাফা অর্জন নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। তরমুজ সহ অন্যান্য ফলের মূল্য তালিকা প্রদর্শন ও কোনভাবে কেজি দরে তরমুজ না বিক্রি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি নিয়ম অমান্য করে তাহলে জরিমানা করা হবে। বারবার নিয়মভঙ্গের প্রমাণ পেলে তার প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়া হবে।

এদিকে কয়েকজন আড়ৎদাররা জানান, পটুয়াখালি, ভোলা, বরিশাল সহ প্রায় ৪-৫ টি জেলায় উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি হয় মুক্তারপুর হাটে। বিক্রি মৌসুমে প্রতিদিন ক্রয়বিক্রয় ছাড়ায় অর্ধকোটি টাকা। এ হাট থেকে পাইকারী তরমুজ নিয়ে স্থানীয় বাজার সহ নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, নরসিংদী ও বিভিন্ন জেলার বাজারে বিক্রি করেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

error: দুঃখিত!