মুন্সিগঞ্জের মাঠজুড়ে এখন শুধুই শীতের সবজি। সবজি চাষে লাভ বেশি। তাই অন্যান্য ফসল আবাদের চেয়ে মুন্সিগঞ্জ অঞ্চলের কৃষকরা ঝুঁকছেন এই চাষে।
স্থানীয় মানুষের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন এই সবজি পাঠানো হচ্ছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য জেলায়।
সদর উপজেলার ভট্টাচার্য্যের-বাগ গ্রামের চাষি কাশেম ঢালী বলেন, এবার ৫০ হাজার টাকায় ২৩ শতক জমি বন্ধক নিয়ে তিনি বিভিন্ন চাষাবাদ করেন। তবে চলতি মৌসুমে ওই জমিতে তিনি হাজার দশেক টাকা খরচ করে সবজি চাষ করেছেন।
বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে তিনি কমপক্ষে ১৫ মণ সবজি তুলে হাটে বিক্রি করছেন। বৈরী আবহাওয়া কিংবা অন্য কোনো দুর্যোগ না হলে আগামী এপ্রিল মাস পর্যন্ত একটানা ফলন পাবেন। একই গ্রামের সাইফুল, ফারুক, লক্ষ্মণ, শরিফুলসহ অর্ধশতাধিক কৃষক চাষ করেছেন ফুলকপি।
তাদের প্রত্যেকের কমপক্ষে এক লাখ টাকা লাভ হবে।
জেলার কৃষকরা মৌসুমে দু’বার সবজির আবাদ করে থাকেন। চলতি মৌসুমে ১৪ হাজার ৪১৩ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৩ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। গত বছর এ সময়ে সবজি আবাদ হয়েছিল ১৪ হাজার ৩৫০ হেক্টর, যা থেকে সবজি উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ৯০৩ মেট্রিক টন। এবার উৎপাদন হবে দুই লাখ ৭৯ হাজার ৫৩৮ মেট্রিক টন। এসব সবজি ক্ষেত থেকে উঠে যাওয়ার পর কৃষকরা ফের সবজির আবাদ শুরু করবেন, যা থেকে দুই মৌসুমে হাজার কোটি টাকার সবজি উৎপাদিত হবে।
মুন্সিগঞ্জের ৬টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজির আবাদ হয় সদর ও টঙ্গীবাড়ীতে। কৃষকরা উন্নত জাতের বীজ ব্যবহার করে সবজি আবাদ করে আসছেন। ফলনও পাচ্ছেন অনেক বেশি।
তারা শীতকালীন সবজির মধ্যে টমেটো, বাঁধাকপি, মুলা, শিম, বেগুন, বিভিন্ন প্রকারের শাক, ওল, পটোলসহ ৩৫ ধরনের সবজির আবাদ করে থাকেন। এর মধ্যে চলতি মৌসুমে শিম আবাদ হয়েছে এক হাজার ৫৭৯ হেক্টর, টমেটো ৭০ হেক্টর, বাঁধাকপি ৩২ হেক্টর ও মুলা ২২ হেক্টর জমিতে। বাকি জমিতে অন্যান্য সবজির আবাদ করা হচ্ছে।
সদর উপজেলার শাখারীবাজার এলাকায় বিঘা বিঘা জমিতে কৃষকরা সবজির আবাদ করেছেন। মালিরপাথর গ্রামের চন্দন জানান, এবার তিনি দুই বিঘা জমিতে বাঁধাকপি ও ফুলকপি আবাদ করেছিলেন। তার উৎপাদিত সবজি ইতিমধ্যে বাজারে উঠে গেছে।
শাহ অালম জানান, তিনি ১৪ কাঠা জমিতে বাঁধাকপির আবাদ করেছেন। এতে তার খরচ পড়েছে ১০ হাজার টাকা।
সদরের শহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি ৭ বিঘা জমিতে বিভিন্ন সবজির আবাদ করেছেন। শিগগিরই বাজারে তার ক্ষেতের সবজি পাওয়া যাবে।
প্রতিবছর এখানে দুই মৌসুমে ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হচ্ছে। যা ২০ টাকা কেজি হিসেবে গড়ে ধরলে শুধু মুন্সিগঞ্জে প্রতিবছর এক হাজার কোটি টাকার সবজি উৎপাদিত হচ্ছে।
গত বছর সবজি উৎপাদিত হয়েছিল তিন লাখ ২১ হাজার ৯০৩ টন। এসব সবজি স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে।