মুন্সিগঞ্জ, ৪ মার্চ, ২০২২, আপন সরদার (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার হাসাইল বানারী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বেশ কয়েকটি ঘর ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকটি ঘরে মানুষ নেই। সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে গোয়ালঘর হিসেবে।
জানা যায়, ২০১১ সালের জুলাই মাসে শুরু হয় টংগিবাড়ী উপজেলার হাসাইল বানারী আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণকাজ। ২০ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি সাভার সেনানিবাস ওই স্থানে প্রথম পর্যায়ে ৩৩টি ব্যারাক নির্মাণ করে, যা ১৬৫টি পরিবারে বসবাসের জন্য ওই ৩৩টি ব্যারাকে ৫টি করে নির্মিত কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে একই সংস্থা একই স্থানে ২০১২ সালে আরও ২১টি ব্যারাক ১০৫টি পরিবারের জন্য নির্মাণ করে। পরে ২০১২ সালের ৭ আগস্ট ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পটি বসবাসের জন্য হস্তান্তর করা হয়। ওই প্রকল্পে মোট ২৭০টি পরিবারকে বসবাসের জন্য ঘর বরাদ্দ দেওয়া হলেও বর্তমানে ৮৩টি পরিবার ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করছে বলে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীরা জানান।
জানা যায়, ওই প্রকল্পের ২৭০টি ঘরের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ৮৩টি ঘরে বসবাস করছে মানুষ। চালের টিন ফুটো হয়ে পড়ছে পানি, বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটের অভাবও রয়েছে এখানে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিকাংশ ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। বেশ কিছু ঘর খোলা থাকলেও সেখানে গরু লালনপালন করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ পাওয়া অনেকেই এখন আর এই স্থানে বসবাস করছেন না। দিন দিন আরও কমে যাচ্ছে বসবাসকারীর সংখ্যা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী মিলন হালদার অভিযোগ করেন, আমাদের এখানে ২৭০টি পরিবারের জন্য ১০ বছর আগে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু বরাদ্দ দেওয়ার পর থেকেই টিন লোহার অ্যাঙ্গেলের সঙ্গে জয়েন্ট করার জন্য যে ফুটো করা হয়েছিল, তা দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে।
বাসিন্দা জোসনা বেগম বলেন, আমাদের ঘর দিয়ে পানি পড়ে। বাথরুম নাই, কল নাই। আমাদের এখন অনেক কষ্ট। আমরা অনেক কষ্ট করে বসবাস করছি। এখানে স্কুলও নাই। অনেক দূরে বাচ্চাদের লেখাপড়া শিখতে পাঠাতে হয়। তাদেরও অনেক কষ্ট হয়।
আরেক বাসিন্দা আনসার সরদার বলেন, ঘর দিয়ে পানি পরে। আমার চোখ নাই আমি অন্ধ কাজ করতে পারি না। আমি বয়স্ক ভাতাও পাই না। বড় অসহায়ভাবে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করতেছি।
ফুলবানু বলেন, ঘর দিয়ে পানি পড়ে। ঘর ফুটো হয়ে গেছে। আমরা এখন আলগা টিন লাগাই লইছি মেয়ের বাড়ি হতে এনে। তারপরও ঘরে পানি পড়ে। ভিজা জায়গায় থাকি।
টংগিবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সাজেদা সরকার বলেন, যে সময় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়, সে সময় আমি এখানে ছিলাম না। এ ব্যাপারে আমি অবগত নই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা তানজিন অন্তরা বলেন, সরেজমিনে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়েছিলাম। গিয়ে আমরা দেখেছি ওই স্থানে ৮৬টি পরিবার বসবাস করছে। ২৭০টি পরিবার বসবাস করার কথা ছিল। আমরা জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কেন আশ্রয়ণ প্রকল্পে বরাদ্দপ্রাপ্তরা বসবাস করছেন না, সেটা নির্ণয় করার চেষ্টা করেছি। পরে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। শিগগিরই বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।
মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজি নাহিদ রসুল বলেন, ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের এত খারাপ অবস্থা, বিষয়টি আমাকে কেউ অবহিত করেনি। এ বিষয়ে দ্রুত খোঁজ নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।