মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ঠেকাতে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন।
শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য চত্বরে বিজয় নিশানের ব্যানারে মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
সংগঠনটির সভাপতি কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বাম ছাত্র সংগঠনের নেতারা সংহতি জানান।
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দী বলেন, “স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।
“এই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি শুরু হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের হত্যার পর থেকে শুরু করে।”
ছাত্র মৈত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি মাসুদ মাজহার বলেন, “কিছু দিন আগে গয়েশ্বর নামে বিএনপির এক নেতা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবীরা নির্বোধের মতো মরে গেছে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ধিক্কার জানিয়ে তিনি বলেন, পাঠ্যক্রম থেকে শুরু সব জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতভাবে তুলে ধরছে ‘গয়েশ্বরের মতো কুচক্রী মহল’।
গত ২৫ ডিসেম্বর এক আলোচনা সভায় একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর নিহত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, লেখক, চিকিৎসক, শিল্পী ও সাংবাদিকরা ‘নির্বোধের’ মতো মারা যান বলে মন্তব্য করেন গয়েশ্বর।
তিনি বলেন, “তারা নির্বোধের মতো মারা গেল, আমাদের মতো নির্বোধেরা প্রতিদিন শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে ফুল দেয়। না গেলে আবার পাপ হয়।
“উনারা যদি এতো বুদ্ধিমান হন, তাহলে ১৪ তারিখ পর্যন্ত তারা নিজের ঘরে থাকে কী করে, একটু বলেন তো।”
এর আগে ২২ ডিসেম্বর রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, “আজকে বলা হয়, এতো লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে আসলে কত লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নানা বই-কিতাবে নানারকম তথ্য আছে।”
সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিকৃতি রোধে ইউরোপের আদলে ‘হলোকাস্ট ডিনায়াল অ্যাক্ট’ প্রণয়নের দাবি জানান শিক্ষার্থী রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য।
এর আগে মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের বিরুদ্ধে বক্তব্য বন্ধে এবং মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যাকারীদের পক্ষ যারা নেবে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি আইনের খসড়া তৈরির সিদ্ধান্ত এর মধ্যে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক।
ইউরোপে হলোকাস্ট ডিনায়াল ল-এর আওতায় গণহত্যার অস্বীকৃতি শাস্তিযোগ্য অপরাধ, যার আলোকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অবমাননার বিরুদ্ধেও আইনের পরিকল্পনা হচ্ছে বলে জানান বিচারপতি খায়রুল।
বিজয় নিশানের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়ন অভিযোগ করেন, রাজনীবিদরা নিজেদের স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিকৃতি করছে।
শিক্ষার্থী আবু সাঈদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি রোধে আইনের পাশাপাশি এই কুচক্রী মহলে বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিরোধ আন্দোলন করতে হবে। কারণ এই ইতিহাস সংরক্ষণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”