২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | সকাল ১১:০৯
বিশ্ব সঙ্গীত দিবস আজ
খবরটি শেয়ার করুন:

সঙ্গীতকে জনপ্রিয় করার জন্য বরাদ্দ একটি দিন, ২১ জুন, সারা বিশ্বে এখন পরিচিত বিশ্ব সঙ্গীত দিবস হিসেবে।।

বিশ্ব সঙ্গীত দিবস আন্তর্জাতিকভাবে পালনের শুরুটা করে দেয় ফ্রান্স। সেখানকার একটি ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত উৎসবের নাম ফেট ডে লা মিউজক। এর বাংলা দাঁড়ায় বিশ্বব্যাপী সঙ্গীতের দিন। বিশেষ এই মিউজিক ফেস্টিভ্যালকে ঘিরে ফ্রান্সে যাপন করা হয় সঙ্গীত বিষয়ক অসংখ্য আয়োজন। ফেস্টিভ্যালে অংশ নেবার জন্যে হাজির হতো বহু দেশের অসংখ্য সঙ্গীতজ্ঞ। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়ার আগেই এই উৎসবের দিনটি বিশ্ব সঙ্গীতের জগতে অম্লান স্বাক্ষর রেখে চলেছে। ১৯৮২ সালেই বিশেষ এই সঙ্গীত উৎসবের দিনটি ‘ওয়াল্ড মিউজিক ডে’ হিসেবে সমৃদ্ধী লাভ করে। এর এক বছর আগে অর্থাৎ ১৯৮১ সালে ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক মন্ত্রী জ্যাক লাঙ এই উৎসবকে একটি আন্তর্জাতিক রূপ দেবার চেষ্টা করেছিলেন। আনুষ্ঠানিক যাত্রার এক বছরের মাথায় ২১ জুনকে বিশ্ব সঙ্গীত দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।

সঙ্গীতকে বাঁধা দিতে পারে না কোনো কাঁটা তারের বেড়া। ভাল লিরিক আর সুর ছুঁয়ে যায় সংবেদনশীল মানুষের মন। সঙ্গীতের নিজস্বতা আর স্বকীয়তা এতটাই প্রবল যে সেটা কোনো বিশেষ ভাষার কাছেও সীমাবদ্ধ হয়ে থাকেনি। বিদেশের সঙ্গীতজ্ঞ বব ডিলান কিংবা জিম মরিসনের সঙ্গীত যেমন এদেশের মানুষের মন ছুঁয়েছে, তেমনি আমাদের লালনের গানও পৌঁছে গেছে বিশ্বের দরবারে।

বিশ্ব সঙ্গীত দিবসের আনন্দ আর উচ্ছ্বাস ছুঁয়ে চলে বিশ্বের একশ’রও বেশি দেশের পাঁচ শতাধিক শহর-নগর। কোটি কোটি মানুষ সঙ্গীতকে ভালবেসে যাপন করে একটি বিশেষ দিবস। এদিন বিশ্বজুড়ে আয়োজন করা হয় গানের আসর, শিল্পী সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, কর্মশালা ও নানামুখী সঙ্গীত বিষয়ক অনুষ্ঠানের। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষে আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমিতে ‘কপিরাইট ও শিল্পীর অধিকার’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।

সংগঠনের সভাপতি তপন মাহমুদের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনজুরুর রহমান। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী, সুরকার শেখ সাদী খান, শিল্পী রফিকুল আলম, গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, ফেরদৌস হোসেন ভূঁঞা প্রমুখ। কপিরাইট সম্পর্কিত আইনগত ব্যাখ্যা দেবেন ব্যারিস্টার হামিদুজ্জামান।

সময়ের হাত ধরে বিশ্ব সঙ্গীতের জগতে বাংলা গান এক বিশেষ স্থান করে নিতে পেরেছে। বিশেষ করে বাংলা সঙ্গীতের মৌলিক ধারাগুলো পৃথিবীর নানা প্রান্তে সমাদৃত হয়ে চর্চিত হচ্ছে। হাজার বছরের পুরনো বাংলা সঙ্গীত আজ স্থানীয় চর্চার গন্ডি পার হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সোচ্চার হয়ে পথ চলছে।

বাংলা লোকসংস্কৃতির সবচেয়ে সমৃদ্ধ অংশ হিসেবে বংলা সঙ্গীত পার হয়েছে হাজারো বছর। বাংলা সঙ্গীত আবহমান কাল থেকেই ব্যাপক বিস্তৃত অঞ্চলে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সঙ্গীতের সুর ও তাল, বাদ্যযন্ত্রের প্রয়োগ, সঙ্গীতের সার্বজনিনতা ও আধ্যাত্মবাদসহ আরো নানামুখী সঙ্গীত সংক্রান্ত বিষয় মানুষের কাছে প্রবল আকর্ষণীয় হয়েই বিচরণ করেছে। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় শাস্ত্র ও ধর্মীয় সঙ্গীতকে আশ্রয় করে বাংলা সঙ্গীত আজ আধুনিকতার দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পেরেছে ভবিষ্যতের উঠানে।

প্রাচীন বাংলা সঙ্গীতকে বলা হয় সংস্কৃত স্তোত্রসঙ্গীত থেকে প্রভাবিত। সেসময় উৎসরিত বৈষ্ণব ভাবাশ্রিত ধর্মসঙ্গীতগুলো আজও টিকে আছে এবং এগুলো এখনো ধর্মানুষ্ঠান এবং মন্দিরগুলাতে ব্যবহার করা হয়। চিরন্তন সুর ও সঙ্গীত সৃষ্টি হলে সেগুলো আবেদন যথার্থ বজায় থাকে এবং এগুলো সহসা হারিয়ে যাবার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।

বাউলগান. রবীন্দ্র বা নজরুলগীতির মতো সমৃদ্ধ সঙ্গীতের আকর বাংলা সঙ্গীতকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলেছে। আধুনিক গানের ব্যাপক চর্চা সেই সঙ্গীতের ধারাকে অব্যাহত রেখেছে।

বিশ্ব সঙ্গীত দিবস সুরময় হয়ে থাক। সুরের মুর্ছনায় আনন্দিত হয়ে উঠুক প্রতিটি হৃদয়। আজ দিন কাটুক গানে।

error: দুঃখিত!