বাসর ঘরেই প্রেমের ইতি ঘটলো কলেজছাত্রী মরিয়মের!
নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের মাষ্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী মরিয়ম খাতুন। তারুণ্যের উদ্দীপনায় মেতে থাকা মরিয়মের স্বপ্ন ছিল ভালোবেসে ঘর বাঁধার। দীর্ঘ প্রেমের পর স্বপ্ন পুরনে বিয়েও হল পছন্দের মানুষ জাহাঙ্গীর আলমের সাথে। বিয়ের দিন মরিয়মের ছিল না নববধূর সাজ। বাসর ঘরেও ছিলনা কোন সাজ সজ্জা। সাদামাঠা ভাবেই বিয়ে সম্পূর্ণ হয়। কিন্তু বাসর ঘরেই যে তাদের প্রেমের ইতি ঘটবে কে জানত? বৃহস্পতিবার দুপুরে নাটোর জজকোর্টে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে সম্পূর্ণ হলেও শুক্রবার সকালে বাসর ঘর থেকে লাশ হয়ে ফিরল নববধূ মরিয়ম।
আর দশজন ছেলে-মেয়ের মতো সুখের স্বপ্নে বিভোর হয়ে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল সহপাঠী হিরা ও জাহাঙ্গীর। প্রথমে বন্ধুত্ব। এরপর ভালবাসা। তারই ধারাবাহিকতায় হিরাদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল জাহাঙ্গীরের। হিরাকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বেড়ানো থেকে শুরু করে নানা সময় তাদের চলাফেরা এলাকাবাসীর নজরে আসে। ঈদের পর বৃহস্পতিবার হিরার সঙ্গে দেখা করতে আসে প্রেমিক জাহাঙ্গীর। এলাকাবাসীর নানা গুঞ্জন ও চাপে অনেকটা জোর করেই হিরার সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয় জাহাঙ্গীরের। দুপুরে আদালতের মাধ্যমে বিয়ে হয়। বিষয়টি জাহাঙ্গীরের পরিবারে জানালেও ওই পরিবারের কেউ না যাওয়ায় হিরাদের বাড়িতে হয় বাসর রাতের আয়োজন।
যেমন স্বপ্ন ছিল হিরা আর জাহাঙ্গীরের তার কোনো আয়োজন নেই। নেই নববধূর সাজ। বরও সাজেনি। তবুও ফুল সজ্জার আয়োজন শেষে হিরা জাহাঙ্গীরকে বাসর ঘরে রেখে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে যায়। কে জানতো বাসর ঘরেই হবে হিরার প্রেমের সমাধি?
বৃহস্পতিবার দুপুরে নাটোর কোর্টে সাদামাটাভাবে বিয়ে হলেও শুক্রবার সকালে বাসর ঘর থেকে লাশ হয়ে ফিরল কলেজছাত্রী নববধু মরিয়ম খাতুন হিরা। এ ঘটনায় পুলিশ ওই নববধুর স্বামী জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করেছে। নিহত মরিয়ম সিংড়া উপজেলার ঢাকঢোর গ্রামের হুমায়ুন আহমেদের মেয়ে এবং নাটোর সরকারি এনএস কলেজের মাষ্টার্সের শেষ বর্ষের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ছাত্রী।
এলাকাবাসী ও হিরার পরিবার জানায়, সিংড়া উপজেলার ঢাকঢোর গ্রামের হুমায়ন আহমেদের মেয়ে মরিয়ম খাতুন হিরার সঙ্গে একই উপজেলার গোয়াল বাতান গ্রামের আকবর আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সম্পর্ক ধরে মাঝে মধ্যেই মরিয়মের বাড়িতে আসা যাওয়া করতেন জাহাঙ্গীর। বৃহস্পতিবার মরিয়মের পরিবার জাহাঙ্গীরের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেয়। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয় নাটোর কোর্টে। এরপর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মরিয়মদের বাড়িতে বৃহস্পতিবার রাত ছিল তাদের দু’জনের বাসর রাত। তবে সকালেই ওই ঘর থেকেই উদ্ধার করা হয় হিরার লাশ। এলাকাবাসী জাহাঙ্গীরকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দিলে হিরার লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়। পরে জাহাঙ্গীরকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
জাহাঙ্গীর জানায়, মরিয়মের সঙ্গে জাহাঙ্গীরের জোরপূর্বক বিয়ে দেয়ার বিষয়ে তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। ভোরে ঘুম থেকে উঠে ঘরের তীরের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো মরিয়মের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে বিষয়টি হিরার পরিবারকে জানান।
হিরার বাবা হুমায়ুন আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, রাতে জাহাঙ্গীর তার মেয়েকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার জন্য লাশ ঝুলিয়ে রাখেন।
তবে জাহাঙ্গীর নববধু হিরাকে হত্যার কথা অস্বীকার করে বলেন, বিয়ে নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায় তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। মরিয়ম কখন গলায় ফাঁস দিয়েছে ঘুমের ঘোরে থাকার কারণে তা বুঝতে পারেননি।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন মন্ডল জানান, ময়না তদন্ত রিপোর্ট পেলে হত্যা না আত্মহত্যা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ঘটনায় হিরার ভাই মাহবুবুর রহমান বাদী হয়ে সিংড়া থানায় একটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।


